প্রত্যয়পত্রের ধারণা | Concept of Letter of Credit

মি. মুন্না একটা বড় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের স্টোর কর্মকর্তা। প্রতিদিন বিদেশ থেকে কাপড় আসছে, উৎপাদিত পণ্য বিদেশে যাচ্ছে- তিনি তার হিসাব রাখেন। মি. মুন্নার ভাবনা, আমরা মাল কিনতে টাকা দেই, চেক দেই, বাকি থাকলে পরে পরিশোধ করি। না দিলে তা নিয়ে কত কথা, মামলা পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিদেশের সাথে এত কেনা-বেচা, মূল্য পরিশোধ নিয়ে তেমন কথা নেই, তাগাদা নেই, কারণ কী? প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জনাব মাসুদকে একদিন কাছে পেয়ে তিনি এ প্রশ্নটা করলেন।

মাসুম সাহেব বললেন, টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে কী কোনো রপ্তানিকারক মাল পাঠাবে। নিশ্চয়তা ছাড়া মাল পাঠালে যদি আমদানিকারক টাকা না দেয় বা মাল না নেয় তাহলে বিদেশী ক্রেতার বিরুদ্ধে কী করার থাকে। তাই রপ্তানিকারক মাল পাঠানোর পূর্বে ফরমায়েশকৃত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করে। তাই আমদানিকারক তার দেশের কোনো তালিকাভুক্ত ব্যাংক থেকে রপ্তানিকারকের অনুকূলে ও আমদানিকারকের পক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্র সংগ্রহ করে তা প্রেরণ করে। এরূপ পত্র নির্দিষ্ট ফরমায়েশের জন্য প্রদত্ত হওয়ায় ঐ লেনদেনে উভয়পক্ষের বাধ্যবাধকতা জন্মে। মি. মিলন এখন বুঝছে বৈদেশিক বাণিজ্যে পাওনা পরিশোধে ব্যাংক প্রদত্ত নিশ্চয়তাপত্র নামক দলিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার এই নিশ্চয়তাপত্রই প্রত্যয়পত্র (Letter of Credit / L.C) নামে খ্যাত।

প্রত্যয়পত্র কাকে বলে? What is the Letter of Credit


প্রত্যয়পত্র হলো ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত গ্রাহকের স্বপক্ষে এমন এক ধরনের নিশ্চয়তাপত্র যার মাধ্যমে ব্যাংক আমদানিকারক বা ক্রেতার পক্ষে রপ্তানিকারক বা বিক্রেতার অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে-এই মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করে। বৈদেশিক বাণিজ্যে এরূপ দলিল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ে সীমিত পরিসরে এরূপ দলিলের ব্যবহার হয়। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যকার দূরত্ব , মুদ্রার ভিন্নতা ও আইনগত নানান বাধা-নিষেধের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে যে জটিলতা ও সন্দেহের সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্যই সমগ্র বিশ্বে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে প্রত্যয়পত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। 

১. P.H. Collin- এর মতে,
প্রত্যয়পত্র হলো ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত গ্রাহকের পক্ষে পণ্য সরবরাহকারীকে অর্থ প্রদানের একটি স্বীকৃতিপত্র। দলিলে উল্লিখিত শর্ত পূরণ হলে ব্যাংক তা পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

২. ড. এ. আর. খানের মতে,
যে পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক তার আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারককে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয় এবং আমদানিকারকের অপারগতায় নিজে পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে প্রত্যয়পত্র বলে।
উপরোক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করলে প্রত্যয়পত্রের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:

১. প্রত্যয়পত্র একটি ঋণের দলিল;
২. এরূপ দলিল ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা হয়;
৩. এতে ৩ টি পক্ষ থাকে, যথা - আমদানিকারক বা ক্রেতা, রপ্তানিকারক বা বিক্রেতা ও ব্যাংক;
৪. এর মাধ্যমে ব্যাংক; আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারকের অনুকূলে ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে;
৫. বৈদেশিক মুদ্রা সম্পৃক্ত হওয়ায় এর ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়; এবং
৬. ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রত্যয়পত্রের ব্যবহার ছাড়াও এর দ্বারা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশের ভেতরে বা বাইরে অর্থসংস্থান করা যায়।

উপসংহারে বলা যায়, যে পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক আমদানিকারক বা ক্রেতার পক্ষে রপ্তানিকারক বা বিক্রেতার অনুকূলে ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে তাকে প্রত্যয়পত্র (LC) বলে।
প্রত্যয়পত্রের ধারণা

