অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্ব |Role of Commercial Bank in Economic Development

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যাংক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। প্রকৃতপক্ষে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেই দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। সেজন্য ব্যাংককে দেশের অর্থনীতির “Life blood” বলে। সুসংগঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্বকে নিচে আলোচনা করা হলো:

১. মূলধন গঠন (Capital formation): অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থার প্রধান অরনাম হচ্ছে মূলধন গঠন। মূলত ও আধুনিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পকারখানা স্থাপসে বড় অঙ্কের মূলধন প্রয়োজন। একক বা কঠিপর ব্যক্তির পক্ষে এ বিপুল পরিমাণ মূলধন সরবরাহ সম্ভব নয়। ব্যাংক জনগণের নিকট হতে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসাবে সপ্তার করে স্বা বৃহৎ মূলধন গঠন করে। বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় উক্ত তহবিল ঋণ হিসাবে বণ্টন কর মূলধনের যোগান দেয়।

২. শিল্প কৃষির উন্নয়ন (Industrial & agricultural development): কোনো দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের শিল্পোন্নয়নে অবদান রাখে। ব্যাংক মূলধন সংখ্যনে শিল্প মালিকনেরতে সহায়তা করে।

৩. অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ (Expansion of Internal & International Trade): বাণিজ্যিক কে অভ্যাসীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে ব্যাংক স্বপনদান, পরামর্শদান, অর্থ স্থানান্তর, মূল্য পরিশোধ প্রভৃতি কাজে ব্যবসায়ীদেরকে সহায়তা করে। একইভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাংকসমূহ প্রত্যয়পত্র ইস্যু, ঋণদান, মূল্য পরিশোধ, ফ্যাক্টরিং ও ফোরফেইটিং এর মাধ্যমে অর্থায়ন সরবরাহ করে। তার তথ্য সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান, বৈদেশিক মুদ্রা সপ্তাহ এবং আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যহুতাকারী হিসাবে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে।

৪. ঋণদান (Providing loan): বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের একটি অংশ তারণ্য হিসেবে রেখে দেয় এবং বাকি অংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঋণদান করেন।

৫. বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি (Development of mode of payment / exchange): বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থা বিনিময়ের জন্য দক্ষ বিনিময় মাধ্যম যেমন- চেক, বিনিময় বিল , ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার প্রভৃতি সৃষ্টি করে যা বিনিময়কে আরও গতিশীল করে।

৬. ঝুঁকি লাঘব (Risk amelioration): বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করে বড় ধরনের তহবিল গঠন করে। উক্ত তহবিগ ব্যাংক তার দূরদর্শিতা ও বিশেষজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন ফার্মে ও প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে বৈচিত্রায়ন অর্জিত হয় এবং ঝুঁকি হ্রাস পায় যা পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহ বৃদ্ধি করে।

৭. দক্ষ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Making efficient investment decision): বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ফার্ম বা প্রকল্প সম্বন্ধে তথ্য সপ্তাহ ও প্রক্রিয়াকরণ আবশ্যক। বাণিজ্যিক ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষে আদর্শ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়। যা একক ব্যক্তির পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। কাজেই ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থের আদর্শ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

৮. অবকাঠামোগত উন্নয়ন (Infrastructural development): যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবকাঠামোর গুরু অনেক। অবকাঠামো বলতে রাস্তাঘাট, রেলপথ, সমুদ্র নদী বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুতায়ন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থ প্রভৃতিকে বোঝায়। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাণিজ্যিক ব্যাংক এ সকল খাতে অর্থায়ন সরবরাহ করে। আবার অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেও এসকল খাতে বিনিয়োগ করে। 

৯. তহবিল (Transfer of funds): দেশে-বিদেশে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদনের জন্য অর্থ স্থানান্তর আবশ্যক। ব্যবস্থার মাধ্যমে খুবই স্বল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে দেশ-দেশান্তরে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। তাছাড়া বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরাও রেমিট্যাপে প্রেরণে ব্যাংক ব্যবহার সহযোগিতা নিয়ে থাকে। ফলে দেশ-বিদেশে লেনদেন সম্পাদন আরও সহজ সাধ্য হয়।

১০. উদ্যোক্তা উন্নয়ন (Entrepreneurship development): বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্যোক্তা সৃজন ও তাে দক্ষতার উন্নয়নে অবদান রাখে। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য মূলধন সরবরাহ করে। যা তাদেরকে উদ্যোগ গ্রহদে পরোক্ষভাবে উৎসাহও যোগায়। তাছাড়া ব্যাংক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে, তথ্য সপ্তাহ ও প্রক্রিয়াকরণ করে উদ্যোক্তাদের তা সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে যা তাদের পেশাদারিত্বের উন্নয়ন ঘটায়।

