বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের পদ্ধতিসমূহ | Method of Exchange of Foreign Remittance

বিদেশে অর্থ প্রেরণের উপায় বা পদ্ধতি


একটা দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত লেনদেনের পাওনা নিষ্পত্তিতে বৈধ কারেন্সী গ্রহণে কোনো পক্ষেরই কোনো আপত্তি থাকে না। কিন্তু দুটি দেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সংঘটিত বৈদেশিক লেনদেনের পাওনা নিষ্পত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। অর্থাৎ দেনাদার বা অর্থ পরিশোধকারী তার দেশীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মুদ্রায় অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণ করে।

অর্থাৎ প্রেরণকারীর ব্যাংকে অর্থ জমা থাকলেও এতদসংক্রান্ত নির্দেশ থেকে ব্যাংকের শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংককে অবহিত করে। এরূপ তথ্যে অন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৃত্যুর পরিমাণ উল্লেখ করা হলেও উক্ত ব্যাংকের প্রতিনিধি বাশখা ব্যাংককে দেশীয় মুতায় তা পরিশোধ করে। তাই এ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় কার্যত মুদ্রা বিনিময় হিসেবে গণ্য হয়। নিম্নে এরপ বিন্দিয় সংক্রান্ত উপায় বা পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. বৈদেশিক বিনিময় বিল (Foreign bill of exchange): বর্তমানকালে বৈদেশিক বিনিময় বিলের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ প্রেরণ খুবই জনপ্রিয় পদ্ধতি। এতে পাওনাদার অর্থ পরিশোধের জন্য বিদেশী দেনাদারের ওপর একটি শর্তহীন লিখিত নির্দেশ প্রদান করে। দেনাদার বিলে স্বীকৃতি দিলে তা বৈধ বিলে পরিণত হয়। অতঃপর প্রাপক ঐ বিলটি ব্যাংকে জন্য দিয়ে অথবা তা আগাম বাট্টা বা বিক্রয় করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। উল্লেখ্য, প্রত্যয়পত্রের বিপক্ষে বিল প্রস্তুত হওয়ায় এক্ষেত্রে বিলের স্বীকৃতির সাথে ব্যাংকের সম্পৃক্ততা থাকে।

২. ব্যাংকের আজ্ঞাপত্ৰ (Bank drafi): আন্তর্জাতিক বিন্দির মাধ্যম হিসেবে ব্যাংকের আচ্ছাপত্র একটি স্বীকৃত ও সহজ মাধ্যম। এ পদ্ধতিতে প্রেরক তার ব্যাংকের কাছ থেকে প্রাপকের অনুকূলে নির্দিষ্ট মূল্যের আজ্ঞাপত্র সংগ্রহ করে তা প্রাপকের নিকট প্রেরণ করে। প্রাপক নিজে বা তার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রস্তুতকারী দেশের ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা বা প্রতিনিধি বরাবর ড্রাফট উপস্থাপন করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

৩. ডাকযোগে অর্থ প্রেরণ (Mail transfer/MT): এ পদ্ধতি অনুসারে প্রেরক প্রেরিতব্য সকল অর্থ ফিসহ তার ব্যাংকে জমা দেয়। অতঃপর প্রেরকের ব্যাংক প্রাপকের দেশে অবস্থিত তাদের কোনো শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রাপককে পরিশোধের নির্দেশ দেয়। ডাকযোগে এরূপ নির্দেশ প্রদান করা হয় বলে এ পদ্ধতিকে ডাকযোগে অর্থ প্রেরণ বলে।

৪. তারযোগে অর্থ প্রেরণ (Telegraphic transfer / IT): এ পদ্ধতি অনুসারে প্রেরক তার প্রেরিতব্য অর্থ এবং টেলিগ্রাফ ফি-একত্রে তার ব্যাংকে দেশীয় মুদ্রায় জমা দেয়। অতঃপর ব্যাংক প্রাপকদের দেশে তার কোনো শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংককে উক্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রাপককে পরিশোধ করতে বলে। টেলিগ্রাফের মাধ্যমে এ নির্দেশ দেয়া হয় বলে এ পদ্ধতিকে তারযোগে অর্থ প্রেরণ বলে। 

৫. ফ্যাক্সযোগে প্রেরণ (Fax transfer / FT): এটিও ডাকযোগে বা তারযোগে অর্থ প্রেরণের অনুরূপ। তবে পার্থক্য হলো এখানে কোনো ধরনের সেবা সংস্থার সহায়তা ছাড়াই সরাসরি ব্যাংকের ফ্যাক্স নম্বরে দ্রুত সংবাদ। প্রেরণ ও অর্থ প্রদান করা যায়। প্রেরক ব্যাংকে ফি সহ টাকা জমা দিলে ব্যাংক তার বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধি ব্যাংককে ফ্যাক্সযোগে বিদেশী প্রাপকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ প্রদানের নির্দেশ প্রেরণ করে। সরাসরি উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রাপক ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে প্রেরক থেকে প্রাপ্ত গোপন কোড নং প্রকাশ ও নিজের যথার্থতার প্রমাণ দিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে পারে। বর্তমানে এরূপ পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

