বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ সেবার সমস্যা ও সম্ভাবনা | Problems and prospects of Direct Service in Bangladesh

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবাখাতমুখী হচ্ছে। তবে বেশ কিছু সমস্যার কারণে সেবা খাতে আশানুরূপ উন্নতি লাভ করা যাচ্ছে না। এ খাতের সমস্যাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ সেবার সমস্যা | Problems of Direct Service in Bangladesh


১. দক্ষ উদ্যোক্তার ঘাটতি (Lack of efficient entrepreneur): বাংলাদেশে অনেকেই সেবা খাতে ব্যবসায় করতে চান। অনেকে আবার সাহসিকতার সাথে শুরুও করেন। তবে দক্ষতার অভাবে সবাই সফল হতে পারেন না।

২. মূলধনের অপর্যাপ্ততা (Insufficient capital): বেশির ভাগ সেবা খাতেই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। তবে যথেষ্ট মাত্রার অর্থের যোগান না থাকায় অনেকেই সফলভাবে এ খাতে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন না।

৩. সেবাদানের মানসিকতার অভাব (Lack of service mentality): এ খাতে ব্যবসায় পরিচালনা করতে জনগণের সেবাদানের মানসিকতা থাকতে হয়। তবে অনেকের মধ্যেই এ ব্যাপারে ঘাটতি দেখা যায়।

৪. শহরমুখী প্রবণতা (City oriented tendency): বাংলাদেশে সেবা খাতের অধিকাংশ পেশাজীবীদের মধ্যে শহরমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তারা গ্রামের পরিবর্তে শহরে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকার অনেক নিয়ম-কানুন করে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করেও গ্রাম বা উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত। চিকিৎসক রাখতে পারছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলের সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

৫. ধারণা ও জ্ঞানের অভাব (Lack of idea and knowledge): এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেরই তাদের সেবা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞানের অভাব আছে। আবার, সেবা গ্রহীতারাও অনেক সেবা ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। ফলে কাঙ্ক্ষিত মানের সেবা বিনিময়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

৬. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব (Lack of education and training): ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের মতো পেশাজীবী ছাড়া অন্যান্য সেবাদানকারীর বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকেন না। এতে তাদের দেওয়া সেবার মান সব সময় উন্নত হয় না। ফলে এসব ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা কমে যায়।

৭. আধুনিক প্রযুক্তির অভাব (Lack of modern technology): বাংলাদেশ প্রযুক্তি খাতে উন্নতি করছে। তবে এখনো অনেক সেবা খাতে পুরোনো ও সেকেলে পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে সেবার খরচ বেড়ে যায় এবং মান কমে যায়। এছাড়া এগুলো প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়ে।

৮. সাইবার অপরাধ (Cyber crime): বাংলাদেশে অনেক সময় তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর খাতগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার মতো অন্যায়ের প্রবণতা দেখা যায়। এজন্য তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত খাতগুলোর উন্নয়ন ও প্রসারে সমস্যা দেখা দেয়।

৯. সততার অভাব (Lack of honesty): প্রত্যক্ষ সেবাদানকারীর কারো কারো কাজে অসততা ও দুর্নীতির প্রবণতা দেখা যায়। এতে জনমনে এই ক্ষেত্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তারা সাধারণভাবে সকল সেবাদানকারীকেই দোষী বা অসৎ ভাবতে থাকে। এতে উক্ত খাতের উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি হয়।

সুতরাং, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ সেবা খাতে অগ্রগতির অনেক সুযোগ আছে। তবে উল্লিখিত সমস্যাগুলোর কারণে এ খাতে যথেষ্ট মাত্রায় উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ থেকে উত্তরণের জন্য সবার আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ সেবার সম্ভাবনা|Prospects of Direct Service in Bangladesh


বাংলাদেশে দিন দিন সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। মোট জাতীয় উৎপাদনের (GDP) এর অবদান দ্রুত বাড়ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণ সেবা খাতের। এ খাতের উন্নয়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, সেবা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতের প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে বাড়ানো হচ্ছে সরকারের বিনিয়োগ। নিচে সেবা খাতের সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

১. পর্যটন খাত (Tourism sector): ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বাংলাদেশের পর্যটন সেবা শিল্পের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। এদেশের কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন ও অন্যান্য স্থানের সৌন্দর্য সম্পর্কে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে পারলে এক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সম্ভব।

২. টেলিফোন খাত (Telephone sector): মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । ক্রমবর্ধমান এ সেবা দেশের সব মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে দেওয়া যায়। তথ্যপ্রযুক্তি ও এ সংক্রান্ত সেবা খাতে আইটি- আইটিইএস বাংলাদেশের সম্ভাবনা ব্যাপক। এ ক্ষেত্রটিতে এদেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তাই এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা ও সুযোগ আছে।

৩. তথ্য প্রযুক্তি খাত (Information technology sector): দেশে হার্ডওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের দ্রুত বৃদ্ধি এ খাতকে সমানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এ লক্ষ্যেই হাইটেক পার্ক ধারণার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। হাইটেক পার্ক উন্নয়ন ও বিনিয়োগে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখাচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকেই এরূপ পার্ক নির্মাণের বিষয়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং দেশে অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে।

৪. সফটওয়্যার প্রযুক্তি (Software technology): গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দেশের সবচেয়ে বড় হাইটেক পার্ক গড়ে উঠছে। এছাড়া রাজধানীর কাওরান বাজারে জনতা টাওয়ারে প্রায় ৭২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। এগুলো জাতীয় রাজস্ব আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে আশা করছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি আসবে বলে আশা করা যায়।

৫. স্যাটেলাইট সেবা (Satellite service): ২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু -১’। এ স্যাটেলাইট থেকে নিচের সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে:

i. তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন।
ii. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণ।
iii. দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সহায়তা।
iv. জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে সহায়তা।
v. কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন প্রভৃতি।

তাই, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আগামী কয়েক বছরে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দেশের জাতীয় আয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সেবা খাতের দিকেই নজর দিতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url