ব্যাংক ঋণের জামানত সম্পর্কে ধারণা|Concept of Security of Bank Advances

ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তাস্বরূপ ঋণগ্রহীতা ব্যাংককে যে গ্যারান্টি প্রদান করে অথবা ব্যাংকের নিকট যে সম্পত্তি জামানত রাখে তাকে ব্যাংক ঋণের জামানত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঋণগ্রহীতাকে ঋণ মঞ্জুরের পূর্বে ব্যাংক নিশ্চিত হতে চায় ঋণের টাকা সেময়মতো ফেরত পাওয়া যাবে কি না। কেননা অনেক ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণের পর ঋণের অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করে না। ঋণগ্রহীতা যদি কোনো কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে অপারগ হয় তাহলে উক্ত জামানত বিক্রি করে অথবা গ্যারান্টি প্রদানকারী তৃতীয় পক্ষের নিকট হতে ঋণের টাকা আদায় করতে পারে।

Oxford Dictionary of Business- এ উল্লেখ আছে,
জামানত হলো ঋণগ্রহীতা প্রদত্ত এমন কোনো সম্পত্তি, ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করে ঋণদাতা তার প্রদত্ত ঋণের টাকা ফেরত পেতে পারে।

উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ঋণ প্রদান করার সময় ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার নিকট হতে ঋণের টাকা পরিশোধের নিশ্চয়তা স্বরূপ যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বা ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বা তৃতীয় পক্ষ প্রদত্ত গ্যারান্টি জামানত হিসেবে গ্রহণ করে তাকে ব্যাংক ঋণের জামানত বলে।

ঋণের জামানতের প্রকারভেদ|Types of Security Against Bank Loan


যথাযথভাবে ঋণ প্রদানের মাধ্যমেই মূলত ব্যাংক তার সফলতা অর্জন করে। কিন্তু এই ঋণ প্রদান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এই ঝুঁকি নিরসনের লক্ষে ব্যাংক ঋণ প্রদানের পূর্বে ঋণের টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের জামানত গ্রহণ করে। জামানত নিম্নোক্ত প্রকারের হতে পারে।

ক. ব্যক্তিক জামানত (Personal Security): গ্রহীতার পক্ষে তৃতীয় কোনো পক্ষ ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করলে তাকে ব্যক্তিক জামানত বলে। স্বপ্নগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক ব্যক্তিগত জামানতদাতার নিকট হতে ঋণের টাকা আসায় করতে পারবে। ব্যাংকের সাথে ঋণগ্রহীতার পরিচয় না থাকলে অথবা আর্থিক লেনদেন না থাকলে অথবা জামানত হিসাবে দেওয়ার মতো কোনো সম্পন্ন গ্রহীতার না থাকলে ব্যাংক ব্যক্তিগত জামানত বিবেচনা করতে পারে। গ্রহীতা মেয়াদ শেষে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে অপারগ হলে ব্যাংক জামানতকারীর নিকট উক্ত অর্থ আদায়ের পারি। জামানতকারী পরিশোধে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাংক উহা আদায়ের জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।

খ. অব্যক্তিক জামানত (Non-personal security): সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল প্রকার জামানত হলো অব্যক্তিক বা বস্তুগত জামানত। ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী, পণ্যদ্রব্য, বিক্রয়যোগ্য সিকিউরিটি, গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র প্রভৃতি হলো অব্যক্তিক জামানতের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, অব্যক্তিক জামানত আবার নিম্নোক্ত প্রকারের হতে পারে।

১. পূর্বস্বত্ব (Lien): ঋণ পরিশোধ হওয়া পর্যন্ত যদি জামানতি সম্পত্তির স্বত্ত্ব ও দখল কথদাতার দখলে থাকে তাহলে তাকে পূর্বস্বত্ব বলে। পূর্বস্বত্ব হলো মূলত সম্পত্তির মালিকানার দলিল সম্পর্কিত পূর্বস্বত্ব আবার দুধরনের হতে পারে। যথা:

i. সাধারণ পূর্ব স্বত্ব (General lien): এক্ষেত্রে দাতা (ব্যাংক) তার ঋণের অর্থ আদায় না হওয়া পর্যন্ত জামানতি সম্পত্তি আটকে রাখতে পারে কিন্তু বিক্রয় করতে পারে না। সেভিংস সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান করা হলে তা সাধারণ পূর্বস্বত্বের আওতায় পড়ে।

ii. বিশেষ বা নির্দিষ্ট পূর্বস্বত্ব (Special or perticular lien): যখন বিশেষ কোনো ঋণের জন্য জামানত হিসেবে বিশেষ কোনো সম্পত্তির দলিল প্রদত হয় এবং ঋণের টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক উক্ত দলিল কেবলমাত্র আটক রাখাই নয়, প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে অথবা চুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে দলিলে উল্লিখিত সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারে তখন এ ধরনের জামানতকে বিশেষ বা নির্দিষ্ট পূর্বস্বত্ব বলে।

