ব্যবসায়ের ধারণা | Concept of Business

ব্যবসায়ের কি |What is Business?

‘ব্যবসায়’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Business এর অর্থ হলো কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা টি ব্যবসার (State of being busy)। সাধারণত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে উৎপাদন, বন্টন ও এর সহায়ক যাবতীয় করতে বৈধভাবে বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলা হয়। এ উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে এবং বণ্টন শা সংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে করা হয়।

পরিবারের সদস্যদের জন্য হাঁস - মুরগি পালন বা সবজি চাষ, মানসিক আনন্দ পাওয়ার জন্য গান-বাজনা করাতে ব্যবসায় বলা যায় না। কারণ, এসব কাজের সাথে মুনাফা অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কেউ এ কাজগুলো বৃদ্ধি নিয়ে মুনাফার আশায় করলে তা ব্যবসায় বলে বিবেচিত হবে। আর এ কাজগুলো অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনে বৈধ হতে হবে। এছাড়াও এতে উচিত-অনুচিত বিবেচনা করে সমাজের সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রফেসর পিউস হেনরি হ্যানি (Lewis Henry Haney) বলেছেন,
পণ্য কয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পদ তৈরি বা অর্জনের মাননীয় কালকে ব্যবসায় বলা যায়।

উপরের আলোচনার আলোকে ব্যবসায়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখা যায় তা হলো:
১. মানুষের চাহিদা ও অভাব পূরণের লক্ষ্যে ব্যবসায় করা হয়।
২. এতে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য থাকে।
৩. একে অবশ্যই দেশীয় আইনে বৈধ হতে হয়।
৪. এতে নৈতিকতা ও সেবার মনোভাব থাকতে হয়।
৫. এর মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ তৈরি হয়।
ব্যবসায়ের ধারণা

ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশ | Evolution of Business


মানব সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নের সাথে ব্যবসায়েরও প্রচলন ও সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অভাব বা চাহিদা মেটানোর জন্য পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিনিময় করত। এ থেকেই ব্যবসায়ের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তার বিস্তার হতে থাকে। ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের এ ধারাকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক এ তিন পর্যায়ে ভাগ করা যায়।

১. প্রাচীন যুগ (Ancient age): সভ্যতার আদিম স্তরে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা বন- বাদাড়ে ঘুরে ফলমূল সংগ্রহ এবং পশু ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। এরপর তারা পশুপালন ও কৃষিকাজ শুরু করে। উৎপাদিত দ্রব্যাদি তারা একে অপরের সাথে বিনিময় করত। এটি বিনিময় প্রথা (Barter System) নামে পরিচিত। এ প্রথার সীমাবদ্ধতা দূর করতে মানুষ দুষ্প্রাপ্য শামুক-ঝিনুক, স্বর্ণ-রৌপ্য, কড়ি-পাথর ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার ব্যবহার শুরু করে। এ সময়ে পণ্যদ্রব্য পারিবারিক প্রয়োজনেই উৎপাদন করা হতো। এতে অনেকে উৎপাদনে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে। মূলত এ সময়েই ব্যবসায়ের প্রচলন হয়।

২. মধ্য যুগ (Middle age): এ সময় মানুষ  হয়ে বসবাস শুরু করে। তাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হয় ও চিন্তা- চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। এ সময় সমাজে কামার, কুমার, তাঁতি , স্বর্ণকার প্রভৃতি শ্রেণির উদ্ভব হয়। গড়ে উঠতে থাকে রাস্তাঘাট, বাজার ও শহর। সর্বজন স্বীকৃত মাধ্যম হিসেবে অর্থ ও মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন হয় এ সময়েই। ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক কাজগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনেরও উদ্ভব হতে থাকে। এ যুগেই ব্যবসায় সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। একমালিকানা, অংশীদারি ব্যবসায়ী সংঘ (Merchant Guild), কারিগরি সংঘ (Craft Guild) ও উৎপাদক সংঘ (Producer Guild) এ যুগেই উদ্ভব হয়। এ সময় একক বিক্রেতা ( Monopoly) ও উৎপাদনকারীরা বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতেন।

৩. আধুনিক যুগ (Modern age): আধুনিক ব্যবসায়ের শুরু হয় মূলত ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের (১৭৫০-১৮৫০) সময় থেকে। তখন প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে শিল্প - কারখানায় শুরু হয় বিপুল উৎপাদন। গড়ে ওঠে নতুন নতুন কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ব্যাংক ও বিমা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, এটিএম কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রচলন হয়। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধ্যান- ধারণার উদ্ভাবন ব্যবসায়কে আরও সহজ ও প্রসারিত করছে। কোম্পানি সংগঠন, ব্যবসায় জোট, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় ও যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বের সব জায়গায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। ক্রেতা - ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যবসায় সংগঠনগুলো নিচ্ছে বিভিন্ন কৌশল। বিভিন্ন ধরনের জোট ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এর তত্ত্বাবধানে সারা বিশ্বে ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url