ঋণ বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে ও কার্যাবলি | Credit Analysis

বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ আমানত হিসাবে সংগৃহীত অর্থই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে ঋণ হিসাবে প্রদান করে মুনাফা অর্জন করে। কিন্তু ঋণের অর্থ ব্যাংক যদি যথাসময়ে তা আদায় করতে না পারে অথবা আদায় করা আদৌ সম্ভব না হয় তবে ব্যাংক মুনাফা অর্জন করতে পারে না। তাছাড়া ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করতে না পারলেও আমানতকারীদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।

সে কারণে ঋণদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। ব্যাংক ঋণদানের সময় ব্যাংক সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার আচার আচরণ; ঋণগ্রহীতা যে ফার্মে বা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করবে তার অবস্থা; ফার্মটি যে শিল্পভুক্ত সে শিল্পের অবস্থা; দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি; ঝুঁকি ও মুনাফার সম্ভাব্যতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে; যা ঋণ বিশ্লেষণ নামে পরিচিত।

ঋণ বিশ্লেষণ উদ্দেশ্য | Objectives of Credit Analysis


ব্যাংক নিম্নোক্ত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ঋণ বিশ্লেষণ করে:
১. ফার্ম ও শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ঋণের নিরাপত্তার ওপর তার প্রভাব।
২. ফার্মের আর্থিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আর্থিক সামর্থ্য ও দুর্বলতা উদ্ঘাটন ও ঋণের নিরাত্তার ওপর তার প্রভাব।
৩. ফর্মের অর্থ প্রবাহ ও ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার পূর্বাভাস।
৪. ঋণের সার্বিক ঝুঁকি পরিমাপ ও মূল্যায়ন।
৫. যথার্থ ঋণদান সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

পরিশেষে বলা যায়, ঋণ বিশ্লেষণ হচ্ছে ঋণের অর্থ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা মূল্যায়ন। ঋণ বিশ্লেষণ ব্যাংকসমূহকে যথাযথ ঋণ দান সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
ঋণ বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে ও কার্যাবলি

ঋণ বিশ্লেষণের কার্যাবলি Factors of Credit Analysis


ঋণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঋণের আদায়যোগ্যতা ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হয়। এজন্য ঋণ বিশ্লেষণে নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়:

১. ঋণগ্রহীতার অবস্থা (Condition of debtor): ঋণগ্রহীতার সার্বিক অবস্থা জানা ঋণ বিশ্লেষণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার চরিত্র, সামর্থ্য, মূলধন, আর্থিক অসচ্ছলতা ও দক্ষতা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়গুলোতে সন্তুষ্ট হলেই ঋণদানের অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।

২. ফার্ম ও প্রকল্প বিবেচনা (Considering firm on project): ঋণগ্রহীতা ঋণের অর্থ যে ফার্মে বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তার সার্বিক অবস্থাও বিবেচনা করা আবশ্যক। যে ফর্মে বা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করা হবে তার অর্থ প্রবাহের ধরন, মেয়াদ, মুনাফা অর্জনের সম্ভাব্যতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য। কারণ ফার্ম বা প্রকল্প পর্যাপ্ত অর্থ প্রবাহ অর্জন করতে পারলে তা ঋণের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অন্যথায় তা ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

৩. জামানত বিবেচনা (Considering security): ঋণের নিরাপত্তার স্বার্থে সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতা যদি জামানত বা নিশ্চয়তা প্রদান করে তবে তার গ্রহণযোগ্যতা, সম্পদের মালিকানা দখলযোগ্যতা, মূল্য, বিক্রয়যোগ্যতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় আনা আবশ্যক। উত্তম জামানত ঋণের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৪. শিল্প বিবেচনা (Considering industry): ফার্মটি যে শিল্পভুক্ত সে শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। কোনো শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভালো হলে ঐ শিল্পভুক্ত ফার্মগুলোর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভালো হওয়ার আশা করা যায়। কাজেই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও পরোক্ষভাবে ঋণের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে।

৫. দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা (Considering economic & political situation of the country): দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ফার্মসমূহের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে ফার্মসমূহ ভালো ফলাফল অর্জন করে। এতে ফার্মসমূহ তাদের গৃহীত ঋণের অর্থ ফিরিয়ে দিতে সমর্থ হয় এবং ঋণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

৬. ঝুঁকি ও মুনাফা বিবেচনা (Considering risk return profile): কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত ঋণের তারল্য ঝুঁকি, ঋণ ঝুঁকি, বিনিময় হারজনিত ঝুঁকিসহ সকল ঝুঁকির সার্বিক বিবেচনা করা হয়। গৃহীত ঝুঁকির সাথে সম্ভাব্য মুনাফার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করে ঋণদান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url