বিভিন্ন প্রকার প্রত্যয়পত্র|Types of Letter of Credit


আমদানিকারকের পক্ষে ও রপ্তানিকারকের অনুকূলে ব্যাংক ইস্যুকৃত অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্রকেই প্রত্যয়পত্র বলে। বর্তমান জটিল অর্থনৈতিক লেনদেনের যুগে ব্যবসায়ীদের নানাবিধ প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়পত্র খোলার সুযোগ প্রদান করে। প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়পত্র সম্পর্কে। নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. নিশ্চিত প্রত্যয়পত্র (Confirmed letter of credit): যে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক প্রত্যয়পত্র খোলার পর রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বিনিময় বিলে দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান করে এবং মেয়াদ পূর্তিতে মূল্য পরিশোধের নিশ্চিত আশ্বাস প্রদান করে তাকে নিশ্চিত প্রত্যয়পত্র বলে। এক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ব্যাংক প্রত্যয়পত্র কখনই বাতিল করতে পারে না। বৈদেশিক বাণিজ্যে সাধারণত এ ধরনের প্রত্যয়পত্রের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়।

২. অনিশ্চিত প্রত্যয়পত্র (Unconfirmed letter of credit): যে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বিলে স্বীকৃতি প্রদান এবং তার মূল্য পরিশোধের ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সাধারণ প্রতিশ্রুতি প্রদত্ত হয় তাকে অনিশ্চিত প্রত্যয়পত্র বলে। যেকোনো সময় ব্যাংক এ ধরনের প্রত্যয়পত্রের নিশ্চয়তা। প্রত্যাহার করতে পারে। অবশ্য প্রত্যাহার তারিখের পূর্বে প্রস্তুতকৃত বিলে স্বীকৃতি প্রদান করলে ব্যাংক তার অর্থ পরিশোধে বাধ্য থাকে।

৩. দলিলি প্রত্যয়পত্র (Documentary letter of credit): প্রত্যয়পত্র ইস্যুকারী ব্যাংক যদি প্রত্যয়পত্রে এরূপ শর্ত আরোপ করে যে, বিল উপস্থাপনের সময় এর সাথে মালের চালান রসিদ, বহনপত্র , বিমাপত্র ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে অন্যথায় বিল স্বীকৃত হবে না, তবে তাকে দলিলি প্রত্যয়পত্র বলে।

৪. দলিলবিহীন প্রত্যয়পত্র (Clean letter of credit): প্রত্যয়পত্র ইস্যুকারী ব্যাংক রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বিলে মর্যাদা প্রদানের বিষয়ে যদি বিলের সাথে অন্য কোনো দলিল সংযুক্ত করার বিষয়ে শর্ত আরোপ না করে তবে তাকে দলিলবিহীন প্রত্যয়পত্র বলে।

৫. খোলা প্রত্যয়পত্র (Revocable or open letter of credit): ইস্যুকারী ব্যাংক যেকোনো সময় প্রত্যয়পত্র বাতিল করতে পারবে এ মর্মে প্রত্যয়পত্র ইস্যু করলে তাকে খোলা প্রত্যয়পত্র বলে। অবশ্য বাতিলের পূর্বে এই পত্রের ভিত্তিতে কোনো বিল প্রস্তুত করা হলে বা বিল স্বীকৃত হলে তার মর্যাদা প্রদানে ব্যাংক বাধ্য থাকবে।

৬. স্থির প্রত্যয়পত্র (Irrevocable or firm letter of credit): ইস্যুকারী ব্যাংক মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যতিরেকে যে প্রত্যয়পত্র বাতিল করতে পারে না তাকে স্থির প্রত্যয়পত্র বলে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের মৃত্যু হলে বা গ্রাহক দেউলিয়া হলেও এর আওতায় প্রস্তুতকৃত বিলের মর্যাদা দিতে ও অর্থ প্রদানে ব্যাংক বাধ্য থাকে।

৭. নির্দিষ্ট প্রত্যয়পত্র (Fixed letter of credit): যে প্রত্যয়পত্র নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার জন্য খোলা হয় এবং মেয়াদান্তে বা অর্থ পরিশোধিত হলে বাতিল বলে গণ্য হয় তাকে নির্দিষ্ট বা স্থায়ী প্রত্যয়পত্র বলে।

