গ্রাহকদের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা সমূহ |Modern banking facilities for Clients

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উচ্চতর প্রযুক্তি সেবা সুবিধা ব্যাংকের জন্য যেমনি ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে তেমনি গ্রাহকদের জন্যও উন্নতর সেবা সুবিধা নিশ্চিত করেছে। নিম্নে গ্রাহকদের জন্য এরূপ সুবিধাসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. ওয়ান স্টপ সার্ভিস (One stop service): ওয়ান স্টপ সার্ভিস বলতে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে গিয়েই গ্রাহক কর্তৃক তার প্রয়োজনীয় সার্ভিস লাভকে বুঝায়। আগেকার দিনে অর্থ উত্তোলনের জন্য একটা চেক জমা দিলে টোকেন ইস্যু থেকে নমুনা স্বাক্ষর মিলানো, লেজারে পোস্টিং দিয়ে শেষ পর্যন্ত টাকা দেয়া পর্যন্ত অনেক কর্মী অর্থ প্রদানের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতো। কিন্তু এখন অর্থ উত্তোলনের জন্য চেক জমা হলে ব্যাংক কর্মী কম্পিউটারে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে যেয়ে চেকে প্রদত্ত স্বাক্ষরের সাথে নমুনা স্বাক্ষর মিলে কি না তা দেখে নেয়।

এরপর দেখে হিসাবে টাকা আছে কি না, গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা দিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না সবই ব্যাংকিং এক মুহূর্তে ব্যাংক কর্মী দেখে নিয়ে ঠিক থাকলে গ্রাহকের হিসাবে টাকার পরিমাণ ডেবিট করে টাকা দিয়ে দেয়। টাকা গণনার জন্য কাউন্টিং মেশিন ব্যবহৃত হয়। তাই গ্রাহকের উক্ত মেশিনের রিডিং দেখে নিলেই চলে। অর্থাৎ মাত্র এক-দু মিনিটেই অর্থ উত্তোলিত হয়ে যায়। জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও একইভাবে কর্মী কম্পিউটারে গ্রাহকের হিসাবে যেয়ে টাকা জমা করে জমা রসিদে সীল মেরে দেয় যা গ্রাহকদের মূল্যবান সময় ও কষ্ট সাশ্রয়ে কার্যকর সহযোগিতা করেছে।

২. স্বয়ংক্রিয় গণনা যন্ত্র (Automated teller machine / ATM): মানুষবিহীন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত এ হিসাব লেনদেন ব্যবস্থা সংক্ষেপে ATM নামে পরিচিতি। গ্রাহকের হিসাবে অর্থ জমাদান, অর্থ উত্তোলন, এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, ঋণের অর্থ পরিশোধ ইত্যাদি কাজে স্বয়ংক্রিয় এ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজে, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পরিচালনা করা যায় বিধায় বর্তমানকালে সর্বত্রই তা ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ব্যাংকের বহির্ভাগে বা দিবা-রাত্র ২৪ ঘন্টা সহজে ব্যবহারযোগ্য এমন স্থানে স্বল্প পরিসর জায়গায় সহজেই এরূপ যন্ত্র বা টার্মিনাল স্থাপন করা যায়।

ব্যাংকে এরূপ সুবিধা পেতে আগ্রহী গ্রাহকগণকে এক ধরনের চুম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন দর্শনীয় প্লাস্টিক ATM কার্ড সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রাহককে একটা স্বতন্ত্র PIN (Personal indentification entember) দেয়া হয়। লেনদেন করার প্রয়োজন হলে গ্রাহক ATM বুথ বা টার্মিনালে যেয়ে PIN ব্যবহার পূর্বক এ কার্ড ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন ও প্রয়োজনীয় সেবা সুবিধা নিতে পারে। মূলত এটিএম কার্ড বলতে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডকে বুঝায়।