১১. সরকারকে অর্থায়ন (Financing government): বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারকে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সরবরাহ করে। তাছাড়া ব্যাংক তার আয় হতে সরকারকে কর পরিশোধ করে, যা সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করে । ফলে সরকারের পক্ষে আরও বেশি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন সহজ হয়।

১২. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি (Employment generation): ব্যাংক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। যেমন— কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে যার ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় যা বেকারত্ব লাঘবে সহায়তা করে। তাছাড়া ব্যাংক ব্যবস্থারও প্রতিটি স্তরেই দরকার জনবল, সেখানেও প্রচুর সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। 

১৩. আয় বৃদ্ধি (Enhancement of income): ব্যাংকের সহায়তায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের ফলেও ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি পায় যা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বর্ধিত আয় অনিবার্যভাবেই সার্বিক জীবনযাত্রার নান্নয়নে অবদান রাখে।

১৪. আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন (Materialization of monetary policy): আর্থিক নীতি বলতে মুদ্রা সরবরাহ, ঋণ সরবরাহ এবং বৈদেশিক বিনিময় সংক্রান্ত নীতিকে নির্দেশ করে। দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের জন্য দক্ষ আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক নীতি প্রণয়ন করে এবং দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সহায়তায় তা বাস্তবায়ন করে।

১৫. আর্থসামাজিক উদ্দেশ্য অর্জন (Fulfillment of socio-economic objectives): বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক, নৈতিক ও আদর্শিক উদ্দেশ্য অর্জনেও অবদান রাখে। কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণদান ও পরামর্শ প্রদান; শিক্ষা বিস্তারে স্কুল-কলেজে সহায়তা প্রদান; শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান; সমাজের আয় বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক উদ্দেশ্য অর্জনে বাণিজ্যিক ব্যাংক অবদান রাখে।

পরিশেষে বলা যায়, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক তার কার্যাবলি সম্প্রসারণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান|Role of Commercial Banks in Business of Bangladesh


ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো পুরোনো আমলের। মূলধনের ঘাটতিজনিত কারণে ব্যাপকভাবে শিল্পায়ন সম্ভব হয়নি। এত সমস্যা থাকার পরেও ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নয়ন, পুঁজি সংস্থান ও ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধান ভরসাস্থল।

ক. অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান (Contribution of commercial bank in internal treade): বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান তুলে ধরা হলো দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সম্প্রসারণেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। নিম্নে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বানিজ্যে

১. মূলধন গঠন (Capital formation): বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাহ্যিক অর্থায়নের সিংহভাগ সরবরাহ করে। বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে মূলধনের অপ্রতুলতা বিদ্যমান। যা শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। বাণিজ্যিক ব্যাংক এ সমস্যা সমাধানে অবদান রাখে। বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে বৃহদায়তন মূলধন গঠন করে এবং ঋণ হিসাবে তা সরবরাহ করে।

২. অর্থায়নে সহায়তা (Support in fund collection): বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজ হবিল হতে কর্ণদান ছাড়াও ব্যবসার প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাহ্যিক তহবিল সগ্রহে সহায়তা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক কোম্পানিসমূহকে শেয়ার, বন্ড, ঋণপত্র প্রভৃতি আর্থিক হাতিয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে সাহায্য করে।

৩. লেনদেনের নিষ্পত্তি (Settlement of transaction): ব্যবসায়ীদের নৈমিত্তিক অসংখ্য লেনদেন সম্পাদনে বাণিজ্যিক ব্যাংক সহায়তা করে। দেশে-বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেনাদার পাওনাদার ও অন্যান্য পক্ষসমূহের মধ্যকার দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ভূমিকা পালন করে।

৪. অর্থ স্থানান্তর (Fund transfer): বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ীদেরকে সে বিষয়ে সহায়তা প্রদান করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজস্ব শাখার মাধ্যমে সহজেই দেখে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। যে স্থানে ব্যাংকের নিজস্ব শাখা নেই, সেখানে সহযোগী ব্যাংক এর মাধ্যমেও অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অর্থ স্থানান্তরের কাজ নিমেষেই সম্পাদন করা যায়।

৫. বিনিময়ের সহজ মাধ্যম সৃষ্টি (Creation of easy mode of exchange): সাধারণভাবে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন করতে হয়। এই বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের লেনদেন ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বাণিজ্যিক ব্যাংক এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিরসনে সহায়তা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক চেক, বিনিময় বিল, ড্রাফট, হুন্ডি, ট্রাভেলার্স চেক, পে-অর্ডার প্রভৃতি সহজ ও নিরাপদ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করে। যা লেনদেন সম্পাদনে গতিশীলতা সঞ্চার করে।

