বাহক চেকের ধারণা | Concept of Bearer Cheque

বাহক চেক কি| What is Bearer Cheque?


যে চেকের টাকা চাহিবামাত্র ব্যাংক এর বাহককে প্রদান করে তাকে বাহক চেক বলে। এই চেক সহজে চেনার উপায় হলো এখানে প্রাপকের নাম লেখার স্থানের সামনে “অথবা বাহককে” শব্দদ্বয় লেখা থাকে। এরূপ শব্দদ্বয়ের পূর্বে প্রাপকের নাম লিখতে হয়। কিন্তু প্রাপকের নাম যাই থাকুক না কেন কাউন্টারে চেক উপস্থাপনকারীকে কোনোরূপ সন্দেহের কারণ লক্ষ করা না গেলে ব্যাংক টাকা দিতে বাধ্য থাকে। যখন প্রাপকের নামের স্থানে নিজ (Self) লেখা থাকে তখন চেকদাতাকে প্রাপক বলে বিবেচনা করা হয়। বাহকের চেক হারিয়ে গেলে যে কেউ তা ভাঙ্গানোর জন্য ব্যাংকে হাজির করতে পারে তাই এরূপ চেক কম নিরাপদ।

তাই এ ধরনের চেকের বাহককে দেখে বা তার কথাবার্তায় ব্যাংকের কোনো সন্দেহ হলে ব্যাংক উক্ত চেকের টাকা পরিশোধ স্থগিত রাখতে পারে। এ জন্য সাধারণভাবে হঠাৎ কোনো বড় পরিমাণ অঙ্কের এরূপ চেক উপস্থাপিত হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকের যথার্থতার বিষয়টি চেকদাতার নিকট থেকে থেকে জেনে নেয়ার চেষ্টা করে। অবশ্য এরূপ চেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বিধানের জন্য সহজেই দাগকাটা যায়। উল্লেখ্য, প্রাপক কোনো প্রতিষ্ঠান হলে এরূপ চেকের অর্থ সংগ্রহে বাহককে অবশ্যই ঐ প্রতিষ্ঠানের সীলমোহর ব্যবহার করে তারপর স্বাক্ষর করতে হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রাপক কোম্পানি হলে অবশ্যই ঐ কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে চেক জমা দিয়ে তার অর্থ সংগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে।

J. C. Woelfel- এর মতে,
যে চেকের অর্থ ব্যাংক যেকোনো বাহককে পরিশোধ করে এবং শুধু অর্পণ দ্বারা হস্তান্তর করা যায়, তাকে বাহক চেক বলে। অর্থাৎ যে চেকের অর্থ যেকোনো বাহককে পরিশোধ করা যায় এবং অনুমোদন ছাড়াই হস্তান্তর করা যায়, তাকে বাহক চেক বলে।
  
বাহক চেকের ধারণা

বাহক চেকের বৈশিষ্ট্য|Features of Bearer Cheque


১. বাহক চেকে প্রাপকের নাম লেখার জন্য নির্দিষ্ট স্থানের শেষে “অথবা বাহককে” শব্দদ্বয় লিখিত থাকে।

২. প্রাপকের নামের জন্য নির্দিষ্ট শূন্যস্থানে প্রাপকের নাম অথবা “নিজ” কথাটি লিখতে হয়। অবশ্য কিছু না লিখলেও চলে।

৩. এ চেকে প্রাপকের নাম লেখা না থাকলেও ব্যাংক এর বাহককে টাকা পরিশোধ করতে পারে।

৪. এ প্রকার চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করার পর আইনানুগ কোনো কারণ না থাকলে ব্যাংক তার টাকা পরিশোধে বাধ্য থাকে।

৫. বাহক চেক শুধুমাত্র হাত বদলের দ্বারাই স্বত্বান্তরিত হয়ে যায়।

৬. বাহক চেকের আদেষ্টা বা প্রাপক বা এর সংশ্লিষ্ট যে কোনো পক্ষই যে কোনো সময় একে দাগকাটা চেকে পরিণত করতে পারে। তবে একবার রেখাঙ্কিত হয়ে গেলে তাকে আবার বাহক চেকে পরিণত করতে হলে আদেষ্টার দস্তখতের প্রয়োজন হয়।

বাহক চেকের সুবিধা|Advantages of Bearer Cheque


১. সহজ ব্যবহার (Easy to use): এরূপ চেক লেখা ও ব্যবহার সহজ । অর্থাৎ যে কেউ ব্যাংকে উপস্থাপন করে এর অর্থ সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। তাই বিনিময়ের সহজ মাধ্যম হিসেবে এ ধরনের চেক সকল সমাজেই অধিক প্রচলিত।

২. সহজ হস্তাত্তর (Easy to negatiate): এ ধরনের চেক শুধুমাত্র অর্পণের দ্বারাই হস্তান্তরযোগ্য। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চেকের পিছনে কোনো পৃষ্ঠাঙ্কন বা অনুমোদন স্বাক্ষর করার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে একই চেক হস্তান্তরের মাধ্যমে একাধিক লেনদেনে সহজেই ব্যবহৃত হতে পারে।

৩. ব্যাংকের সুবিধা (Advantages of bank): এক্ষেত্রে চেকের যথার্থতা দেখেই ব্যাংক এর অর্থ পরিশোধ করতে পারে। প্রাপক বা ধারকের যথার্থতা এক্ষেত্রে তেমন বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ব্যাংকের পক্ষে এরূপ চেকের বিপরীতে লেনদেন অধিক সুবিধাজনক ও নিরাপদ।

৪. রূপান্তরযোগ্যতা (Changability): এ ধরনের চেকের বামপাশে দু'টি আড়াআড়ি রেখা টেনে একে সহজেই দাগকাটা চেকের রূপান্তর করা যায়। এতে চেকের নিরাপত্তা বাড়ে। তাই বড় অঙ্কের লেনদেন এরূপ ঢেক ব্যবহারেও কোনো সমস্যা নেই।

বাহক চেকের অসুবিধা|Disadvantages of Bearer Cheque


১. কম নিরাপদ (Less secured): এ ধরনের চেক কম নিরাপদ। কারণ যে কেউ ব্যাংকে উপস্থাপন করে। এর অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তাই প্রস্তুকৃত চেক কেউ হস্তগত করে বা হারিয়ে যাওয়া চেক কেউ উদ্ধার করে দ্রুত ব্যাংকে উপস্থাপন করে এর অর্থ উঠিয়ে নিলে সেক্ষেত্রে প্রাপক বা ধারকের তেমন কিছু করার থাকে না।

২. বড় অঙ্কের লেনদেনের অনুপযুক্ততা (Less appropriate for big transaction): নিরাপত্তাহীনতার কারণেই বড় পরিমাণ অঙ্কের লেনদেন এরূপ চেকের ব্যবহার কম। ছোট ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ সীমিত আয়ের লোক ছোট অঙ্কের লেনদেনে এরূপ চেক বেশি ব্যবহার করলেও বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনে দাগকাটা চেক বেশি ব্যবহার করে।

পরিশেষে বলা যায়, বাহক চেক সহজে হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় মাধ্যম। বাহক চেকের হস্তান্তরের সুবিধা থাকলেও চেকে বড় অঙ্কের লেনদেন সম্পাদনে এ ধরনের চেকের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url