ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম বা পদ্ধতি | Procedure of Opening Bank Account

ব্যাংক হিসাব হলো এমন একটি মাধ্যম যার ফলশ্রুতিতে ব্যাংক আমানতকারীর সাথে এবং আমানতকারী ব্যাংকের সাথে লেনদেন ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। অন্যভাবে বলা যায় গ্রাহকদের সাথে লেনদেন বা প্রত্যেক্ষ যোগাযোগ রক্ষার জন্য ব্যাংক প্রত্যেক গ্রাহকের নামে যে হিসাব খোলে তাকে ব্যাংক হিসাব বলে।

গ্রাহকদের প্রয়োজন বিবেচনায় ব্যাংক মূলত নিম্নোক্ত তিন ধরনের হিসাব খোলার সুযোগ প্রদান করে থাকে।

ক. চলতি হিসাব (Current account)
খ. সঞ্চয়ী হিসাব (Savings account)
গ. স্থায়ী হিসাব (Fixed account)

হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমেই স্থির করতে হয় তিনি কোন ধরনের ব্যাংক হিসাব খুলতে আগ্রহী। অতঃপর তাকে ব্যাংক নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের হিসাব খোলার পদ্ধতি নিম্নে দেখানো হলো:

ক. চলতি হিসাব খোলার পদ্ধতি

১. আবেদনপত্র সংগ্রহ
২. আবেদনপত্র পূরণ
৩. পরিচয়করণ
৪. দলিলাদি সংযোজন
৫. আবেদনপত্র জমাদান
৬. নমুনা দপ্তরের কারণ
৭. প্রাথমিক জমা প্রদান
৮. চেক বই সংগ্রহ

খ. স্থায়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি

১. আবেদনপত্র সংগ্রহ
২. আবেদনপত্র পূরণ ও জমাদান
৩. অর্থ জমা ও স্থায়ী আমানতের রশিদ সংগ্রহ
ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম

চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি | Method of opening current or savings account 


ব্যাংকে চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি মূলত একই ধরনের। এর যেকোনো এক ধরনের হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়:

১. আবেদনপত্র সংগ্রহ (Collection of application form): এরূপ হিসাব খোলার জন্য আমানতকারীকে তার পছন্দমত ব্যাংকের সুবিধাজনক শাখা থেকে ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়। হিসাব খোলার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্রের ফরম ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির কাছে সংরক্ষিত থাকে। উক্ত ব্যক্তির নিকট হাজির হয়ে বা কারও মাধ্যমে তা সংগ্রহ করা যায়। উল্লেখ্য আবেদনপত্রের সাথে KYC ফর্ম প্রদত্ত হয়ে থাকে।

২. আবেদনপত্র পূরণ (Fil-up the application form): এ পর্যায়ে আবেদনপত্রটি ও KYC ফর্ম অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পূরণ করতে হয়। কারণ ঘষামাজা বা কাটাছেঁড় আবেদনপত্র হিসাব খোলার জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না। আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট কলামে আবেদনকারীর নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, মাতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা , পেশা, নমুনা স্বাক্ষর, প্রাথমিক জামানত ইত্যাদি তথ্য স্পষ্টভাবে লেখা আবশ্যক।

৩. পরিচয়করণ (Introduction): এ পর্যায়ে এসে আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে একজন পরিচয় প্রদানকারীর যথাযথ স্বাক্ষরসহ তার নাম এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে তার হিসাব নম্বর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। এ ছাড়া আবেদনকারীর ছবিও পরিচয়দানকারী সত্যায়িত করেন। নতুন শাখায় হিসাব খোলার সময় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এরূপ শনাক্তকারীর দায়িত্ব পালন করে।

৪. আবেদনপত্রের সাথে দলিলাদি সংযোজন (Enclosing documents with application form): অবস্থাভেদে আবেদনপত্রের সাথে নিম্নোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হয়:

i) ব্যক্তি আবেদনকারীর ক্ষেত্রে (In case of individual applicant): ব্যক্তির নামে কোনো হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হয়;

ক) আবেদনকারীর সদ্য তোলা এক বা একাধিক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
খ) জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি;
গ) মনোনয়ন কলামে উল্লেখ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ছবি ; ও ঘ) আবেদনকারী করদাতা হলে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর সনদের ফটোকপি (সঞ্চয়ী হিসাবের ক্ষেত্রে)

ii) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে (in case of organisation): কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হিসাব পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম এবং তার বা তাদের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর ইত্যাদি উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিষ্ঠানভেদে নিম্নোক্ত দলিলাদি উক্ত আবেদনপত্রের সাথে জমা দেয়া আবশ্যক: 

