ব্যাংক হিসাব খোলার ধারণা | Concept of Opening Bank Account
ব্যাংক ফারহাদ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ব্যাংকে নতুন চাকরি পেয়েছে। প্রথম প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে একজন প্রশিক্ষক বললেন, আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাই গ্রাহককে সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করেই ব্যাংককে মুনাফা অর্জন করতে হয়। এই গ্রাহকবৃন্দের সাথে ব্যাংকের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ হিসাব না খুলছে ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে ব্যাংকের লেনদেনের কার্যত কোনো সুযোগ থাকে না। কেউ যদি ব্যাংকে গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি জমা দিতে যায় সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি গ্যাস বা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানির গ্রাহক।
ব্যাংক ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে অর্থ জমা নিচ্ছে মাত্র। কেউ যদি ব্যাংকের গ্রাহক হতে চায় অর্থাৎ টাকা জমা রাখতে চায়, ঋণ নিতে চায়, এল.সি খুলতে চায়, অর্থ প্রেরণ বা হস্তান্তর করতে চায় বা কোনো ধরনের ব্যাংকিং সেবার প্রত্যাশা করে তবে প্রথমত তাকে গ্রাহক হতে ব্যাংকে হিসাব খুলতে হবে। গ্রাহকের প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের হওয়ায় গ্রাহকদের সুবিধামতো বিভিন্ন ধরনের হিসাব খোলার সুযোগ ব্যাংকে থাকা আবশ্যক। এতে ব্যাংকে গ্রাহক বাড়ে এবং আমানতসহ লেনদেন বৃদ্ধি পায়। ব্যাংকের ইমেজও তত বাড়ে।
তাই বড় কর্পোরেট গ্রাহক শুধু নয়, সব ধরনের গ্রাহকের হিসাব খোলা ও তাদের ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে পারলেই ব্যাংকের পক্ষে লক্ষার্জন সম্ভব। আর্থিক লেনদেনের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাহকের নামে ব্যাংক যে হিসাব খোলে তাকে ব্যাংক হিসাব বলে। এরূপ হিসাব হলো মূলত ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিস্বরূপ। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রত্যেক গ্রাহ্ককে ব্যাংকে হিসাব খুলতে হয়। প্রত্যেক গ্রাহককে ব্যাংক আলাদা হিসাব নম্বর প্রদান করে। অতঃপর এই হিসাবের বিপক্ষে গ্রাহক অর্থ জমাদান, অর্থ উত্তোলনসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবাসুবিধা লাভ করতে পারে।
গ্রাহক বা আমানতকারী ব্যাংকে টাকা জমা দিলে বা ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষে কোনো অর্থ সংগ্রহ করলে অথবা কোনো সুদ বা লাভ গ্রাহক প্রাপ্ত হলে তা গ্রাহকের হিসাবে ব্যাংক জমা বা ক্রেডিট করে। অন্যদিকে গ্রাহক কোনো অর্থ উত্তোলন করলে বা গ্রাহকের পক্ষে ব্যাংক কোনো অর্থ পরিশোধ করলে বা ব্যাংকের কোনো চার্জ বা প্রাপ্তি পাওনা হলে তা গ্রাহকের হিসাবে বিয়োগ বা ডেবিট করে। এতে যে কোনো দিন বা সময় গ্রাহকের হিসাবের জের কী রয়েছে তা জানা যায়। ব্যাংক হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করে গ্রাহক তার লেনদেন এবং জের সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে ব্যাংক হিসাবের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি লক্ষ করা যায়:
১. ব্যাংক হিসাব হলো ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি স্বরূপ;
২. গ্রাহকের লেনদেন অর্থাৎ অর্থ জমাদান ও উত্তোলন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়, এবং
৩. ব্যাংক হিসাব থাকার কারণেই গ্রাহক ব্যাংক প্রদত্ত সুবিধা লাভ করতে পারে।
ব্যাংকে হিসাব খোলার গুরুত্ব | Importance of Opening Bank Account
ব্যাংক হিসাব হলো মক্কেলের সাথে ব্যাংকের সম্পর্ক রক্ষা ও আর্থিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম। এই হিসাব ব্যতিরেকে ব্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। এরূপ হিসাব খেলার মাধ্যমে গ্রাহক যেমনি আর্থিক সুবিধা পায় তেমনি ব্যাংকও আমনত সংগ্রহপূর্বক তা খাটিয়ে মুনাফা অর্জন করে। নিম্নে ব্যাংকে হিসাব খোলার উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো:
১. নিরাপদ সংরক্ষণ (Sefety preservation): জনসাধারণ এবং ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদির নিরাপদ সংরক্ষণে ব্যাংক হিসাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ব্যাংকে হিসাব খোলার মাধ্যমেই। গ্রাহকগণ এরূপ সুবিধা পেয়ে থাকে। শুধুমাত্র নিরাপদ সংরক্ষণই নয় এ হিসাবের কারণেই আমানতকারীগণ প্রয়োজনবোধে টাকা-পয়সা বা অন্যান্য রক্ষিত জিনিস ব্যাংক থেকে উঠিয়ে ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারে।
২. সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি (Creation of savings attitude): মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অধিক ভোগ ও সেইসাথে অধিক খরচের পক্ষপাতি। তাদের এই মানসিক প্রবণতা রোধ করে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের স্পৃহা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের কারণে উচ্চবিত্ত থেকে আরম্ভ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের লোকেরা পর্যন্ত সঞ্চিত অর্থ যাতে ব্যাংকে বাড়ে সেজন্য চেষ্টা করে।
৩. ঝুঁকিবিহিন আয়ের সুযোগ (Facilities of riskless income): যাদের হাতে সঞ্চিত টাকা থাকে অথচ কোথাও তা খাটানোর সুযোগ থাকে না, তারা সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংকে জমা রেখে নিরাপত্তার পাশাপাশি ঝুঁকিবিহিন আয় উপার্জন করতে পারে। এ কারণে বর্তমানকালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। বিভিন্ন ধরনের মেয়াদি হিসাব ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলার সুযোগ দেয়।
৪. জাতীয় মূলধন গঠন (Formation of national capital): ব্যাংক হিসাব জনসাধারণকে শুধুমাত্র সঞ্চয়েই উদ্বুদ্ধ করে না জাতীয় মূলধন গঠনেও বিরাট অবদান রাখে। বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জনগণের কাছ থেকে তাদের বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় সংগ্রহপূর্বক দেশের মূলধন গঠন করে এবং তা ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে।
৫. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development): ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করার ফলে দেশ শিল্পায়িত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটে। ফলে দেশের অর্থনীতি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হয় । তাই দেখা যায়, ব্যাংক হিসাব জনগণের সঞ্চয়সমূহ উৎপাদন খাতে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা (Establishment of social security): অর্থ ছাড়া যেমনি মানুষের চলে না তেমনি আর্থিক লেনদেনে ঝুঁকি ও বিপদের সম্ভাবনাও অত্যধিক। ব্যাংকে হিসাব খোলার ফলে গ্রাহক চেক কেটে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ পায়। ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করে সহজেই এসস্থান থেকে অন্যস্থানে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। অর্থের নিরাপদ সংরক্ষণের সুবিধা পায়। আর এভাবে সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. ব্যাংকিং সুবিধা অর্জন (Getting banking services): ব্যাংকে হিসাব খুললে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে আমানতকারীর একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে ব্যবসায়ীরা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়িক ঋণ ও অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা লাভ করতে পারে। এরূপ সহযোগিতার জন্যও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য অনুপ্রাণিত হয়।
আরো পড়ুন: ব্যাংক হিসাব কিভাবে খুলতে হয়?