৩. ক্রেডিট কার্ড (Credit card): ক্রেডিট কার্ড একটা বহুল ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সেবা পদ্ধতি। এরূপ কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহককে ক্রেডিট বা ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয় বিধায় তা ক্রেডিট কার্ড নামে পরিচিতি। এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনে এবং নির্দিষ্ট মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে এই কার্ড ব্যবহার করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় EPS (Electronic Payment System) ব্যবহার করে এই কার্ড থেকে সহজেই ফান্ড ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়।

অধুনা বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ গ্রহণের সামর্থ্য রয়েছে এমন মর্যাদাবান গ্রাহকদেরকে চুম্বকীয় শক্তিসম্পন্ন সাংকেতিক নম্বরযুক্ত কার্ড সরবরাহ করে। একজন গ্রাহককে কত টাকা পর্যন্ত Credit limit বা ঋণ সুবিধা দেয়া হবে তা ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দেয়। এই ক্রেডিট সীমা বা সর্বোচ্চ অনুমোদিত ডেবিট ব্যালান্স এর মধ্যে থেকে গ্রাহক নির্দিষ্ট দোকান বা প্রতিষ্ঠান (Merchant) থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ বাবদ তা বারবার ব্যবহার করতে পারে। Master Card, Visa Card, Vanik Card ইত্যাদি এর উদাহরণ।

৪. ডেবিট কার্ড (Debit card): তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন ও ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ATM ব্যবস্থানির্ভর ডেবিট কার্ড একটা অন্যতম পদ্ধতি। গ্রাহকের হিসাবে ডেবিট জের (Balance) থাকলেই শুধুমাত্র এরূপ কার্ড ব্যবহার করা যায় বিধায় একে ডেবিট কার্ড বলা হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ডে যেভাবে পণ্য ও সেবা ক্রয় সুবিধা লাভ করা যায় ডেবিট কার্ডের বেলায়ও সেভাবে পণ্য ক্রয় সুবিধাসহ ফান্ড ট্রান্সফার অর্থাৎ বিভিন্ন সেবা সুবিধা (Utility charge) এর বিল এবং ঋণের ও প্রিমিয়ামের কিস্তি সহজে ও স্বল্প সময়ে প্রদান করা সম্ভব হয়। আমাদের দেশে এখন বিভিন্ন ব্যাংক ডেবিট কার্ড সরবরাহ করে। প্রথম দিকে এরূপ কার্ড ফান্ড ট্রান্সফারে ব্যবহার করা না গেলেও এখন ক্রেডিট কার্ডের মতো ফান্ড ট্রান্সফারেও তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
গ্রাহকদের জন্য আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা সমূহ
৫. অনলাইন ব্যাংকিং (Online banking): অনলাইন ব্যাংকিং হলো কোনো একক ব্যাংকের একাধিক শাখা বা একাধিক ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মধ্যে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর একটা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের অধীন ব্যাংকের যে কোনো শাখায় গিয়ে একজন গ্রাহক তার ব্যাংক হিসাবের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ তাদের কম্পিউটারে উক্ত হিসাব বের করে লেনদেন সম্পাদন করতে পারে। অর্থ জমাদান, অর্থ সংগ্রহ, চেকের অর্থ সংগ্রহ, বিল প্রদান ইত্যাদি নানান কাজে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা কাজে লাগানো যায়। এরূপ ব্যাংকিং একটা নির্দিষ্ট স্থানে গণ্ডিবদ্ধ সীমিত লেনদেন ব্যবস্থাকে গণ্ডির বাইরে এনে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে এবং নগদ অর্থ বহনের বা ড্রাফট করে নিয়ে তা ভাঙ্গানোর প্রয়োজন দূর করেছে।

৬. বিক্রয় বিশ্ব সেবা (Point of Sale Service): গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সুবিধাজনক স্থানে পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধে বিক্রয় বিন্দু সেবা (POS) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা। এই ব্যবস্থায় পণ্য বো সেবার মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার হিসাবে ডেবিট এবং বিক্রেতার হিসাবে ক্রেডিট করা হয়। এরূপ সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (Merchant) কে Cand activated terminal সরবরাহ করে। এরূপ টার্মিনাল অনলাইন কম্পিউটারের সাহায্যে কার্ড ইস্যুকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সার্ভিস ব্যুরো বা ক্রেডিট কার্ড এসোসিয়েশন যাদের নিকট অনুমোদন (Authorisation) তথ্য থাকে তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে।

