বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্লু - ইকোনমিকের অবদান
ব্লু ইকোনমি এর প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ সমুদ্র অর্থনীতি। এক কথায়, সমুদ্রের জলরাশি, সমুদ্র সম্পদ ও সমুদ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা অর্থনীতিকে বলা হয় ‘ব্লু ইকোনমি ’ বা সমুদ্র অর্থনীতি। সমুদ্র সম্পদ সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশ বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমার যথাযথ ব্যবহারে খুলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিংহদুয়ার। বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ব্লু - ইকোনমি সম্পর্কে আমার মতামত নিম্নরূপ:
মৎস্য সম্পদ: বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমা মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণীর এক বিশাল ভাণ্ডার । মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ ও আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মৎস্য রপ্তানি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।
তেল - গ্যাস - খনিজ: বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের সূত্র মতে, কক্সবাজারের সৈকত বালিতে মোট খনিজের প্রাক্কলিত মজুদের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টন। আর প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ টন। এসব খনিজের মধ্যে রয়েছে ইলেমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, গারমেট ইত্যাদি, যার বৈদেশিক রপ্তানি মূল্য অনেক।
লবণ আহরণ-উৎপাদন: সমুদ্রের লোনা পানিকে আটকে সূর্যের তাপ ব্যবহার করে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন টন লবণ রফতানি করতে পারে।
জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙ্গা শিল্প: বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জাহাজ ভাঙা শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এ শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান আজ বিশ্বে দ্বিতীয়, পৃথিবীর মোট জাহাজ ভাঙার ২৪.৮ % সম্পাদিত হয় চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে।
সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর অর্থনীতি: আমদানি - রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হলো সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর অর্থনীতি। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৬০০ জাহাজের মাধ্যমে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি - রপ্তানি হয়ে থাকে।
পর্যটন অর্থনীতি: সমুদ্র অর্থনীতির এক বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে। সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নৈসর্গিক সৌন্দয্যের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার ও অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি সেন্টমার্টিন এবং পর্যটকদের কাছে ‘সাগর কন্যা' হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সমুদ্র অর্থনীতির বিকাশে নিয়ে আসতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব।
ব্যাপক কর্মসংস্থান: সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন, নির্মাণ শিল্প, যোগাযোগ ও পরিবহন, উপকূলীয় জীবন-জীবিকা, এবং বন্দরসমূহের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ। সৃষ্টি করেছে সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতি তথা ব্লু - ইকোনমি।
সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনায় আমাদের করণীয়: সমুদ্র অর্থনীতির বিকাশে গড়ে তুলতে হবে সমুদ্র অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এ লক্ষ্যে সমুদ্র সুরক্ষায় যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সমুদ্র কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
পরিশেষে, সমুদ্র অর্থনীতির অবারিত সুযোগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্মোচন করুক নতুন দিগন্তের এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
Thank you for sharing such a wonderful article. I love it.