বিনিময় বিল চেকের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার|Bill of Exchange

বর্তমান বিশ্বে বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অধিকাশে কয়-বিক্রয় ধারে সম্পন্ন হয়। এসব ধারে ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য দেনা পাওনার নিষ্পত্তিতে বিনিময় বিল বহুলভাবে ব্যবহৃত হস্তান্তরযোগ্য স্বপ্নের দলিল। এ ধরনের দলিলের মাধ্যমে দেনাদার তার পাওলাদারকে অথবা পাওনাদারের নির্দেশে অন্য কাউকে পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এটি একটি আইনসম্মত দলিল। ১৮৮১ সালের যোগ্য দলিল আইনে বলা হয়েছে,

বিনিয়ম বিল হচ্ছে আদেষ্টা কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত দলিল, যার দ্বারা আদেষ্টা কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তার আদেশে অন্য কোনো ব্যক্তিকে বা দলিলের বাহককে প্রদান করার জন্য শর্তহীন আদেশ দেয়।
 

বিনিয়ম বিলের অপরিহার্য দিক| Essential aspects of the bill of exchange


১. বিনিময় বিল পাওনাদার প্রস্তুত করেন। প্রস্তুতকারককে বিনিময় বিলের আদেষ্টা বলা হয়।
২. দেনাদার প্রস্তুতকৃত বিলে স্বীকৃতি প্রদান করেন, তাকে আদিষ্ট বলা হয়।
৩. বিনিময় বিল আইনসম্মত ঋণের দলিল এব
৪. বিনিময় বিল হস্তান্তরযোগ্য।

পরিশেষে বলা যায়, পাওনাদার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত যে দলিলের মাধ্যমে প্রাপককে অথবা প্রাপকের আদেশে অন্য কোনো বাকি চাওয়ামাত্র বা একটি নির্দিষ্ট সময় পরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের শর্তহীন আদেশ প্রদান করে তাকে বিনিময় বিল বলে।
বিনিময় বিল চেক কি

বিনিময় বিলের পক্ষসমূহ| Parties to a bill of exchange


একটি বিনিময় বিলে কমপক্ষে তিনটি পক্ষ সম্পৃক্ত থাকে। বিনিময় বিলের অপরিহার্য তিনটি পক্ষ হচ্ছে— আদেষ্টা, আদিষ্ট এবং প্রাপক। তবে অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিময় বিলে আরও বিভিন্ন পক্ষ সম্পৃক্ত হতে পারে। নিচে বিনিময় বিলের পক্ষসমূহ আলোকপাত করা হলো:

১. আদেষ্টা (Drawer): বিনিময় বিলের আদেষ্টা বা প্রস্তুতকারক হচ্ছেন কোনো পাওনাদার। আদেষ্টা বিনিময় বিলের মাধ্যমে তার প্রাপ্য অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন।

২. আদিষ্ট (Drawee): বিনিময় বিলের আদিষ্ট হচ্ছে দেনাদার।


৩. প্রাপক (Payee): বিনিময় বিলের আদেষ্টা যে ব্যক্তিকে অর্থ প্রদানের জন্য দেনাদারের প্রতি নির্দেশ প্রদান করে তিনিই বিনিময় বিলের প্রাপক। প্রাপক যেকোনো মানুষ বা কৃত্রিম ব্যক্তি হতে পারে। বিনিময় বিলে প্রাপকের নাম উল্লেখ করতে হয়।

৪. অনুমোদন বলে প্রাপক (Endorsec): বিনিময় বিলের প্রাপক অনুমোদনের মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তর করতে পারেন। অনুমোদনের মাধ্যমে যে ব্যক্তিকে বিনিময় বিলের অর্থপ্রাপ্তির অধিকার হস্তান্তর করা হয় তাকে অনুমোদন বলে প্রাপক বলা হয়।