গ্রাহক পণ্য বা সেবার মূল্য হিসেবে চেক প্রদান করলে বিক্রেতা বিক্রয়-বিন্দু সেবা টার্মিনালের মাধ্যমে গ্রাহকের চেকের যথার্থতা জেনে নিতে পারে। চেকটি যথার্থ হলে এবং গ্রাহকের হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে ব্যবসায়ী চেক গ্রহণ করে যন্ত্রের সাহায্যে তা নিজের হিসাবে ক্রেডিট ও চেকদাতার হিসাবে ডেবিট করে নেয়। কোনো গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড উপস্থাপন করলে ব্যবসায়ী (Merchant card activated terminal) ব্যবহার করে উক্ত ক্রেডিট কার্ডের যথার্থতা সম্পর্কে জেনে নেয়।

কাজটি যথার্থ হলে কার্ড ইস্যুকারী পক্ষকে ফোন করে ব্যবসায়ী লেনদেনের বিষয়ে অনুমোদন নেয়। কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক ছাড়াও সার্ভিস ব্যুরো বা ক্রেডিট কার্ড এসোসিয়েশনের নিকট থেকেও প্রয়োজনে অনুমোদন নেয়া যায় । অনলাইনের মাধ্যমে এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের যোগাযোগ থাকে। ফলে তারাও গ্রাহকের হিসাবকে ডেবিট এবং বিক্রেতার হিসাবকে ক্রেডিট করে দিতে পারে।

৭. চেকস্তূপ পরিষ্কারকরণ (Cheque transaction): চেকস্তূপ পরিষ্কারকরণ এমন একটা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা যা ব্যাংকের হিসাব্বাহীতা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত। সাধারণত গ্রাহকের কোনো ঢেক কালেকশনের জন্য ব্যাংক জমা দিলে যদি তা অমর্যাদাকৃত হয় তবে গ্রাহককে তা জানিয়ে ফেরৎ দেয়। যাতে গ্রাহক অর্থ সংগ্রহের জন্য পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ব্যাংকের গ্রাহক কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত তাদের গ্রাহকদের নিকট থেকে পাওনা কালেকশনের জন্য প্রচুর চেক পেয়ে থাকে। যার অর্থ সংগ্রহের জন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকে রক্ষিত নিম্ন হিসাবে জমা দেয়। এক্ষেত্রে প্রায়শই অনেক চেক অমর্যাদাকৃত হতে পারে।

এই অমর্যাদাকৃত বা বাতিল চেকগুলো ব্যাংক গ্রাহককে ফেরৎ না দিয়ে নিজের নিকট রেখে দেয় এবং মাসিক বিবরণীর সাথে বাতিলকৃত চেকের বিবরণী সরবরাহ করে। ব্যাংক বাতিলকৃত উক্ত চেক নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ৯০ দিন) পর্যন্ত সংরক্ষণ করে। এর মধ্যে বাতিল চেকের ইস্যুকারীকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ খবর জানায় অথবা গ্রাহককে যে বিবরণী পাঠায় তাতে এ বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রয়োজনে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত ঢেকের বিষয়ে পক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

নির্দিষ্ট সময় পর উক্ত বাতিল চেকগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়। অবশ্য ব্যাংকের নিকট উক্ত চেকগুলোর Micro film এর কপি জমা থাকে। যদি পরবর্তীতে উক্ত চেক সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন হয় তবে ব্যাংক চেকের একটা Micro film ইমেজ সরবরাহ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরূপ ফিল্ম ডিস্কে ৭ বৎসর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

