হুকুম চেকের ধারণা, বৈশিষ্ট্য সুবিধা এবং অসুবিধা | Concept of Order Cheque

হুকুম চেক কি| What is Order Cheque?


যে চেকে প্রাপকের নামের পরে “অথবা আদেশ অনুসারে” (Or order) কথাটি লিখিত থাকে তাকে আদেশ বা হুকুম চেক বলে। আদেশ চেকের উপর প্রাপকের কলামে যার নাম লিখিত থাকে ব্যাংক শুধুমাত্র তাকে বা তার লিখিত অনুমোদনক্রমে অন্য ব্যক্তিকে টাকা দিতে বাধ্য থাকে। উক্ত চেকের টাকা গ্রহণ করার আগে প্রাপককে বা অনুমোদন বলে প্রাপককে ব্যাংকের নিকট গ্রহণযোগ্য পরিচিতি প্রদান করতে হয়। সাধারণত তিন শ্রেণির ব্যক্তি পরিচিতি প্রাদানের ক্ষেত্রে যোগ্য বিবেচিত হয়:

(ক) ব্যাংকের কোনো গ্রাহক,
(খ) ব্যাংক কর্মচারী এবং
(গ) এলাকার কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি।

প্রাপকের সই সনাক্ত করে সাধারণত এরূপ পরিচিতি প্রদান করা হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু হওয়ার পর পরিচিতির বিষয়টি কিছুটা সহজ হয়েছে। আদেশ চেক হস্তান্তর করতে হলে চেকের পিছনে হস্তান্তর স্বাক্ষর থাকতে হয়। তাকে অনুমোদন বা পৃষ্ঠাঙ্কন বলে। ১৮৮১ সালের হস্তাত্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৪ নং ধারা অনুযায়ী আদেশ চেক শুধুমাত্র যথাযথ অনুমোদন (indorsement) ও অর্পণ (delivery) এর মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায়। সেক্ষেত্রে অনুমোদনবলে প্রাপকের পরিচিতি গ্রহণ করার পর চেকটি পরিশোধিত হয়। দাগবিহীন আদেশ চেক স্বত্বান্তরগ্রহীতা (Indorsee) ভাঙ্গানোর জন্য ব্যাংকে হাজির করলে ব্যাংককে সাবধানতার সাথে দেখতে হবে যে, স্বত্বান্তর যথার্থ কি না।

হুকুম চেকের বেশিষ্ট্য| Features of Order Cheque


১. আদেশ চেকে প্রাপকের নামের পরে “অথবা আদেশ অনুসারে” (Or order ) শব্দদ্বয় লেখা থাকে।

২. চেকের উপর যার নাম লিখিত থাকে, ব্যাংক শুধু তাকেই টাকা দিতে বাধ্য থাকে।

৩. এই চেক যথানিয়মে অনুমোদন বা পৃষ্ঠাঙ্কনের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায়।

৪. এই চেক স্বত্বান্তরিত হওয়ার পর তা ব্যাংকে হাজির করা হলে টাকা পরিশোধ করার পূর্বে ব্যাংককে দেখতে হয় যে, স্বত্বান্তর যথার্থ কি না।

৫. এই চেককে বাহক চেকে রূপান্তরিত করতে হলে চেকের পিছনে আদেষ্টার দস্তখতের প্রয়োজন হয়।

৬. হুকুম চেক , বাহক চেক অপেক্ষা অধিকতর নিরাপদ।

৭. এ ধরনের চেকে দাগকেটে দাগকাটা চেকে পরিণত করা যায়।
হুকুম চেকের ধারণা, বৈশিষ্ট্য সুবিধা এবং অসুবিধা

হুকুম চেকের সুবিধা | Advantages of Order Cheque


১. অধিক নিরাপদ (More safe): এরূপ চেকের অর্থ যে কেউ ব্যাংক থেকে উঠাতে পারে না। শুধুমাত্র প্রাপক বা তার যথাযথ আদেশ বলে বা পৃষ্ঠাঙ্কনের মাধ্যমে প্রাপ্ত চেকের অধিকারীই এর অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তাই এই চেক তুলনামূলক বিচারে অধিক নিরাপদ।

২. নির্দিষ্ট ব্যক্তির অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা (Emsuring pay to particular person): এক্ষেত্রে আমানতকারী যেই ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করতে চান তার নাম প্রাপকের নামের স্থলে লিখে তার অর্থ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। একইভাবে প্রাপক কর্তৃক পৃষ্ঠাঙ্কনের ক্ষেত্রে হস্তান্তরগ্রহীতার নাম লিখে তাকে হস্তান্তরের মাধ্যমেও তার অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চত করা যায়।

হুকুম চেকের অসুবিধা| Disadvantages of Order Cheque


১. লিখতে সমস্যা (Problem in writing): হুকুম চেক লেখার ক্ষেত্রে প্রাপকের নামোল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে। এরূপ প্রাপক যদি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান হয় তবে সেক্ষেত্রে সরাসরি চেকের অর্থ কাউন্টার থেকে সংগ্রহে ঝামেলা দেখা দেয়।

২. অর্থ সংগ্রহে সমস্যা (Problem in collecting money): হুকুম চেকের অর্থ যে কেউ সংগ্রহ করতে পারে না; প্রাপকের নামের স্থলে যার নাম থাকে তাকেই ব্যাংকে যেয়ে চেকের অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষ পৃষ্ঠাঙ্কনের মাধ্যমে কাউকে অর্পণ করা হলে অর্থ সংগ্রহে তাকেও ব্যাংক কাউন্টারে হাজির হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

৩. হস্তান্তরে সমস্যা (Problem in negotiation): বাহকের চেক যেভাবে শুধুমাত্র অর্পণের দ্বারা হস্তান্তর করা যায় এক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। চেকের পিছনে প্রাপক বা অনুমোদন বলে প্রাপককে স্বাক্ষর করতে হয়। অনুমোদন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে বিধায় তাও হস্তান্তরকালে ভাবতে হয়।

৪. প্রাপক নিশ্চিতকরণে সমস্যা (Problem in ensuring payee): চেকের আদিষ্ট বা আমানতকারীর স্বাক্ষর ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকায় তার যথার্থতা যাচাই করা যায়। কিন্তু প্রাপকের বা অনুমোদন বলে প্রাপক যথার্থ কি না তা ব্যাংকের পক্ষে যাচাই করা কষ্টকর। তাই তা ব্যাংক কর্মীদের অহেতুক বিড়ম্বনায় ফেলে।

পরিশেষে বলা যায়, যেই প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে হুকুম চেকের উদ্ভব ঘটেছিল দাগকাটা চেকের ব্যাপক প্রচলনের কারণে সেই প্রেক্ষাপট এখন নেই বললেই চলে। এ ছাড়া উপরোক্ত সমস্যার কারণে এখন এ ধরনের চেকের ব্যবহার কার্যত লোপ পেয়েছে।

আরো পড়ুন: বাহক চেক কি?
আরো পড়ুন: দাগ কাটা চেক কি?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url