৬. ই-মেইলে অর্থ প্রেরণ (E-mail transfer): বর্তমান ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এর জগতে ই-মেইলে অর্থ প্রেরণ সবচাইতে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এক্ষেত্রে প্রেরক ফি সহ অর্থ ব্যাংকে জমা দিলে ব্যাংক প্রেরককে একটা গোপন কোড নং প্রদান করে। অতঃপর ব্যাংক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে বিদেশস্থ শাখা বা বিদেশী প্রতিনিধি ব্যাংককে প্রয়োজনীয় তথ্য ও অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেয়। প্রাপক ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয়ে উক্ত কোড নং জানায় এবং নিজের যথার্থতার প্রমাণপত্র হাজির করে সরাসরি অর্থ উত্তোলন করে। অবশ্য ব্যাংক হিসাবে অর্থ ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এরূপ প্রমানের কোনো প্রয়োজন হয় না।

৭. এটিএম কার্ড (ATM card): মানুষবিহীন স্বয়ংক্রীয়ভাবে পরিচালিত এ লেনদেন ব্যবস্থা সংক্ষেপে ATM নামে পরিচিত। ATM কার্ড; যেমন- VISA, MASTER CARD ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রাপক এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে ATM কার্ড ব্যবহারপূর্বক অর্থ সংগ্রহ ব্যবস্থা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

৮. সুইফট্ / SWIFT (The society for worldwide interbank financial tele-communication): এটি আন্তঃদেশীয় আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত একটা সংস্থা। এর উদ্দেশ্য হলো সদস্য ব্যাংকগুলো যেনো ইলেকট্রনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজে, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পাদন করতে পারে। এ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় আঞ্চলিক Switch center এর সাথে ঐ অঞ্চলের সদস্য ব্যাংকগুলো পরস্পর সংযুক্ত থাকে। এরাই গ্রাহকদের পক্ষে সংস্থার নেটওয়ার্ক ব্যবহার ও সহযোগিতা। নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকই এখন আন্তর্জাতিক এই নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

৯. ব্যক্তিগত চেক (Personal cheque): যে সকল দেশের মধ্যে উত্তম বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান তাদের মধ্যে এ ধরনের চেকের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগত চেকের ক্ষেত্রে আদেষ্টা তার দেশের স্থানীয় শাখার ওপর চেক কাটে এবং পাওনাদারের কাছে তা পাঠিয়ে দেয়। পাওনাদার তার দেশের নিজস্ব ব্যাংকারের কাছে চেকটি জমা দিয়ে অথবা ব্যাংকের কাছে বিক্রয় করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ব্যাংক নির্দিষ্ট পন্থায় আদিষ্ট ব্যাংকের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

১০. নগদ প্রত্যয়পত্র (Cash letter of credit): বিদেশে অর্থ প্রেরণের সহজ ও নির্ভরযোগ্য আরেকটি পদ্ধতি হলো নগদ প্রত্যয়পত্র। এতে একজন আমদানিকারক ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে প্রত্যয়পত্র (Letter of credit) খুলে তা বিদেশে পাওনাদারের নিকট পাঠিয়ে দেয় । পাওনাদার তার ব্যাংকে জমা দিয়ে অথবা সরাসরি আদেষ্টার ব্যাংকের শাখা বা প্রতিনিধি থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে । অবশ্য প্রত্যয়পত্র খুলতে সবসময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

১১. ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র (Traveller's letter of credit): এ পদ্ধতি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেই অধিক ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে একজন ভ্রমণকারী নিজ দেশীয় ব্যাংকে দেশীয় মুদ্রা জমা দিয়ে ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করে। ব্যাংক তার বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধিকে উক্ত প্রত্যয়পত্র বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে। ভ্রমণকারী বিদেশে সহজেই এটা ভাঙিয়ে ঐ দেশীয় মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারে।

১২. ভ্রমণকারীর চেক (Traveller's cheque): এটিও বিদেশ ভ্রমণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । এ পদ্ধতিতে ভ্রমণকারী তার দেশস্থ ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে ভ্রমণকারীর চেক (TC) সংগ্রহ করে এবং বিদেশে যেয়ে যে কোন মুদ্রা বিনিময় (Money exchange) প্রতিষ্ঠান থেকে তা ভাঙ্গিয়ে নিতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা বহন অপেক্ষা TC বহন অধিক নিরাপদ। ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র অপেক্ষা এটা ভাঙ্গানোও অত্যন্ত 

১৩. আন্তর্জাতিক মানি অর্ডার (International money order): বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী মানি অর্ডারের মাধ্যমে অর্থের আদান-প্রদানের ব্যবস্থা থাকে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক মানি অর্ডারের মাধ্যমে অর্থের আদান-প্রদান করা যায়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।

১৪. নগদ কাগজী মুদ্রা (Cash paper currency): ক্ষেত্রবিশেষে অল্প পরিমাণ অর্থ লেনদেনে নগদ কাগজী মুদ্রা সরাসরি ব্যবহৃত হতে পারে। সাধারণত হজ্বযাত্রী, তীর্থযাত্রী, পর্যটক ও ব্যবসায়ীগণ সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে কিছু পরিমাণ নগদ অর্থ বহন করতে পারে। বাংলাদেশ থেকে বাইরে গমনকারী যে কোনো ব্যক্তি বৈধভাবেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নগদে বহন করার বৈধ অধিকারী।

পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত প্রত্যেকটি পদ্ধতিই বিদেশে অর্থ প্রেরণের বৈধ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। তবে যে পদ্ধতির মাধ্যমেই বিদেশে অর্থ প্রেরণ করা হোক না কেন তা অবশ্যই দেনাদার ও পাওনাদার বা প্রেরক ও প্রাপক এবং দু'দেশের সরকারের মধ্যকার পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই সংঘটিত হয়।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 02 May, 2023

    Misnurnaher900@gmail

Add Comment
comment url