বাণিজ্যিক ব্যাংক কিভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে

অর্থ হলো সরকার স্বীকৃত বিনিময় মাধ্যম (Legal tender)। কিন্তু সকল লেনদেনে অর্থের ব্যবহার কষ্টসাপেক্ষ, ঝুঁকি ও ঝামেলাপূর্ণ। তাই আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত বাণিজ্যিক ব্যাংক নিরাপদ বিভিন্ন দলিল ও উপকরণের প্রচলন ঘটিয়ে বিনিময়ের সহজ মাধ্যম সৃষ্টি করে চলেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ নিম্নোক্তভাবে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে:

১. চেক (Cheque): চেক হলো আমানতকারী কর্তৃক প্রাপককে অর্থ প্রদানের শর্তহীন নির্দেশনামা। যে কারণে প্রাপক বা বাহক প্রাপ্ত চেক আমানতকারীর ব্যাংকে উপস্থাপন করে সহজেই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ব্যাংকের মাধ্যমে উপস্থাপন এক্ষেত্রে আরও নিরাপদ। ইলেকট্রনিকস্ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নেটওয়ার্কের অধীন ব্যাংকগুলোর চেকের অর্থ অতি সহজেই প্রাপকের হিসাবে স্থানান্তর সম্ভব। তাই বিনিময়ের সহজ মাধ্যম হিসেবে চেক ব্যবসায় জগতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

২. এ.টি.এম কার্ড (ATM card): নির্দিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে এটিএম কার্ড এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পড়ে। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহককে ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করে বিধায় তা ক্রেডিট কার্ড নামে পরিচিত। এরূপ কার্ড কোনো দলিল নয়, চুম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন সাংকেতিক নম্বরযুক্ত এবং গ্রাহকের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সম্বলিত এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড। VISA, VANIK, MASTER CARD ইত্যাদি এর উদাহরণ।

৩. ব্যাংকের আজ্ঞাপত্ৰ (Bank draft): ব্যাংকের আজ্ঞাপত্র হলো একটি ব্যাংকের এক শাখা কর্তৃক অন্য কোনো শাখাকে অথবা অন্য কোনো ব্যাংক বা প্রতিনিধি ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের নির্দেশনামা। নির্দেশিত শাখা বা ব্যাংক এর প্রাপককে চাহিবামাত্র এর অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকে। তাই দুর-দুরান্তের লেনদেনে বিক্রেতা বা পাওনাদারের নামে ব্যাংক থেকে আজ্ঞাপত্র সংগ্রহ করে একে লেনদেনের সহজ ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৪. পে-অর্ডার (Pay order): ব্যাংকের কোনো শাখা এরূপ দলিলের মাধ্যমে প্রাপককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। বড় ধরনের লেনদেনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে পে-অর্ডার ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতা বা অর্থ প্রদানেচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে প্রাপকের নামে পে-অর্ডার সংগ্রহ করে এবং মূল্য বাবদ উক্ত পে-অর্ডার প্রদান করে। প্রাপক তার ব্যাংকে এটা জমা দিয়ে সহজেই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

৫. প্রত্যয়পত্র (Letter of credit): প্রত্যয়পত্র হলো পাওনাদারের অনুকূলে ব্যাংক প্রদত্ত নিশ্চয়তাপত্র। বৈদেশিক বাণিজ্যে নির্দিষ্ট ফরমায়েশের বিপক্ষে ব্যাংক রপ্তানিকারককে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে এরূপ নিশ্চয়তা দেয় যে, প্রেরিত পণ্যের মূল্য পরিশোধে আমদানিকারক অক্ষম হলে ব্যাংক তা পরিশোধ করবে। তাই প্রাথমিকভাবে এরূপ প্রত্যয়পত্রই বিনিময় মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়।

৬. ব্যাংক নিশ্চয়তা সনদ (Bank gurantee certificate): এরূপ পত্রে ব্যাংক নিশ্চয়তা দেয় যে, গ্রাহক কোনো নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেনে মূল্য পরিশোধে অসমর্থ হলে ব্যাংক তা পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিশ্চয়তাপত্র পাওনাদারের পাওনা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাপত্র হিসেবে গণ্য হয়। ফলে লেনদেনের পর টাকা পেতে দেরি হলে পাওনাদার প্রয়োজনে এরূপ নিশ্চয়তাপত্র জামানত রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url