বন্ড মার্কেটের ধারণা || Concept of Bond Market
বন্ড মার্কেট কী|What's Bond Market
যে বাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন যৌথ মূলধনী কোম্পানি, বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বিভিন্ন মেয়াদের বন্ড ক্রয় - বিক্রয় হয় তাকে বন্ড মার্কেট বলে। এ বাজারে জামানতযুক্ত এবং জামানতবিহীন বন্ড এবং আয় বন্ড, জিরো কৃপন বন্ড, কুপন বন্ড, জাংক বন্ড ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বন্ড ক্রয় - বিক্রয় হয়। উল্লেখ্য, কোনো দেশে শেয়ার মার্কেট ও বন্ড মার্কেটের পৃথক পৃথক অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এ দুটি মার্কেট একীভূত হয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ নামে শেয়ার ও বন্ডে কেনা - বেচা করে। বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথরিটি, পাওয়ার ডেভেলোপমেন্ট বোর্ড প্রভৃতি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বন্ড ক্রয় - বিক্রয় করে।
বন্ড কাকে বলে?
কোম্পানি তার গৃহীত ঋণের কথা স্বীকার করে ঋণদাতাকে যে দলিল প্রদান করে তাকে বন্ড বলে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হলো বন্ড (Bond )। এতে ঋণকৃত অর্থের পরিমাণ, ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা, সুদের হার, ঋণ পরিশোধের তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
জে. এফ. ওয়েস্টার্ন ও ই. এফ. ব্রিগহ্যাম বলেন,
বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যাতে ঋণ গ্রহীত্য, সুদ ও আসল একটি নির্দিষ্ট তারিখে বন্ড মালিককে ফেরত দিতে অঙ্গীকার করে।
সাধারণত তিনভাবে বন্ড ইস্যু করা হয়। যেমন—
i. লিখিত মূল্যে (at par)
ii. প্রিমিয়ামসহ (ar premium)
iii. বাট্টার মাধ্যমে (at discounts)
বন্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষকে ৪ শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
১. সরকার
২. কর্পোরেশন বা কোম্পানি
৩. মিউনিসিপ্যাল এজেন্সি
৪. বৈদেশিক সরকার বা কোম্পানি
বন্ডের বৈশিষ্ট্য |Characteristics of Bond
ব্যবসায়ে অর্থায়নের দীর্ঘমেয়াদি উৎসের ক্ষেত্রে বন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋণ - দলিল হিসেবে স্বীকৃত হয়। এর কতগুলো লক্ষণীয় দিক বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. ঋণের দলিল: বন্ড একটি ঝণ সম্পর্কিত দলিল। এ দলিলে ঝাণের পরিমাণ, ঋণের মেয়াদ, সুদের হারসহ আনুষঙ্গিক শর্তাবলি উল্লেখ থাকে।
২. লিখিত মূল্য: বন্ডের গায়ে নির্দিষ্ট মূল্য লিখিত থাকে। বন্ডের মেয়াদ পূরণ হলে ঋণদাতাকে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা উল্লেখ থাকে।
৩. সুদ প্রদান: বন্ডের ধারককে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়, যা তার আয়ও বটে। কোম্পানির লাভ হোক বা না হোক এ সুদ পরিশোধ করতেই হয়।
৪. ভোটাধিকার: কোম্পানির কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় হোন্ডাররা সাধারণ শেয়ার হোন্ডারদের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। ফলে তারা কোম্পানির কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামতও প্রদান করতে পারে না।
৫. হস্তান্তরযোগ্য: কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে বন্ড ইস্যু করে তহবিল সংগ্রহ করলে বন্ডহোন্ডাররা প্রয়োজনের সময় তার মালিকানা হস্তান্তর করতে পারে। তাই দরকার পড়লে হন্ড অন্যের কাছে বিক্রি করা যায়।
৬. অবসায়নের সময় দাবি: কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে তার সম্পত্তির মূল্যায়ন হয়। সেক্ষেত্রে বন্ড হোল্ডাররা সম্পত্তির প্রথম দাবিদার হয়। এরপর অন্যান্য শেয়ার হোল্ডাররা বা অংশীদাররা দাবি করতে পারে।
৭. একক মূল্য: একই সাথে বাজারে যতগুলো বড় ছাড়া হয় তার সবগুলোর মূল্য একই হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত ১,০০০ টাকা মূল্যের বন্ড দেখতে পাওয়া যায়।
৮. জামানত: বন্ড সাধারণত জামানতযুক্ত হয়। যেমন- মর্টগেজ ভাঙা। আবার তা জামানতবিহীনও হতে পারে। যেমন— আয় বন্ড। বন্ড জামানতযুক্ত ও জামানতবিহীন উভয় প্রকারের হতে পারে।
৯. কর প্রদান: বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত হয়।
বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়নের সুবিধা |Advantages of Financing Through Bond
বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়; সুবিধাগুলো নিম্নরূপ:
১. কম খরচ: বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে কোম্পানির খরচ কম হয়; কারণ এ ধরনের ঋণের সুদের ব্যয় কম এবং শেয়ারের চেয়ে এটি কম খরচে বিক্রি করা যায়।
২.কর সুবিধা: কোম্পানি আইন অনুযায়ী বন্ডের সুদ কর বাদযোগ্য খরচ হিসেব বিবেচিত হয়। তাই এর মাধ্যমে অর্থায়ন করলে কোম্পানি কর রেয়াত পেয়ে থাকে।
৩. বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার: কখনও কখনও বাজারে শেয়ার গ্রহণযোগ্য হয় না। তখন কোম্পানির জন্য বন্ডই তহবিলের উৎস হতে পারে।
৪. কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা: বন্ড ধারকাদের কোনো ভোটাধিকার থাকে না। তাই তারা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে কোম্পানি স্বাধীনভাবে তার কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।
৫. উপার্জন ক্ষমতা কমে না: বন্ডের ব্যবহার কোম্পানির বিদ্যমান কোম্পানি শেয়ার হোল্ডারদের উপার্জন হার হ্রাস করে না।