৮. স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর সেবা (Automated clearing house service / ACH): ACH এমন একটা সমন্বিত ইলেকট্রনিক সেবা পদ্ধতি যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিশোধগুলো ইলেকট্রনিক উপায়ে বিনিময় ও নিষ্পন্ন করা হয়। এতে কাগজী লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজের চাপ হ্রাস পায়। এতে ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাও কমে। ACH পদ্ধতিতে একাধিক প্রতিষ্ঠান নিজের মধ্যে একটা ACH Association গড়ে তোলে। একটা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন বাবদ পৃথক চেক না কেটে ইলেকট্রনিক উপায়ে Magnetic tape এ তা রেকর্ড করে। উক্ত রেকর্ড Association এর টার্মিনালে পাঠানোর পর Association তা সদস্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ডেবিট করে এবং প্রেরণকারীর হিসাবে ক্রেডিট করে। বর্তমানে ACH পদ্ধতিতে নিম্নোক্ত ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে:

ক. সরকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ।
খ. কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীদের বেতন (Payroll) পরিশোধ।
গ. অনুমোদনকৃত বিমা প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধ।
ঘ. টেলিফোন বিল পরিশাধ।
ঙ. পূর্ব অনুমোদিত ভাড়া ও ঋণের কিস্তির টাকা পাঠানো ইত্যাদি।
ACH Association সদস্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদেরকে নিম্নোক্ত ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে:

i. ক্রেডিট লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording credit entry): যখন সরকার, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোনো পাওনা আদায়ের জন্য Entry originate করে Association এর সদস্য প্রতিষ্ঠান বরাবর পাঠায় তখন ACH Association প্রেরক প্রতিষ্ঠানের হিসাবকে ক্রেডিট করে এবং সরাসরি পাওনাদারের হিসাবে জমা করে।

ii. ডেবিট লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording debit entry): ডেবিট entry মূলত বিভিন্ন বিল পরিশোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। বীমা প্রিমিয়াম, টেলিফোন বিল, ঋণের কিস্তি ইত্যাদি পরিশোধের জন্য যখন গ্রাহক ACH Association এ entry originate করে তখন উক্ত Association নির্দেশদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ডেবিট লেনদেন লিপিবদ্ধ করে।

iii. পূর্ব ঘোষণা প্রদানসাপেক্ষে লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording pre-notification entry): এ ধরনের ইলেকট্রনিক সেবা পদ্ধতিতে একটা কোম্পানি তার প্রাপক কোম্পানিকে ACH -এর মাধ্যমে জানায় যে তার পাওনা পরিশোধের পর্যায়ে রয়েছে এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধিত হবে অর্থাৎ ACH -এর মাধ্যমে তার হিসাবে ক্রেডিট এন্ট্রি প্রদত্ত হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করতে হবে এ মর্মেও পূর্ব ঘোষণা প্রদান এবং তা ACH এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষের হিসাবে এন্ট্রি দেয়া হতে পারে।

৯. হোম ব্যাংকিং (Home banking): গ্রাহকগণ যাতে ঘরে বসে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে সেজন্য হোম ব্যাংকিং ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। ঘরে বসে টেলিফোন করে বিভিন্ন বিল প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রথমে Telephone bill payment (TBP) পদ্ধতি চালু করা হয়। এতে গ্রাহক নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল পরিশোধের জন্য তার ব্যাংককে অনুমোদন (Authorise) দেয়। ফলে ব্যাংক তার গ্রাহকের হিসাবকে ডেবিট করে উক্ত প্রাপকের হিসাবকে ক্রেডিট করে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে প্রাপকের ব্যাংক হিসাবও উক্ত ব্যাংকে থাকার প্রয়োজন পড়ে। এতে কোনো ধরনের চেক লেখা , ডকুমেন্ট মিলানো ও পোস্টিং দেয়ার ঝামেলা ছাড়াই অতি সহজে বিল প্রদান সম্ভব।