৮. ঘূর্ণায়মান প্রত্যয়পত্র (Revolving letter of credit): যে প্রত্যয়পত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থের পরিমাণের সর্বোচ্চ সীমা নির্দিষ্টপূর্বক খোলা হয় এবং উক্ত সময়ে পৌনঃপুনিকভাবে সমপরিমাণ বা তার কম অর্থের জন্য ব্যবহার করা যায় তাকে ঘূর্ণায়মান প্রত্যয়পত্র বলে। যেমন: তিনমাস মেয়াদে ২০ লক্ষ টাকার জন্য এ ধরনের প্রত্যয়পত্র খোলা হলো। ঐ সময়ের মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা বা তার কম একাধিক লেনদেনের জন্য এই একটি প্রত্যয়পত্র ব্যবহৃত হতে পারবে। বারে বারে প্রত্যয়পত্র খুলতে যেয়ে অর্থ জমা দেয়া বা ঋণমঞ্জুরের ঝামেলা থেকে গ্রাহকদের রেহাই দেয়ার জন্য এরূপ প্রত্যয়পত্রের উদ্ভব ঘটেছে।

৯. প্রান্তে লিখিত প্রত্যয়পত্র (Marginal letter of credit): যে প্রত্যয়পত্রের একপ্রান্তে প্রত্যয়পত্র এবং অপরপ্রান্তে বিল ফরম সংযুক্ত থাকে এবং প্রাপ্তদেশে বিল তৈরি ও মর্যাদাদানের শর্তাবলি লিখিত থাকে তাকে প্রান্তে লিখিত প্রত্যয়পত্র বলে।

১০. অগ্রিম প্রত্যয়পত্র (Anticipatory letter of credit): রপ্তানিকারক বা বিক্রেতার অগ্রিম মূল্য পরিশোধ বা অর্থসংস্থানের শর্তে যে প্রত্যয়পত্র খোলা হয় তাকে অগ্রিম প্রত্যয়পত্র বলে। এরূপ প্রত্যয়পত্রকে নিম্নোক্ত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

ক) লাল দফা অগ্রিম প্রত্যয়পত্র (Red clause anticipatory letter of credit): যে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক পণ্যের ভাড়া, শুক্ষ, বিমা খরচ, জাহাজ খরচ ইত্যাদি বাবদ রপ্তানিকারককে অগ্রিম টাকা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে তাকে লাল দফা অগ্রিম প্রত্যয়পত্র বলে।

খ) সবুজ দফা অগ্রিম প্রত্যয়পত্র (Green clause anticipatory letter of credit): যে প্রত্যয়পত্রের অধীনে ব্যাংক রপ্তানিকারক বা বিক্রেতাকে শুধুমাত্র অগ্রিম গুদাম ভাড়া গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে তাকে সবুজ দফা অগ্রিম প্রত্যয়পত্র বলে।

১১. ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র (Traveller's letter of credit): ভ্রমণকারীর অনুকূলে ব্যাংক কর্তৃক যে প্রত্যয়পত্র ইস্যু করা হয় তাকে ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র বলে। এতে ব্যাংক তার বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংককে প্রত্যয়পত্রের আওতায় অর্থ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে। এরূপ প্রত্যয়পত্র নিম্নোক্ত দু'ধরনের:

ক) নির্দিষ্ট প্রত্যয়পত্র (Direct letter of credit): ইস্যুকারী ব্যাংক এই প্রত্যয়পত্রের অধীনে ভ্রমণকারীকে তার বিদেশস্থ নির্দিষ্ট কোনো শাখা বা প্রতিনিধির কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উত্তোলনে সুযোগ প্রদান করে।

খ) ভ্রাম্যমাণ প্রত্যয়পত্র (Circular letter of credit): এই প্রত্যয়পত্রের অধীনে ভ্রমণকারী ইস্যুকারী ব্যাংকের একাধিক বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধির কাছ থেকে মেয়াদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করতে পারে। এরূপ প্রত্যয়পত্রের সাথে সংযুক্ত প্রদর্শনপত্রে ভ্রমণকারী স্বাক্ষর করে প্রয়োজনে একাধিক ব্যাংকের কাছ থেকে এতে বর্ণিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে।