২. পণ্য দ্ৰব্য কথক (Pledge): ঋণহীতা তার গৃহীত ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তাস্বরূপ কোনো পণ্যদ্রব্য জামানত হিসেবে ব্যাংকের নিকট রাখলে তাকে পণ্যন্তব্য কথক বলে। এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা স্বপ্নগ্রহীতার নিকট থাকলেও দখল স্বত্ব থাকে ঋণদাতার। এক্ষেত্রে গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক স্বপ্নগ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে এবং কখকি পণ্য অতিরিক্ত জামানত হিসেবে আটকে রাখতে পারে।

উপরন্তু আইন অনুযায়ী নোটিশ প্রদান করে ব্যাংক কথকি পণ্য বিক্রি করে তার প্রদত্ত ঋণের টাকা আদায় করতে পারে। জামানতের এই ব্যবস্থায় জামানতকৃত সম্পত্তি উক্ত সম্পত্তির নিরাপত্তার দায়িত্ব ব্যাংকের উপর অর্পণ করা হয়।

৩. স্থাবর সম্পদ বন্ধক (Mortgage): স্থাবর সম্পদ বলতে দীর্ঘমেয়াদি স্থানান্তর অযোগ্য সম্পদ যেমন— ভূমি, ভবন প্রভৃতিকে বোঝায়। ঋণগ্রহীতা স্থাবর সম্পত্তি জামানত দিয়ে ঋণ গ্রহণ করলে তাকে স্থাবর সম্পত্তি জামানতের বিপরীতে ঋণ বলা হয়। স্থাবর সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে সাধারণত ঋণগ্রহীতা ঋণদাতাকে স্থাবর সম্পত্তির ওপর অধিকার (interest) এবং অনেক সময় মালিকানা স্বত্ব (title) প্রদান করে। স্থাবর সম্পত্তি বন্ধকের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিককে (ঋণগ্রহীতা) বন্ধকদাতা (mortgagor) বলা হয়। যার (ঋণদাতা) নিকটে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হয় তাকে বন্ধক গ্রহীতা (Mortgagee) বলা হয়। স্থাবর সম্পত্তির বন্ধকের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তির ওপর বন্ধকদাতা ও বন্ধক গ্রহীতার স্বার্থ, অধিকার এবং দায়িত্ব ১৮৮২ সালের সম্পত্তি স্থানান্তর আইন (Transfer of Property Act-1882) অনুযায়ী নির্ধারিত হয় । সাধারণভাবে লিখিত দলিলের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক দেওয়া হয়। এরূপ দলিলকে বন্ধক দলিল (Mortgage deed) বলা হয়। অর্থাৎ দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা ঋণের নিশ্চয়তা স্বরূপ স্থাবর সম্পত্তির অধিকার বা মালিকানা স্বত্ব অথবা উভয়ই ঋণদাতাকে প্রদান করলে এরূপ নিশ্চয়তাকে স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক বলা হয়। স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক নিম্নোক্ত ধরনের হতে পারে—

i. সাধারণ বন্ধক (Simple mortgage): সাধারণ বন্ধক ঋণগ্রহীতাকে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ পরিশোধে দায়বদ্ধ করে। এক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা ও দখল উভয়ই ঋণগ্রহীতার নিকটে থাকে শুধুমাত্র বন্ধকি দলিল প্রস্তুতের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা এ ধরনের বন্ধক প্রদান করে। ঋণগ্রহীতা ঋণের শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে আদালতের মধ্যস্ততায় ঋণদাতা এ সম্পত্তি বিক্রয়পূর্বক ঋণের টাকা আদায় করতে পারে।

ii. বিক্রয় শর্তযুক্ত বন্ধক (Mortgage by conditional sale): বিক্রয় শর্তযুক্ত বন্ধকের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকে না। বন্ধককৃত সম্পত্তির দখল ও মালিকানা ঋণগ্রহীতার নিকটেই থাকে। ঋণগ্রহীতা বন্ধকিপত্রে উল্লিখিত শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে বন্ধকি সম্পত্তি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ঋণদাতার নিকট বিক্রয় করে। এ ধরনের চুক্তির মাধ্যমে বিক্রয়কে প্রকৃত বিক্রয় বলা যায় না। ঋণদাতা আদালতের মধ্যস্ততায় স্থাবর সম্পত্তির দখল (Foreclosure) গ্রহণ করতে পারে। তবে ঋণগ্রহীতা ঋণের অর্থ ফেরত দিলে ঋণদাতা দখলকৃত সম্পত্তি ঋণগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে।