ক) একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স;
খ) অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ও চুক্তিপত্রের কপি। এরূপ চুক্তিপত্রে হিসাব পরিচালনাকারী ব্যক্তির বা ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ না থাকলে এ মর্মে অংশীদারদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুলিপি;
গ) কোম্পানির বেলায় ট্রেড লাইসেন্স, স্মারকলিপি, পরিমেল নিয়মাবলি, নদপত্র কার্যারম্ভের অনুমতিপত্রের সত্যায়িত কপি, পরিচালকমণ্ডলীর নামের তালিকা এবং হিসাব পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে কোম্পানির সভায় এ মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুলিপি;
ঘ) সমবায়ের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, সমবায়ের উপবিধি, নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের নামে তালিকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সমবায়ের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কপি; উল্লেখ্য কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যায় না। সেক্ষেত্রে চলতি হিসাব ঘুলতে হয়।

অবশ্য বর্তমানকালে ব্যাংকগুলো SND (Short notice deposit), STD ইত্যাদি নামে বিশেষ চলতি হিসাব খোলার সুযোগ দেয়। এতে গ্রাহক কিছুটা সুদ বা লাভ পায়। তবে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারে।

৫. আবেদনপত্র জমা দান (Submission of application form): অতঃপর আবেদনপত্র ও এর সাথে সংযুক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এরূপ আবেদনপত্র প্রাপ্তির পর ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে একটি হিসাব নং বরাদ্দ করেন এবং আদনকারীকে একটি নমুনা সন্তখত কার্ড প্রদান করেন। অবশ্য ব্যাংক ইচ্ছা করলে আবেদনপত্রের ফরমের সাথেও এর কার্ড সরবরাহ করতে পারে। সেক্ষেত্রে তা পুরণ করে আবেদনপত্রের সাথেই জমা দিতে হয়।

৬. নমুনা দস্তবতের কার্ড পূরণ (Fil-up the specimen signature card): হিসাব খোলার এ পর্যায়ে ব্যাংক যে নমুনা দস্তখতের কার্ড সরবরাহ করে তাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনেই নির্দিষ্ট কলামে আবেদনকারীর পুরো নাম ও নমুনা স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। ব্যাংক এ কার্ডটি অত্যন্ত যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে এবং সব সময়ই উত্থাপিত চেকের স্বাক্ষর উক্ত নমুনা স্বাক্ষরের সাথে মিলে কি না তা পরীক্ষাপূর্বক চেকের অর্থ প্রদান করে।

৭. জমা রািদ সংগ্রহ ও প্রাথমিক জমা প্রদান (Collecting deposit receipt and depositing primary deposit): হিসাব খোলার অনুমতি লাভের পর আবেদনকারীর কাজ হলো টাকা জমাদানের রসিদ সংগ্রহ করা এবং আবেদনপত্রে উল্লিখিত প্রাথমিক আমানতের অর্থ ব্যাংক কাউন্টারের মাধ্যমে তার নামে বরাদ্দকৃত হিসাবে জমা দেয়া। এরূপ প্রাথমিক আমানতের পরিমাণ হিসাবের ধরন ও ব্যাংকের প্রকৃতিভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে।

৮. চেক বই গ্রহণ (Receiving cheque book): প্রাথমিক জমা প্রদানের সাথে সাথে ব্যাংক হিসাব খোলা সমাপ্ত হয়। এরপর ব্যাংক গ্রাহকের নামে চেক বই ইস্যু করে। এ চেকের সাহায্যেই আমানতকারী পরবর্তীতে তার হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পায়। এরূপ চেক বই প্রাপ্তির পর চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাব খোলার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে। উল্লেখ্য, ব্যাংকের যে সকল শাখায় কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি সেখানে ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবের গ্রাহকদের পাস বই সরবরাহ করে।

স্থায়ী হিসাব খোলার পদ্ধতি | Method of opening fixed accounts


স্থায়ী হিসাব খোলার ক্ষেত্রে একজন আমানতকারীকে প্রথমেই নির্ধারণ করতে হয় তিনি কত মেয়াদের জন্য এরূপ হিসাব খুলবেন। এরূপ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তিতে যে সকল আনুষ্ঠানি পান করতে হয় তা নিম্নরূপ।

১. আবেদনপত্র সংগ্রহ (Collection of application form): স্থায়ী হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তি য প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে এরূপ হিসাব খোলার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয়। উল্লেখ্য বর্তমানে ব্যাংকগুলো স্থায়ী হিসাব খুলতে আলাদা ফর্ম ব্যবহার করে না এবং KYC of প্রদত্ত হয়।