১২. ব্যাক-টু-ব্যাক প্রত্যয়পত্র (Back-to-back letter of credit): যে ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যয়পত্রের গ্রহীতা এর বিপক্ষে বা এর জামানতের ভিত্তিতে অন্যের অনুকূলে ব্যাংক থেকে কোনো নতুন প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করে তাকে ব্যাক-টু-ব্যাক প্রত্যয়পত্র বলে। এরূপ প্রত্যয়পত্রের সুবিধা হলো ব্যাংকে কোনো নগদ অর্থ প্রদান না করে প্রাপ্ত। প্রত্যয়পত্রকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এর বিপক্ষে নতুন প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করা যায়।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে শুধু ব্যবসায় জগতেই নয় এর বাইরেও প্রত্যয়পত্রের প্রচলন ঘটেছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আর্থিক লেনদেনের সকল ক্ষেত্রে এটা আরো জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হবে। আর যার ফলস্রুতিতে নতুন নতুন প্রত্যয়পত্রেরও প্রচলন ঘটবে।

প্রত্যয়পত্রের গুরুত্ব|Importance of Letter of Credit 


বর্তমান জটিল ও বিশ্ববিস্তৃত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রত্যয়পত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দলিল এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে যে, এর ব্যবহার ভিন্ন এরূপ ব্যবসায়ের কথা চিন্তাও করা যায় না। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যয়পত্রের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । নিম্নে প্রত্যয়পত্রের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:

১. বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন (Development of foreign trade): বৈদেশিক বাণিজ্যকে সহজ ও নিরাপদ করার ক্ষেত্রে প্রত্যয়পত্রের গুরুত্ব সর্বাধিক। রপ্তানিকারক তার অনুকূলে ব্যাংক প্রদত্ত এরূপ প্রত্যয়পত্র প্রাপ্তি ভিন্ন পণ্য প্রেরণ করে না। তাই রপ্তানি বাণিজ্যে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লিল।

২. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সম্প্রসারণ (Extension of home trade): দেশের অভ্যন্তরে অপরিচিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ও নিশ্চয়তার সাথে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যয়পত্র ব্যবহৃত হয় বলে একটা দেশের অভ্যন্তরেও ব্যবসা - বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।

৩. মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা (Confirmation of money collection): প্রত্যয়পত্র বিক্রীত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে। ক্রেতা বা আমদানিকারক মূল্য পরিশোধ না করলে ব্যাংক তা পরিশোধের নিশ্চয়তা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটা অবাধে ব্যবহৃত হয়।

৪. ঝুঁকি হ্রাস (Reduction of risk): এই পত্রের একটি অন্যতম সুবিধা হলো এটা তৈরি ও প্রেরণের পর রপ্তানিকারকের অনুমোদন ব্যতিরেকে তা আর বাতিল করা যায় না । ফলে রপ্তানিকারকের পক্ষে লেনদেনের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।

৫. অগ্রিম অর্থ প্রাপ্তি (Receipt of advance money): প্রাপ্ত প্রত্যয়পত্রের বিপক্ষে রপ্তানিকারক যেমনি ব্যাংক ঋণ নিতে পারে তেমনি প্রাপ্ত স্বীকৃত বিনিময় বিল মেয়াদ পূর্তির পূর্বে সহজেই বাট্রাকরণ করা যায়। ফলে অগ্রিম অর্থসংস্থানের সুযোগ ঘটে।

৬. সম্পর্কোন্নয়ন (Development of relationship): প্রত্যয়পত্র অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অপরিচিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে দ্রুত সম্প্রসারিত হয় ও ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।

৭. ব্যাংকের আয়ের সুযোগ (Opportunity of bank's income): প্রত্যয়পত্র খোলা থেকে শুরু করে লেনদেন নিষ্পত্তি পর্যন্ত ব্যাংক মধ্যস্থকারী হিসেবে সেবার বিনিময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে। তাই ব্যাংক ব্যবসায়েরও সম্প্রসারণ ঘটে।

৮. বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ (Providing opportunity of foreign tour): প্রত্যয়পত্র শুধু ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয় বিদেশ ভ্রমণেও ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের সাহায্য করে। ব্যাংকে প্রত্যয়পত্র খুলে ভ্রমণকারী উক্ত ব্যাংকের বিদেশী শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংকের কাছ থেকে সহজেই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রত্যয়পত্র শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যেই নয় এর বাইরেও নানাবিধ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বৈদেশিক ব্যবসায় ও সেই সাথে বৈদেশিক লেনদেন যেভাবে বাড়ছে তাতে আশা করা। যায় ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে প্রত্যয়পত্রের ব্যবহার আরও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url