iii. খাই-খালাসি বন্ধক (Usufructuary mortgage): এ ধরনের বন্ধককে ঋণগ্রহীতা লিখিতভাবে (Expressly) অথবা আচরণের দ্বারা (by indication) স্থাবর সম্পত্তির দখল ঋণদাতার নিকট অর্পণ করে। ঋণের অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তির ভোগ-দখলের অধিকার এবং তা হতে অর্জিত আয় (ভাড়া, মুনাফা) প্রাপ্তির অধিকার ঋণদাতা পায়। ঋণদাতার ঋণের অর্থ পরিশোধিত হয়ে গেলে বন্ধকি সম্পত্তি ঋণগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দিতে হয়। তবে ঋণগ্রহীতা ৬০ বছরের মধ্যে ঋণের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সম্পত্তির মালিকানা নিরঙ্কুশভাবে (Absolutely) ঋণদাতার নিকট চলে যায়।

iv. ইংলিশ বন্ধক (English mortagage): ইংলিশ বন্ধকে ঋণগ্রহীতা স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা এবং দখল ঋণদাতার নিকট নিরঙ্কুশভাবে হস্তান্তর করে। তবে এ ধরনের বন্ধকের ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার সাথে সাথে সম্পত্তির মালিকানা ও দখল ঋণগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরিত হয়। এ ধরনের বন্ধকও ঋণগ্রহীতাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ করে।

v. স্থাবর সম্পত্তির মালিকানার দলিলপত্র বন্ধক (Mortgage by deposite of title deeds): এটি ব্যাংকের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়। ঋণগ্রহীতা ঋণের নিরাপত্তার জন্য শুধু স্থাবর সম্পত্তির মালিকানার দলিল ব্যাংকের নিকট জমাদান করে। এ ধরনের বন্ধকে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে না।

vi. ব্যতিক্রমী বন্ধক (Anomalous mortagage): এ ধরনের বন্ধক স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নিয়ম, প্রথা এবং চুক্তি সম্পাদনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে এদেরকে নিম্নোক্ত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়

ক. আইন বন্ধক (Legal mortgage): আইন বন্ধক অনুযায়ী স্থায়ী সম্পদ বন্ধক দেওয়ার সময় একটি আইনানুগ চুক্তি (Legal contract) সম্পাদন করা হয়। অনুরূপ চুক্তির মাধ্যমে সম্পত্তির ওপর স্বার্থ বা অধিকার (interest or estate) ঋণদাতাকে প্রদান করা হয়। তবে এই মর্মে শর্তযুক্ত থাকে যে, ঋণের অর্থ পরিশোধ করলে উক্ত স্বার্থ বা অধিকার ঋণগ্রহীতার নিকট ফিরে আসবে। আইনি বন্ধকের ক্ষেত্রে সম্পদের ওপর আইনগত অধিকার হস্তান্তর আবশ্যক।

খ. সমতা বন্ধক (Equitable mortgage): সমতা বন্ধক করা হয় স্থাবর সম্পত্তির মালিকানার দলিল ঋণদাতাকে প্রদান তাছাড়াও ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার সাথে এমন ধরনের একটি চুক্তি সম্পাদন করে যাতে ঐ সম্পত্তির ওপর ঋণদাতার কিছু স্বার্থ (যেমন- ভাড়া আদায়, ভোগ, ব্যবহার) সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সমতা বন্ধকে সবসময় চুক্তি সম্পাদন আবশ্যক নয়। এক্ষেত্রে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার সমঝোতার (Agreement) মাধ্যমে এ ধরনের বন্ধক দেওয়া যায়। তবে সকল ক্ষেত্রেই দলিলপত্রের সাথে সম্পত্তির অধিকার ঋণদাতাকে দিতে হয়। ঋণের অর্থ পরিশোধ হলে ঋণদাতার এ ধরনের অধিকারের সমাপ্তি ঘটে। তবে ঋণদাতা যথাসময়ে ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সম্পত্তির ওপর পূর্ণ অধিকার ঋণদাতা পায় এবং তা বিক্রয় করার অধিকারও পায়। আদালতের মাধ্যমে এ বিষয়াবলির মীমাংসা করা হয়।