Seathe first National Bank ‘In touch’ প্যাকেজের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এ ধরনের ইলেকট্রনিক ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। এক্ষেত্রে গ্রাহক হিসাবকে ব্যাংক এমনভাবে Software এ প্রস্তুত করে যাতে গ্রাহকের টেলিফোন উক্ত Software চিহ্নিত করতে এবং গ্রাহক চিহ্নিত লেনদেনগুলো সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। হোম ব্যাংকিং এ TBP পদ্ধতির পরবর্তী উন্নত সংস্করণ হলো Video home banking। গ্রাহক কম্পিউটারাইজড এ পদ্ধতিতে ব্যাংকে তথ্য পাঠিয়ে লেনদেন সম্পাদন করে।

এক্ষেত্রে ব্যাংক গ্রাহকের ব্যক্তিগত কম্পিউটার টার্মিনালে তাদের Software স্থাপন করে দেয়। ফলে গ্রাহক ঘরে বসেই তার নির্দিষ্ট PIN ব্যবহার করে তার হিসাবের যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারে। সেই সাথে বিভিন্ন বিল পরিশোধ, LC খোলা ইত্যাদি লেনদেন সম্পাদন করতে পারে । বাসার অন্য কেউ PIN জেনে গেলে সেক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্যে এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারে বিধায় PIN অত্যন্ত গোপনে ব্যবহার করতে হয়।

১০. মোবাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking): তারবিহিন টেলিকম্যুনিকেশন ব্যবস্থায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রদান ও লেনদেন করাকেই মোবাইল ব্যাংকিং বলে। নির্দিষ্ট PIN নম্বর দিয়ে ব্যাংকের আর্থিক ও হিসাব সংক্রান্ত ডাটাবেজে ঢুকে দ্রুততার সাথে নিজের তথ্য বের করে আনার এবং অনুমোদিত লেনদেন করতে পারার এক চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। হোম ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের Pin (Personal Identification Number) ব্যবহার করে তথ্য জানা, ব্যাংক হিসাব বিবরণী সংগ্রহ ও সীমিত ফান্ড ট্রান্সফারের যে সুযোগ প্রচলিত রয়েছে তাকে আরও সহজতর করার জন্যই মূলত মোবাইল ব্যাংকিং এর উৎপত্তি। এটি SMS ব্যাংকিং এর সম্প্রসারিত রূপ। মূলত ভিত্তিক শর্ট ফোনের উদ্ভবের ফলেই এরূপ ব্যাংকিং সুবিধার প্রচলন ঘটেছে।

একজন গ্রাহককে এজন্য ব্যাংক প্রদত্ত ফরম পূরণ করে মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হয়। অতঃপর এই মোবাইল নম্বর থেকে নির্দিষ্ট কোডের বিপক্ষে SMS (Short Message Service) করে সাথে সাথে তার হিসাবের ব্যালেন্স জানতে পারে। যা নতুন চেক কাটতে বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। সর্বশেষ কী লেনদেন হয়েছে তার তথ্যও সীমিত পরিসরে জানা যেতে পারে।

এ ছাড়া SMS পাঠিয়ে বিল প্রদান ও ফাণ্ড অন্য কোনো হিসাবে স্থানান্তরের নির্দেশও দেয়া যায়। মোবাইল বিজিনেস (Mobile Business) বা M Business এর ক্ষেত্রে মোবাইল হ্যান্ডসেটে ইন্টারনেট সংযুক্তির সুবাদে নির্দিষ্ট ওয়েবে যেয়ে যেভাবে ক্রয়সহ বিভিন্ন সার্ভিস গ্রহণ ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা যায় মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে তার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশে ব্রাক ব্যাংক বিকাশ নামে এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নামে এরূপ ব্যাংকিং চালু করেছে। যা ইতোমধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করতে সমর্থ হয়েছে। 