৬. তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ এবং পরামর্শ প্রদান (Data collection, processing & supplying and advising): বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করে। তার আলোকে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ প্রদান করে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষে যথাযথ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাংক ব্যবসায়ীদের তথ্যাদি সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান করে।

৭. অর্থ ও মূল্যবান দলিলপত্রের সংরক্ষণ (Protection of cash & valuable documents): ব্যাংক ব্যবসায়ীদের উদ্বৃত্ত নান অর্থ এবং ব্যবসায় সম্পর্কিত মূল্যবান দলিলপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

৮. প্রতিনিধিত্ব (Representation): বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসাবে ভূমিকা পালন করে। এতে তাদের কার্যভার লাঘব হয়। প্রতিনিধি হিসাবে ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন সম্পাদন, দেনা পরিশোধ, পাওনা আদায়, তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তি সম্পাদন প্রভৃতি কাজ করে। যা ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

খ  বৈদেশিক বাণিজ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান (Contribution of commercial bank in foreign trade): বর্তমান বিশ্বে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহায়তা ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় অসম্ভব। বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যেও ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে নিম্নোক্ত অবদান রাখে:

১. প্রত্যয়পত্র ইস্যু (Issue of letter of credit): বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাংকের সর্বাপেক্ষা বড় অবদান হচ্ছে প্রত্যয়পত্র ইস্যু। আমদানিকারক-রপ্তানিকারক ভিন্ন ভিন্ন দেশের হওয়ায় তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারে না। বিশেষত, রপ্তানিকারক পণ্য প্রেরণের পর আদৌ তার মূল্য পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। বাণিজ্যিক ব্যাকে প্রত্যয়পত্র ইস্যুর মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে অবদান রাখে। প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক রপ্তানিকারককে এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, আমদানিকারক যথাসময়ে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক তা পরিশো করবে। এতে রপ্তানিকারক নিশ্চিন্তে পণ্য প্রেরণ করতে পারে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়।

২. ঋণদান (Providing Advances): বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঋণদান করে। এতে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের ব্যবসায় পরিচালনায় অর্থের যোগান নিশ্চিত হয়। ফলে তারা যথাযথভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রত্যয়পত্র ইস্যু, বিলে স্বীকৃতি প্রদান, আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে ঋণ প্রদান চ প্রভৃতির মাধ্যমে আমদানিকারককে অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করে। একইভাবে প্রাপ্য বিল, প্রত্যয়পত্র প্রভৃতি জামানতের বিপরীতে ঋণদান করে রপ্তানিকারককে অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করে।

৩. বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ (Collection of foreign currency): বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন সম্পাদনে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে আমদানিকারককে সহায়তা করে।

৪. আনুষ্ঠানিকতা পালন (Compliance with formalities): বাণিজ্যিক ব্যাংক আমদানিকারক ও রপ্তানিকারককে বৈদেশিক স বাণিজ্য সম্পাদনে ব্যবসায়িক ও আইনানুগ আনুষ্ঠানিকতা পালনে সহায়তা করে। আমদানি-রপ্তানির স্বার্থে পণ্যের সাথে যে সকল দলিলপত্র ব্যবহৃত হয় তা পরস্পরের মধ্যে হস্তান্তরেও বাণিজ্যিক ব্যাংক অবদান রাখে।

৫. প্রতিনিধিত্ব (Representation): বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেন সম্পাদনে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারকের বিল সংগ্রহ ও স্বীকৃতি প্রদান এবং আমদানিকৃত পণ্যের সাথে সম্পর্কিত দলিলপত্রাদি সংগ্রহ করে। একইভাবে রপ্তানিকারকের ব্যাংক রপ্তানিকারকের প্রস্তুতকৃত দলিলপত্র আমদানিকারকের ব্যাংকের নিকট প্রেরণ, প্রত্যয়পত্র ও অন্যান্য দলিলপত্র গ্রহণ এবং পাওনা আদায়ে রপ্তানিকারকের প্রতিনিধিত্ব করে।

৬. তথ্যাদি সংগ্রহ ও উপদেশ প্রদান (Data collection & advising): বাণিজ্যিক ব্যাংক আমদানি ও রপ্তানিকারককে বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে মূল্যবান তথ্যাদি সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ প্রদান করে।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা অপরিহার্য। গ্রাহকের নিরাপত্তা প্রদানের-স্বার্থে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন সহজ করার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া লেনদেন নিষ্পত্তি ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিকল্প হয় না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url