৫. অনুমোদনকারী (Endorser): যে ব্যক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিময় বিলে হস্তান্তর করে তাকে অনুমোদনকারী বলা হয়। প্রাপক বা অনুমোদন বলে প্রাপক অন্য কোনো ব্যক্তিকে অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিময় বিল হস্তান্তর করতে পারে।

৬. ধারক (Holder): ইংরেজি হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন অনুযায়ী যে ব্যক্তি বিনিময় বিলের অর্থ পাওয়ার অধিকারী তাকেই ধারক বলা হয়। কাজেই প্রাপক বা অনুমোদন বলে প্রাপক তারা সবাই বিনিময় বিলের ধারক। কিছু বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের ৮ ধারা অনুসারে ধারক এর ধারণা কিছুটা ভিন্ন। এখানে কোনো ব্যক্তি আইনসম্মত উপায়ে বিনিময় বিলের অর্থপ্রাপ্তির অধিকার পেলে তবেই তাকে উক্ত বিনিময় বিলের ধারক বলা হবে।

৭. যথাকালে ধারক (Holder in due): হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ৯ ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে যথাকালে ধারক বলা হবে যদি তিনি:

i. আইনসম্মতভাবে কোনো বিনিময় বিলের ধারক হন।
ii. মেয়াদপূর্তির পূর্বেই বিনিময় বিলের ধারক হন।
iii. কোনো মূল্যবান প্রতিদানের বিনিময়ে বিলের ধারক হন এবং
iv. বিনিময় বিলের মালিকানায় কোনো ত্রুটি আছে এমন কোনো নোটিশ বা ধারণা না পেয়ে সরল বিশ্বাসে বিলটি গ্রহণ করেন।

বিনিময় বিলের যথাকালে ধারক ঢেকের পরম অধিকার (Absolute title) পায়। অর্থাৎ হস্তান্তরকারীর মালিকানায় কোনো ত্রুটি থাকলেও যথাকালে ধারক চেকের নিরঙ্কুশ অধিকার পান। অর্থাৎ হস্তান্তরকারী চুরি করে বিলটি পেলেও যথাকালে ধারকের অধিকার তার দ্বারা প্রভাবিত হবে না। বিনিময় বিলের পূর্ববর্তী মালিকগণ যথাকালে ধারকের নিকট দায়বন্ধ থাকবে।

৮. প্রয়োজনবোধে মধ্যস্থতাকারী (Refree in need): বিনিময় বিলের আদেষ্টা বা প্রাপক বা অন্য কোনো ধারক কোনো মধ্যতাকারীর নাম যুক্ত করতে পারে । ভবিষ্যতে বিনিময় বিলের অর্থ আদিষ্ট পরিশোধ না করলে বা বিনিময় বিল প্রত্যাখ্যাত হলে অথবা অন্য যেকোনো বিবাদ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী সহায়তা করে।

বিনিময় বিলের বৈশিষ্ট্য|Features of bill of exchange


বিনিময় বিল আইনানুগভাবে স্বীকৃত হস্তভরযোগ্য দলিল। আইনানুগভাবে এবং প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বিনিময় বিয়ের সতত্ত্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিম্নে বিনিময় বিশ্বের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো:

১. লিখিত (Written): যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিলকে আইন বলবরযোগ্য হতে হলে তা অবশ্যই লিখিত হতে হবে । তি বিলকেও লিখিত হতে হবে।

২. শর্তহীন (Unconditional): বিনিময় বিলের মাধ্যমে আদেষ্টা অনিষ্টের প্রতি প্রাপককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোে শর্তহীন নির্দেশ প্রদান করে। আলেষ্টা বিনিময় বিলের অর্থ পরিশোধের জন্য কোনো শর্ত যুক্ত করতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যতিক্রমও রয়েছে।

৩. স্বাক্ষরিত (Signed): বিনিময় বিল অবশ্যই আনিষ্টের দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে হবে। অন্যবায় এটি আইনসম্মত হবে না।

৪. নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (Specified sum): বিনিময় বিল অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তিনি বি টাকার পরিমাণ কথায় ও অঙ্কে সুস্পষ্টভাবে লিখতে হয়। এক্ষেত্রে কথায় ও অঙ্কে টাকার পরি।

