একক ব্যাংক ব্যবস্থা‌| Concept of Unit Banking System

একক ব্যাংক ব্যবস্থা‌ কি |What is Unit Banking System?

সাধারণ অর্থের যে ব্যাংকের কোনো শাখা থাকে না‌‌ বা একটিমাত্র অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে একক ব্যাংক বলে।

ব্যাপক অর্থে, কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কোনো ব্যাংক একটিমাত্র অফিস স্থাপনের মাধ্যমে তার কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাকে একক ব্যাংক বলে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং আইনে একক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একক ব্যাংক অনেক জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত। 

নিম্নে একক ব্যাংকের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো: অধ্যাপক Sayer's- এর মতে,

The unit banking system is the unit or serving its small local community.

একক ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেটা একটি একক অফিসের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে৷

P.S. Rose- এর মতে,

Unit banks are banks that sell their service through one full service office.

অর্থাৎ একক ব্যাংক হলো সেই ব্যাংকগুলো যারা তাদের সেবা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অফিস থেকে প্রদান করে থাকে। উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে শুধু একটি পর্ণ অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হলে, সেই ব্যাংককে একক ব্যাংক বলে।
একক ব্যাংক ব্যবস্থা‌

একক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য | Features of unit banking


একক ব্যাংকিং এর কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে। একক ব্যাংক ব্যবস্থায় যেসকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা হলো:

১. একক প্রতিষ্ঠান (Single organization): একক ব্যাংকের যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম একটিমাত্র অফিসের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। তবে একক ব্যাংকের সীমিত পরিসরে একই শহরের মধ্যে কতিপয় শাখা থাকতেও পারে। সেক্ষেত্রেও সমস্ত নিয়শ্রণ ব্যবস্থা মূল অফিসেই সীমাবদ্ধ থাকে।

২. সীমিত কার্যক্ষেত্র (Limited service zone): একক ব্যাংক ছোটো শহর অথবা বৃহৎ শহরের সীমিত এলাকার মধ্যেই ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। তবে সহযোগী ব্যাংকের মাধ্যমে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘর ও ব্যাংকারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলে দেশের অন্যস্থানেও সীমিত ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে পারে।

৩. সীমিত মূলধন (Limited capital): একক ব্যাংক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠান বলে এর খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া একক ব্যাংক একমালিকানা সংগঠন হিসাবে গড়ে ওঠে। ফলে বড়ো ধরনের মূলধন সংগ্রহ সম্ভব হয় না।

8. কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ (Centralized regulation): একক ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম একটিমাত্র অফিসের মধ্যেই যেমন সীমাবদ্ধ তেমনি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতেই এর নিয়ন্ত্রণ ভার ন্যস্ত থাকে।

৫. ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠান (Small scale organization): সীমিত এলাকায় ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠান হিসাবেই একক ব্যাংক গড়ে ওঠে। পরিশেষে বলা যায়, একক ব্যাংকের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটিমাত্র অফিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান। এছাড়া একক ব্যাংক ক্ষুদ্রায়তন, সীমিত মূলধন সম্পন্ন হয়ে থাকে। একক ব্যাংকের উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি পরিলক্ষিত হয়।

একক ব্যাংকের সুবিধা | Advantages of unit banking


একক ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনসাধারণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত হলেও এর অনেকগুলো সুবিধাজনক দিক বিদ্যমান। এই সুবিধাসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. দক্ষ ব্যবস্থাপনা (Efficient management): একক ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম সীমিত এলাকা ও একটিমাত্র অফিসে সম্পন্ন হওয়ার কারণে এ ধরনের ব্যাংক ব্যবস্থায় দক্ষ ব্যবস্থাপনা বিরাজ করে।

২. স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সেবা (Service customized to local needs): একক ব্যাংক ক্ষুদ্র এলাকার জনগণের জন্য ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকে। এতে ঐ এলাকার মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী একক ব্যাংক উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে।

৩. ব্যাংকার-গ্রাহক নিবিড় সম্পর্ক (Close relation between bank & client): একক ব্যাংকের কার্যপরিধি ও গ্রাহক সংখ্য কম হওয়ায় ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

৪. প্রতিযোগিতা (Competition): একক ব্যাংক ক্ষুদ্রায়তন ব্যাংক বলে এর মধ্যে কখনোই একচেটিয়া প্রবণতা গড়ে ওঠে না।

৫. নিবিড় নিয়ন্ত্রণ (Close regulation): এ ধরনের ব্যাংকে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঝুঁকি কম থাকে কারণ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিবিড় নিয়ন্ত্রণ থাকে।

৬. স্থানীয় উন্নয়ন (Local development): একক ব্যাংক স্থানীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে অত্যন্ত পারদর্শী।

৭. আঞ্চলিক বৈবম্য দূর (Removal of regional disparity): অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে এ ধরনের ব্যাংকের অবদান অনেক। পরিশেষে বলা যায়, একক ব্যাক ক্ষুদ্রায়তন হলেও এতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকিং সেবাদান, নিবিড় ব্যাংকার - গ্রাহক সম্পর্কের সুবিধা পাওয়া যায়। একক ব্যাংকের উপর্যুক্ত সুবিধাজনক দিক বিদ্যমান।

একক ব্যাংকের অসুবিধা | Disadvantages of unit banking


সীমিত মূলধনসম্পন্ন ক্ষুদ্রায়তনের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় একক ব্যাংকের বেশ কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। এই অসুবিধাসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. সীমিত সম্পদ (Limited assets): সীমিত সম্পদ একক ব্যাংকের আরও একটি বড়ো অসুবিধা। কারণ সীমিত তহবিলের জন্য এ ধরনের ব্যাংক বৃহত্তর প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়।

২. নগরকেন্দ্রীকতা (Urban centralization): একক ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত নগরকেন্দ্রিক। ফলে প্রার্ত্তিক অঞ্চলের উন্নয়নে এ ধরনের ব্যাংক অবদান রাখে না। এতে আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।

৩. অধিক ব্যয় (Bigger average expenditures): একক ব্যাংকের কার্যক্রমের সংখ্যা ও পরিমাণ কম বলে বৃহৎ সেবাদানের মাধ্যমে গড় ব্যয় হ্রাসের (Economies of large scale) সুযোগ পায় না।

৪. বিশেষায়নের অভাব (Lack of specialization): একক ব্যাংকে কর্মবিভাজন (Division) ও বিশেষায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয় ফলে দক্ষতার অভাব দেখা দেয়। 

৫. সুদের হারে বৈষম্য (Disparity in interest rate): একক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন ব্যাংকে সুদের হারে বৈষম্য বিদ্যমান থাকে।

৬. সমন্বয়হীনতা (Lack of co-ordination): একক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অসংখ্য ব্যাংক থাকে এবং তাদের অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতা দেখা যায়।

৭. সীমিত কার্যক্ষেত্র (Limited working area): এ ধরনের ব্যাংকের কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে বলে এ ধরনের ব্যাংকের পক্ষে বিনিয়োগের বৈচিত্রায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

৮. অনুচিত প্রতিযোগিতা (Competition): একক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংকসমূহের মধ্যে বিরূপ ও অনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।

৯. স্থানীয় চাপ (Local pressure): একক ব্যাংকের ওপর স্থানীয় চাপ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেশি থাকে যা অনেক সময় এ ধরনের ব্যাংকের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে। পরিশেষে বলা যায়, একক ব্যাংক বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করলেও এর অসুবিধাজনক দিকও কম নয়। একক ব্যাংক ব্যবস্থার উপর্যুক্ত অসুবিধাসমূহ পরিলক্ষিত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url