ই-বিজনেস এর ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও‌ পদ্ধতি | E-Business concept, Features and methods

ই- বিজনেস‌ কাকে বলে? What is E-Business?

ই-বিজনেস ধারণাটি সর্বপ্রথম ১৯৯৭ সালে আইবিএম (IBM) চালু করে। প্রতিষ্ঠানটির মতে ই -বিজনেস হলো, ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যবসায়ের মৌলিক কার্যাবলি সম্পাদনই হলো ই-বিজনেস।

বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই নতুন ব্যবসায় পরিবেশ ও সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়ানো ও টিকে থাকার জন্য ই-বিজনেস ধারণা নিয়ে ভাবছে। যে ব্যবসায় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরিচালিত হয় অথবা উৎপাদন ও মুনাফা বাড়াতে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাকে ই - বিজনেস বলা হয়।

ই-বিজনেস হলো, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায় পরিচালনা ই-বিজনেস করা। এটিকে ইন্টারনেট বিজনেস নামেও অভিহিত করা যায়। ই-বিজনেস এর অন্তর্ভুক্ত বিষয় ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের হলো পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, গ্রাহক সেবা লেনদেন, উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, সহযোগী মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়িক কাজ সম্পাদন পক্ষসমূহের মধ্যে তথ্য বিনিময়, বিপণন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি।

ই-বিজনেস ব্যবস্থায় এই কাজগুলো সম্পাদনে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ই-বিজনেস এ ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি হলো সফটওয়্যার, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট, এক্সট্রানেট অথবা এদের সংমিশ্রিত রূপ। ই- বিজনেস বিস্তৃত ভোস্তার কাছে পণ্য বা সেবা পৌছাতে পারে। ই-বিজনেস এর অংশ হলো ই-কমার্স, ই-মার্কেটিং, ই-রিটেইলিং প্রভৃতি।

অতএব, ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্যদ্রব্য বা সেবা কাজ উৎপাদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে। পৌছানো পর্যন্ত তথ্য বিনিময়, কেনা-বেচা, মার্কেটিংসহ যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে ই-বিজনেস বলে।
ই-বিজনেস এর ধারণা, বৈশিষ্ট্য ও‌ পদ্ধতি

ই-বিজনেস এর বৈশিষ্ট্য | Characteristics of E- Business


বর্তমান প্রচলিত ধারার ব্যবসায় থেকে ই-বিজনেস কিছু মৌলিক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ই-বিজনেস এর বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায় (Electronic technology based business): ই-বিজনেস সাধারণত ব্যবসায়ে প্রথাগত মাধ্যম ব্যবহার করে না। এটি ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করতে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে।

২. ওয়েবসাইটের ব্যবহার (Use of website): ই-বিজনেস এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ওয়েবসাইট ভিত্তিক সেবা। স্বাধীনভাবে ই-বিজনেস পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকতে হবে।

৩. যেকোনো স্থানে পরিচালনা (operating at any place): ই-বিজনেস অফিস ও দোকানবিহীন ব্যবসায়ও হতে পারে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে এটি যেকোনো জায়গা থেকে পরিচালনা করা যায়।

৪. সর্বাধিক সেবা (Maximum service): ই-বিজনেস এর কোনো পরিচালনগত সময় নেই। এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে পারে। সেবার দিক থেকে প্রথাগত ব্যবসায়ের চেয়ে ই-বিজনেস বেশি শক্তিশালী।

৫. বিশ্বব্যাপী পরিচালনা (World wide operation): ই-বিজনেস ভৌগোলিক স্বাধীনতাকে জয় করেছে। ই-কমার্স এবং ই-মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে ই-বিজনেস দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই ই বিজনেস বিশ্বব্যাপী পরিচালিত একটি ব্যবস্থা।

৬. দ্রুততার সাথে কাজ সম্পাদন (Perform quickly): ই- বিজনেস এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কাঁচামাল সংগ্রহ করে উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে পারে। অন্যদিকে, গ্রাহক বা ভোক্তারা দ্রুততার সাথে অর্ডার দিয়ে পণ্য বা সেবা সংগ্রহ করতে পারে। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সময় সাশ্রয় হয়।

৭. সরাসরি যোগাযোগ (Direct communication): ই-বিজনেস পদ্ধতিতে ভোক্তারা সরাসরি উৎপাদক বা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এতে কোনো ধরনের মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না। ভোক্তাদেরকে এককভাবে সেবা দেওয়ার মাধ্যমেও অনলাইন ব্যবসায় ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকে।

৮. সহজ প্রক্রিয়া (Easy process): ই-বিজনেস ব্যবসায়ের কাজ বেশি সহজ করে তোলে। যখন যে কৌশল প্রয়োজন হয় তখন সেটিই প্রয়োগ করা যায়। প্রথাগত ব্যবসায়ের কোনো প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। কিন্তু ই-বিজনেসে এটি অনেক সহজ। এজন্য সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ই-বিজনেস বৈশ্বিক সেবা দিতে পারে।