৫. নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থ পরিশোধ (Payment of sum of cheque to a certain person): বিনিময় বিলের অর্থ, প্রাপক অনুমোদন বলে প্রাপককে পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ বিনিময় বিলের অর্থ নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তিকেই পরিশোষ করা হয়। বিনিময় বিলের অর্থ প্রাপ্তির অধিকার কোনো মানুষকেই পেতে হবে এমন নয়। ব্যক্তি কোনো কৃত্রিম বাি (Legal person) হতে পারে।

৬. চাওয়ামাত্র পরিশোধ (Payable or demand): বিভিন্ন বিরে অব চাওয়ামাত্র বা ব্যাংকের নিকট উপস্থাপন মাত্র পরিশোধ্য। তবে বিনিময় বিল নির্দিষ্ট দেয়া সম্পন্নও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিনিময় বিশ্বের অর্ব উক্ত মেয়াদের পূর্বে পরিশোধযোগ্য নয়।

৭. নির্দিষ্ট তারিখ (Dated): বিনিময় বিলে নির্ধারিত স্থানে তারিখ উল্লেখ করতে হয়।

৮. পক্ষসমূহ (Parties): বিনিময় বিলে কমপক্ষে তিনটি পক্ষ থাকে আনেষ্টা (পাওনানার), আনিষ্ট (সেনানার) এবং প্রাপক।

৯. নির্দিষ্ট মুর (Certain currency): বিনিময় বিলের অর্থ শুধুমাত্র বিনিময় নির্দিষ্ট মুদ্রায় পরিশোধ করা হয়।

১০. হস্তযোগ্য (Negotiable): হস্তযোগ্য দলিল আইন অনুসারে বিনিময় বিল হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল। অনুমোদনকনে অর্পণের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায়।

১১. স্ট্যাম্প (Stamp): বিনিময় বিলে স্ট্যাম্প সংযোজন বাধ্যতামূলক। বিনিময় বিলের অর্থের পরিমাণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মূল্যের স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।

পরিশেষে বলা যায়, বিনিময় বিল একটি হস্তম্ভেরযোগ্য ঋণের দলিল। কোনো বিনিময় বিলকে আইনসম্মত ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকতে হবে।

বিনিময় বিলের ব্যবহার|Uses of bill of exchange 


বিনিময় বিল সাধারণত ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদনে ব্যবহার করা হয়। তবে বিনিময় বিল অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য ব্যবহার করা যায়। যেমন

১. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বিনিময় বিল (Internal trade exchange bill): ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ধারে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদন করতে বিনিময় বিল ব্যবহার করা হয় । অর্থাৎ ব্যবসায় ঋণকে প্রমাণযোগ্য ও আইনত বলবৎযোগ্য করার জন্য বিনিময় বিল ব্যবহার করা যায়। এখানে আইনত বলবৎযোগ্য বলতে বোঝায় যে, পরবর্তীকালে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো বিবাদ ঘটলে আদালতের সহায়তায় তা নিষ্পত্তি করার সুযোগ। 

২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিনিময় বিল (International trade exchange bill): আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকের লেনদেন সম্পাদনে বিনিময় বিল ব্যবহার করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যেই বিনিময় বিলের ব্যবহার সর্বাপেক্ষা বেশি।

৩. অর্থায়ন (Financing): বিনিময় বিল ব্যবহার করে এর আদেষ্টা, প্রাপক বা অন্য যেকোনো ধারক অর্থায়ন সুবিধা পেতে পারে। মেয়াদি বিনিময় বিল বাট্টা করে অথবা ফ্যাক্টরিং ও ফোরফেইটিংয়ের মাধ্যমে আগাম অর্থসংস্থান করতে পারে।

৪. আর্থিক সহায়তা প্রদান (Provide financial support): উপযোজন বিনিময় বিলের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে সাময়িক আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url