স্থায়ী ব্যাংক হিসাবের ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা

স্থায়ী ব্যাংক হিসাব কি| What is Fixed Bank Account 


যে হিসাবে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অর্থ জমা রাখা হয় এবং এর মধ্যে নিয়মানুযায়ী অর্থ উত্তোলন করা যায় না তাকে স্থায়ী হিসাব বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে হিসাবে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অর্থ আমানত হিসাবে জমা রাখা হয় এবং এর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী অর্থ উত্তোলন করা যায় না তাকে স্থায়ী হিসাব বলে। অর্থাৎ স্থায়ী হিসাবের টাকা মেয়াদ শেষে লাভসহ উত্তোলন করা যায়। এই ধরনের হিসাবে তুলনামূলকভাবে বেশি সুদ প্রদান করা হয়। স্থায়ী হিসাবকে মেয়াদি আমানত হিসাবও বলা হয়। শেখর এর মতে,
আমানত হিসাব হলো এমন হিসাব যেখানে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর বা যথাযথ নোটিস প্রদানের পর জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়া হয়।

উপরোক্ত সংজ্ঞা অনুসারে জমার মেয়াদ নির্দিষ্ট না করে কতদিন মেয়াদের নোটিসে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করা যাবে এ মর্মেও স্থায়ী হিসাব খোলা হতে পারে । সেক্ষেত্রে নোটিসের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে সুদের হার নির্দিষ্ট করা হয়। একে বিশেষ মেয়াদি হিসার (STD A / c) - ও বলা হয়ে থাকে। সাধারণ স্থায়ী হিসাব অপেক্ষা এরূপ হিসাবে স্বাভাবিকভাবে সুদের হার কম হয়।

স্থায়ী ব্যাংক হিসাবের বৈশিষ্ট্য | Features of fixed Bank account


১. নির্দিষ্ট একটি ফরম বা চুক্তিপত্র পূরণ করে এই হিসাব খোলা হয়।

২. যে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে এই হিসাব খোলা হয় তা উত্তীর্ণ হলে চুক্তিপত্রটি নবায়ন করা যায়।

৩. মেয়াদ পূর্তির পূর্বে এরূপ হিসাবের অর্থ উঠানো হলে সেক্ষেত্রে ব্যাংক সাধারণত কোনো সুদ বা লাভ প্রদান করে না।
৪. প্রধানত বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়ার জন্যই স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা হয়। স্থায়ী আমানতের ওপর ব্যাংক অধিক হারে সুদ প্রদান করে।

৫. এ ধরনের হিসাবে শুধু একবারই অর্থ জমা করা যায়। পুনরায় অর্থ জমা করতে চাইলে নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে তারপরে অর্থ জমা করতে হয়।

৬. শুধু মেয়াদ শেষেই আমানতকৃত অর্থ ও অর্জিত সুদ উত্তোলন করা যায়। তবে বিশেষ ধরনের স্থায়ী হিসাবে স্বল্প সময়ের নোটিশে আমানতকৃত অর্থ উত্তোলন করা যায়। 

৭. এ ধরনের হিসাব মূলত একটি মেয়াদি চুক্তি। স্থায়ী আমানতের মেয়াদ ১৫ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

৮. স্থায়ী হিসাবের ধারককে ব্যাংক স্থায়ী আমানত রশিদ (Fixed Deposit Receipt -FDR) প্রদান করা হয়। মেয়াদ শেষে আমানতকারী স্থায়ী আমানত রশিদ ফেরত দিয়ে সুদাসলের অর্থ উত্তোলন করে।

৯. স্থায়ী আমানতকারীকে চেক বা পাশ বই প্রদান করা হয় না।

১০. স্থায়ী আমানতের বিপরীতে আমানতকারী ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। যেখানে আমানতকৃত অর্থ জামানত হিসাবে ভূমিকা পালন করে।

১১. টাকা জমার যে রসিদটি দেয়া হয় তা হস্তান্তরের অযোগ্য। মেয়াদান্তে টাকা ওঠানোর জন্য এই রসিদটির প্রয়োজন পড়ে।

১২. এই হিসাবের টাকা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে বলে ব্যাংক গ্রাহককে উচ্চহারে সুদ বা লাভ প্রদান করে।

১৩. এই হিসাবের স্থায়ী জমার রসিদ (F.D.R) ঋণের জামানত হিসেবে গ্রহণ করে ব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করে থাকে।

১৪. এরূপ হিসাবের ক্ষেত্রে মেয়াদকাল যত বেশি হয় সুদ বা লাভের হার ততই বাড়ে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের নিয়মও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।
স্থায়ী ব্যাংক হিসাব কি

স্থায়ী ব্যাংক হিসাবের সুবিধা | Advantages of fixed Bank account


১. আয়ের সুযোগ: এই হিসাবের গ্রাহকগণ ব্যাংক থেকে অধিক সুদ বা লাভ প্রাপ্ত হয়। যাদের নিকট অলস অর্থ থাকে তারা এ ধরনের হিসাব খুলে ঝুঁকিবিহীন আয়ের সুযোগ লাভ করে।

২. ঋণ সুবিধা: এ ধরনের হিসাবগ্রহীতা তার স্থায়ী আমানত রসিদ (F.D.R) জমা রেখে যে কোন সময় এর মূল্যের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ ঋণ নিতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ গ্রহণে এই রসিদকে জামানত হিসাবেও ব্যবহার করতে পারে।

৩. মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ: সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা থাকলে সহজে তা উঠানোর সুযোগ থাকায় অনেক সময়ই গ্রাহক টাকা উঠিয়ে ফেলে। কিন্তু কিছু সঞ্চয় জমা হলেই যদি তা স্থায়ী হিসাবে স্থানান্তর করা হয় তবে তা মূলধন সৃষ্টিতে ও পরবর্তীতে বিনিয়োগে খুবই সহায়ক হয়ে থাকে।

৪. স্থায়ী হিসাবের আমানতকৃত অর্থের ওপর অধিক সুদ প্রদান করে অর্থাৎ এ ধরনের হিসাবে বিনিয়োগের উত্তম সুবিধা পাওয়া যায়।

৫. স্থায়ী আমানত হিসাব দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করে।

৫. স্থায়ী আমানতকারী ব্যাংক হতে আমানতকৃত অর্থের বিপরীতে ঋণ সুবিধা পেতে পারেন।

৬. ব্যাংক মূলত স্থায়ী আমানতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ধরনের আমানত তাই দেশের অর্থনীতিতে মূলধন সরবরাহের অবদান রাখে। 

সুতরাং বলা যায়, আমানতকারীগণ বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সুবিধা পাওয়ার জন্য যে হিসাব খোলে তাকে স্থায়ী বা মেয়াদি হিসাব বলে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url