তাই বলা যায়, উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের কারণেই ই-বিজনেস গতানুগতিক ব্যবসায় পদ্ধতি থেকে স্বতন্ত্র পদ্ধতি। ই-বিজনেস হতে হলে এসব বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য।

ই-বিজনেস এর পদ্ধতি | Process of E-Business


বিশ্বকে অনলাইন বাজারে পরিণত করার প্রক্রিয়া অনেক আগেই চালু হয়েছে। এর ফলে ভৌগোলিক গণ্ডি পেরিয়ে খুব সহজে আন্তর্জাতিক বাজার এখন অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। ই-বিজনেস এর প্রভাবে বিশ্বের ভৌগোলিক অঞ্চলের চিত্র অনেকটা প্রযুক্তিসম্মত হয়েছে। ই-বিজনেস বিভিন্ন পর্যায়ে হতে পারে , যা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to Business or B2B): ই-বিজনেস এর B2B মডেল বলতে দুটি ব্যবসায়িক পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও পণ্য কেনা-বেচা করাকে বোঝায়। এখানে দুটি পক্ষই ইলেকট্রনিক উপায়ে ব্যবসায়িক লেনদেন ও যোগাযোগ সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে পণ্য কেনা-বেচায় ভোক্তা জড়িত থাকে না। দুটি পক্ষই থাকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এর লেনদেন, ফরমায়েশ, পরিবহন, বণ্টন, গুদামজাতকরণ ইলেকট্রনিক উপায়ে সম্পন্ন হয়। বিশ্বের প্রায় ৮০% ব্যবসায় B2B ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।

২. ব্যবসায় থেকে ভোক্তা (Business to Consumer or B2C): ই-বিজনেস এর B2C মডেল হচ্ছে ই-রিটেইলিং বা খুচরা ব্যবসায়ের মতো ব্যবস্থা। এখানে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করেন। যেকোনো ব্যক্তি বা ভোক্তা ব্যবসায়ীর বা সরবরাহকারীর ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই সরাসরি পণ্য বা সেবা কিনতে পারেন। amazon.com এরূপ ক্ষেত্রে সহায়তাকারী একটি ওয়েবসাইট।

৩. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to Consumer or C2C): C2C মডেলে একজন ভোক্তাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি অন্য ভোক্তার সাথে পণ্য কেনা-বেচা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে লেনদেনের জন্য অন্য কোনো পক্ষের প্রয়োজন হয় না। ebay.com এর মতো অনেক ওয়েবসাইট এক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।

৪. ভোক্তা থেকে ব্যবসায় (Consumer to Business or C2B): যে ইলেকট্রনিক ব্যবসায় পদ্ধতিতে ভোক্তা থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে তাকে C2B পদ্ধতি বলে। C2B মডেলে একজন ব্যক্তি তার পণ্য ও সেবার বিবরণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠান। বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সে পণ্য বা সেবা পছন্দ অনুযায়ী কিনে থাকে। monster.com, odesk.com এক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওয়েবসাইট।

৫. ব্যবসায় অংশীদার থেকে ব্যবসায় অংশীদার (Business Partners to Business Partners or P2P): ইলেকট্রনিক উপায়ে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সহযোগী অন্য কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে কেনা-বেচা বা লেনদেন করলে তাকে ই-বিজনেসের P2P পদ্ধতি বলে। বড় আকারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিজ স্বার্থে অনেক সহযোগী অংশীদার খুঁজে নেয়। পণ্য সরবরাহকারী, সেবা সরবরাহকারী বা উপজাত দ্রব্য ব্যবহারকারী এরূপ সহযোগী বা অংশীদারের উদাহরণ।

৬. সরকার থেকে সরকার (Government to Government or G2G): এ ধরনের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এক দেশের সরকার অন্য দেশের সরকারের সাথে ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। যদি বাংলাদেশ সরকার কুয়েত সরকারের কাছ থেকে তেল কিনে তাহলে এই লেনদেনকে G2G বলা হবে।

৭. সরকার থেকে ভোক্তা (Government to Consumer or G2C): এ ধরনের ব্যবসায়ে সরকার তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তা বা নাগরিকদের সাথে সংযুক্ত থাকে। যেমন: ইলেকট্রনিক উপায়ে সরকারকে রাজস্ব পরিশোধ, কলসেন্টারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া প্রভৃতি।

৮. সরকার থেকে ব্যবসায় (Government to Business or G2B): এ ধরনের বিজনেস পদ্ধতিতে একপক্ষ থাকে সরকার অন্য পক্ষ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। যেমন: একটি মন্ত্রণালয় অফিস সরঞ্জামাদি কেনার জন্য অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দেয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে দরপত্র জমা দেয়। সরকার নির্বাচিত সরবরাহকারীর সাথে ইলেকট্রনিক উপায়ে লেনদেন সম্পন্ন করে।

৯. এম-কমার্স (M-commerce): তারবিহীন প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য বা সেবা কেনা-বেচার কাজকে M-commerce (Mobile commerce) বলে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url