২. আবেদনপত্র পূরণ ও জমাদান (Fil-up and submision of application form): এ পর্যায়ে আবেদনকারী যথাযথভাবে আবেদন ফরম ও KYC ফর্ম পূরণ করে নিজ ছবিসহ তা ব্যাংকে জমা দেয় । এতে ব্যক্তিগত তথ্যের সাথে টাকার পরিমাণ ও মেয়াদের উল্লেখ থাকে। প্রতিষ্ঠানের বেলায় এ মর্মে সিদ্ধান্তের কপিও জমা দিতে হয়। উল্লেখ্য, জমাকারী নিজ মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোনো মনোনীত ব্যক্তি (Nominee) - এর নাম আবেদনপত্রে উল্লেখ করলে তার ছবিও এতদসংগে জমা দিতে হয়। চলতি ও স্থায়ী হিসাবের মতো এক্ষেত্রেও পূর্বতন গ্রাহক বা ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচয়করণের প্রয়োজন পড়ে।

৩. অর্থ জমা ও স্থায়ী আমানত রসিদ সংগ্রহ (Depositing money and collecting fixed deposit receipt): ব্যাংক উক্ত আবেদন মঞ্জুর করলে আবেদনপত্রে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ ব্যাংক জমা দিতে হয়। অতঃপর ব্যাংক একটি স্থায়ী আমানত রসিদ (F.D.R) সরবরাহ করে। উক্ত রসিদে যে নম্বর থাকে তা আমানতকারীর হিসাব নম্বর হিসেবে গণ্য হয়। উক্ত রসিদে জমাকারীর নাম, টাকার পরিমাণ, জমার মেয়াদ ইত্যাদি লেখা থাকে।

পরিশেষে বলা যায়, হিসাবের প্রকৃতি অনুযায়ী এক এক হিসাবের জন্য হিসাব খোলার আনুষ্ঠানিকতা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ব্যাংকভেদেও এরূপ আনুষ্ঠানিকতাতে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আধুনিক ব্যাংকগুলো বর্তমানকালে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতা কমানোর যেমনি চেষ্টা করছে। তেমনি এক্ষেত্রে জালিয়াতি বা বিপদের সম্ভাবনা যাতে না ঘটে তাও পরিহারে সতর্ক থাকে।

বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম | Opening Bank Account for Different Persons and Organizations


বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম পালন করতে হয়। নিম্নে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার নিয়ম বর্ণনা করা হলো:

১. একক বা যৌথ ব্যক্তি (Individual /Joint individuals): একজন বা একাধিক ব্যক্তির নামে ব্যাংক খোলা যায়। চুক্তি সম্পাদন করতে পারে এমন এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাংক হিসাব খোলা যায়। যৌথ হিসাবের ধারক হিসাব খুলতে পারে। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, ব্যবসায়িক অংশীদার বা অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যৌথ ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে। যৌথ হিসাবের ধারকগণ প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবের ধারক বলে বিবেচিত হন। তাই তাদের মধ্য হতে যেকোনো ব্যক্তি অর্থ জমাদান ও উত্তোলন করতে পারেন।

২. অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান (Bank account in the name of non-profit organization): অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামেও ব্যাংক হিসাব খোলা যায়। ক্লাব, সমিতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে সাধারণত চলতি হিসাব খোলা হয়। তবে, অনেক ক্ষেত্রে এদের জন্য সঞ্চয়ী এমনকি স্থায়ী হিসাবও খোলা যায়। এ ধরনের হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিম্নোক্ত দলিলপত্র হিসাব খোলা যায়:
(i) নির্বাহী সদস্যবৃদ্ধের নাম
(ii) প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র
(iii) ব্যাংক হিসাব খোলার বিষয়ে নির্বাহী সদস্যদের সম্মতিপত্র
 
৩. একমালিকানা ব্যবসায় (Sole proprietorship business): একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খেলা যায়। একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে মালিকের সত্যায়িত ছবি, ফর্মের ট্রেড লাইসেন্স প্রভৃতি জমা দিতে হয়।

৪. অংশীদারি ব্যবসায় (Partnership business): অংশীদারি ব্যবসায়ের নামে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অংশীদারি ব্যাকে চুক্তিপত্রের ফটোকপি, ট্রেড লাইসেন্স, প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনাকারীর নাম ও নমুনা স্বাক্ষর প্রভৃতি প্রদান করতে হয়।

৫. যৌথমূলধনি কোম্পানি (Joint-stock company): যৌথমূলধনি কোম্পানির নামে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আবেদনপড়ে সাথে নিম্নোক্ত কাগজপত্র সংযোজন করতে হয়:

(i) ট্রেড লাইসেন্স
(ii) স্মারকলিপির সত্যায়িত ফটোকপি
(iii) পরিমেল নিয়মাবলির সত্যায়িত ফটোকপি
(iv) কার্যারয়ের অনুমতিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
(v) নিবন্ধনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
(vi) পরিচালকবৃন্দের সচিব এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের তালিকা
(vii) যে ব্যাংকে হিসাব খোলা হবে সেই ব্যাংকে হিসাব খোলার বিষয়ে নির্বাহীদের সম্মতিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং
(viii) কোম্পানির বিগত বছরের উদ্বৃত্তপত্রের ফটোকপি । 

৬. নাবালক (Minor): ১৮ বছরের কম বয়সীদের নাবালক হিসাবে বিচেনা করা হয়। আইনানুগভাবে নাবালক চুক্তি সম্পাদনের অযোগ্য হলেও নাবালকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা যায়। নাবালকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নাবালকের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার পূর্বে তার আইনানুগ অভিভাবকের হিসাব খুলতে হয়। অভিভাবকের পরিচিতির মাধ্যমে নাবালক তার নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে। নাবালক হিসাবগ্রহীতা ব্যাংকে টাকা জমাদান করতে পারে, কিন্তু সাবালক হওয়ার পূর্বে অর্থ উত্তোলন করতে পারে না।

৭. নিরক্ষর (Illiterate person): নিরক্ষর ব্যক্তির নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিরক্ষর ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের আবেদনপত্রে স্বাক্ষরের পরিবর্তে বামহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা টিপসই প্রদান করেন। নিরক্ষর ব্যক্তি ব্যাংক ম্যানেজারের সামনেই টিপসই প্রদান করেন এবং ম্যানেজার নিজেই স্বাক্ষর ও সিলমোহর প্রদান করে সেটিকে সত্যায়িত করেন। সাধারণভাবে নিরক্ষর ব্যক্তিকে চেক বই দেওয়া হয় না। নিরক্ষর ব্যক্তি ব্যাংকে এসে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দ্বারা চেক প্রস্তুত করিয়ে তাতে টিপসই দিয়ে অর্থ উত্তোলন করেন। 

পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আইনানুগভাবে এবং ব্যাংকিং সংস্কৃতি অনুযায়ী আলাদা আলাদা নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়।

ব্যাংকের হিসাব বন্ধ করার নিয়ম | Rules of Closing Bank Account


কোনো গ্রাহক তার চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাব বন্ধ করতে চাইলে তাকে ব্যাংকে গিয়ে পাস বই ও অব্যবহৃত চেক ফরমগুলো সমর্পণ করে হিসাব বন্ধের জন্য সাদা কাগজে দরখাস্ত করতে হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তখন গ্রাহকের হিসাব থেকে হিসাব বন্ধ সংক্রান্ত খরচ বাদ দিয়ে জমাকৃত বাকি টাকা গ্রাহককে ফেরত দেয়। টাকা ফেরত দেয়ার পর পরই ব্যাংকের খতিয়ানে হিসাবগ্রহীতার নাম কেটে দেয়া হয় এবং তার নামের পাশে হিসাব বন্ধ  কথাটি লিখে রাখা হয়। অবশ্য নিম্নোক্ত অবস্থায় ব্যাংক নিজেই গ্রাহকের হিসাব বন্ধ করে দিতে পারে:

১. গ্রাহক লিখিতভাবে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার জন্য ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দিলে, ব্যাংকার-গ্রাহকের হিসাব বন্ধ করে দেয়।
২. গ্রাহক দেউলিয়া বলে আদালত কর্তৃক ঘোষিত হলে
৩. গ্রাহক পাগল হয়ে গেলে
৪. দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাংক হিসাব অচল থাকলে, অর্থাৎ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রাহক লেনদেন না করলে ব্যাংকার গ্রাহককে অর্থ উত্তোলন করে নিয়ে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। গ্রাহক উক্ত অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিলে ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে যায়।
৫. ব্যাংকার কোনো কারণে গ্রাহককে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করলে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিতে পারে। গ্রাহক অপরাধী প্রমাণিত হলে; চেক, বিল বা অন্য যেকোনো ধরনের দলিলে স্বাক্ষর জাল করলে; জমাতিরিক্ত ঋণের শর্তাবলি পালন না করলে ব্যাংকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
৬. গ্রাহকের মৃত্যু ঘটলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে যায়।
৭. আদালত গারনিশি আদেশ দিলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে যায়।
৮. গ্রাহক তার হিসাবের অর্থ তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে স্বত্বার্পণের মাধ্যমে হস্তান্তর করালেও ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ইতি ঘটে।

পরিশেষে বলা যায়, আমানতকারীর সাথে ব্যাংকের চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা। উপর্যুক্ত উপায়েী ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হয়।
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url