ব্যাংক ঋণের জামানতের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা|Importance of Security Against Bank Loan 


বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত অন্যের অর্থের পোদ্দারি করে। বিভিন্ন সঞ্চয় মাধ্যম ও সেবার বিনিময়ে অর্থ সঞ্চয় করে থাকে। জামানতকারীরা বার্ষিক সুদের বিনিময়ে অর্থ জমা রাখে। যেহেতু বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি আর্থিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সেহেতু জামানতকারীদের অর্থে ব্যাংক তার সকল ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাই জামানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা প্রয়োজন, আর জামানত হলো ঋণের নিরাপত্তা কবচ।

অতএব, ব্যাংক ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য ঋণগ্রহীতার নিকট হতে যেসকল সম্পদ গ্রহণ করে তাকেই ঋনের জামানত বলে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ঋণের জামানতের গুরুত্ব অপরিসীম। ঋণের জামানতের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো:

১.ঋণের নিশ্চয়তা (Credit guarantee): বাণিজ্যিক ব্যাংক জামানতকারীদের অর্থ দিয়ে ব্যবসায় করে থাকে। তাই জামানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাকে বাধ্য থাকে। ব্যাংক যদি ঋণ প্রদান করে তা আদায়ে ব্যর্থ হয় তাহলে জামানকারীদের নিকট ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হয়। তাই ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য জামানত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. ঝুঁকি হ্রাস (Risk reduction): ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো Safety First। ঋণ প্রদান এবং জামানতকারীর অর্থ সর্বাধিক নিরাপন কি না ব্যাংকের সেই দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যার ফলে ঋণের বিপরীতে জামানত রাখলে ব্যাংকের সকল প্রকার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

৩. বিলম্বিতাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Delay resistance): গ্রহীতা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গড়িমসি করতে পারে। তখন ব্যাংক তার জামানত বিক্রয়ের মাধ্যমে ঋণ ও উপুল আদায় করতে পারে। এতে ঋণ বিলম্বিতার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

৪. আইনগত ব্যবস্থা (Legal system): গ্রহীতা কোনো প্রকার জালিয়াতি করলে ব্যাংক তার জামানত বিক্রয়ের সুবিধা ভোগ করে থাকে। এতে ব্যাংককে আইনগত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।

৫. সচেতনতা বৃদ্ধি (Increasing awareness): ঋণগ্রহীতা জামানতের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করলে ঋণ পরিশোধে সে সচেতন থাকে। সর্বোপরি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে যত্নবান হয় এবং ব্যাংক তার অর্থের নিশ্চয়তা পায়।

৬. ঋণের সঠিক ব্যবহার (Proper use of loan): ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হলে, ঋণগ্রহীতা তার জামানতের কথা তেবে ঋণের উত্তম ব্যবহারে সচেতন হয়। এতে খুব দ্রুত অর্থ উঠে আসে এবং তাতে ঋণের সঠিক ব্যবহার হয়।

৭. কু-ঋণের সম্ভাবনা কম (Low chance of non-debt): ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংকে প্রচুর কু-ঋণের সৃষ্টি হয় যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘাটতিতে প্রভাব ফেলে। ফলে ঋণের আমানত কু-ঋণের সম্ভাবনা কমায়। 

৮. ব্যাংক, গ্রাহক ও ঋণগ্রহীতার সম্পর্ক (Relationship between bank, customer and loanee): জামানতের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করলে ঋণগ্রহীতা ঋণের আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলে। অন্যদিকে, গ্রাহক তা দেখে ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়ে। ফলে গ্রাহক-ব্যাংক-ঋণগ্রহীতার মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

৯. ব্যক্তিগত জামানতের সুবিধা (Benifits of personal security): ব্যাংক ব্যক্তিগত জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এতে ঋণ আদায় করা ব্যাংকের জন্য সহজ হয়।

১০. তারল্য সুবিধা (Liquidity benefit): ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক জামানতকারীর জামানত খুব দ্রুত তারণ্য করতে পারে। ফলে অর্থ আদায়ে ব্যাংককে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।

১১. ঋণদানে উৎসাহিত (Debt encourages): জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় ব্যাংক ঋণ প্রদানে উৎসাহিত হয়। এতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটে যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হতে সাহায্য করে।

পরিশেষে বলা যায়, জামানত ব্যাংকের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ফলে ব্যাংক অধিক হারে ব্যাংক ঋণ প্রদানে উৎসাহিত হয়। এবং দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই ব্যাংকের ঋণের জামানত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url