১১. আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারিং হাউস পরিশোধ পদ্ধতি / CHIPS (Clearing house interbank payment system): ১৯৭০ সালে নিউইয়র্ক ক্লিয়ারিং হাউস কাগজনির্ভর নিকাশ পদ্ধতির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক নির্ভর আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারিং হাউস পরিশোধ পদ্ধতি চালু করে। প্রথমত ১০০ টি সদস্য ব্যাংক নিয়ে সর্বপ্রথম CHIPS গঠন করা হয়। CHIPS এর সদস্যরাই শুধু এরূপ নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার লাভ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও লেনদেন সুবিধা পেয়ে থাকে। CHIPS প্রক্রিয়ায় যে ব্যাংকে চেকের অর্থ সংগ্রহের জন্য চেক জমা নিয়েছে বা সংগ্রহকারী ব্যাংক ক্লিয়ারিং হাউসের কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে চেকের অর্থ প্রদানকারী ব্যাংকের সনাক্তকরণ নম্বর, চেক নম্বর, মুদ্রার ধরন, পরিমাণ ইত্যাদিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে।

কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে এ সকল তথ্য জমা হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে অর্থ প্রদানকারী ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষে প্রদানকারী ব্যাংকের হিসাবকে ডেবিট এবং সংগ্রহকারী ব্যাংকের হিসাবকে ক্রেডিট করে। এভাবে দিন শেষে কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সদস্য ব্যাংকের প্রত্যেকের ডেবিট-ক্রেডিট ও নীট পজিশন রিপোর্ট তৈরি করে তা তাদের নিকট পাঠায়। এভাবেই একটা চেক উপস্থাপন থেকে শুরু করে লেনদেন নিষ্পন্ন এক দিনেই সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

১২. বিশ্বব্যাপী আন্তঃব্যাংক আর্থিক টেলিযোগাযোগ সমিতি SWIFT / (The society for worldwide interbank financial tele-communication): এ ধরনের সমিতি গঠনের উদ্দেশ্য হলো সদস্য ব্যাংকগুলো যেনো আন্তর্জাতিক আর্থিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সহজে, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে আদান-প্রদান করতে পারে। যার ফলে আন্তর্জাতিক দেনা পাওনা নিষ্পত্তি সহজ হয়। সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বড় ব্যাংকগুলো SWIFT প্রতিষ্ঠা করে। SWIFT নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যে সকল তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয় তা নিম্নরূপ: 

১. এক ব্যাংকের দেনা-পাওনা ও তহবিল অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর।
২. গ্রাহকের ফান্ড অন্যত্র স্থানান্তর।
৩. ফান্ড প্রাপ্তির উপদেশপত্র প্রেরণ।
৪. বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান।
৫. মেয়াদি বা চাহিবামাত্র ঋণ / আমানত প্রদান সম্পর্কীত তথ্য প্রেরণ।
৬. সুদ পরিশোধ।
৭. ডেবিট ও ক্রেডিট এন্ট্রির অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় বিবরণী ইত্যাদি।

SWIFT নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় অঞ্চলিক Switch center প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার সাথে ঐ অঞ্চলের সদস্য ব্যাংকগুলো পরস্পর সংযুক্ত থাকে। এই Center গুলো নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দু বিবেচিত হয়। এরাই তথ্য বা ফান্ড প্রদানকারী ও গ্রহণকারী ব্যাংকের মধ্যে লেনদেন প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকই এখন আন্তর্জাতিক এই নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

১৩. প্রাতিষ্ঠানিক স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর (Corporate automatic clearing house): ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যকার লেনদেন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর পদ্ধতি গড়ে তুলতে পারে। খুচরা ACH এর সাথে এর পার্থক্য হলো এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ACH Entry তৈরি করে সংগ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেয় না বরং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই ACH Entry তৈরি করে ACH ক্রেডিট এন্ট্রির মাধ্যমে ফান্ড স্থানান্তর করে।

বর্তমানে উন্নত বিশ্বে অর্ধ লক্ষেরও বেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের সরাসরি বেতন জমা দেয়ার জন্য ACH পদ্ধতি ব্যবহার করছে । সরাসরি জমা প্রদান ছাড়াও সরাসরি অর্থ সংগ্রহের জন্য বড় বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো ACH ডেবিট এন্ট্রির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ পলিসি থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url