ই-মার্কেটিং এর ধারণা|Concept of E-Marketing
ই-মার্কেটিং কাকে বলে?
সর্বোচ্চ ক্রেতা ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক ক্রেতা সম্পর্ক গড়ে তোলাকে মার্কেটিং বলে। মার্কেটিং এর সাথে জড়িত বিষয়গুলো হলো পণ্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো, উৎসাহ সৃষ্টি ও স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করা। এই কাজগুলো ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তির সাহায্যে করাই হলো ই-মার্কেটিং।
ই-মার্কেটিং অনেক ক্ষেত্রে ওয়েব মার্কেটিং, অনলাইন মার্কেটিং, ইন্টারনেট মার্কেটিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং নামেও পরিচিত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌছানোর সমগ্রিক কাজই হলো ইন্টারনেট মার্কেটিং। এর মাধ্যমে খুব কম সময়ে বিশালসংখ্যক মানুষের কাছে পণ্য সম্পর্কে তথ্য দেওয়া যায়। ইন্টারনেট বিপণন শুধু কোনো ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপন দেওয়াতে সীমাবদ্ধ নয়; তা কোম্পানির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করে তোলার দিকেও নজর দেয়।
অনেকের ধারণা ই-মার্কেটিং মানে শুধু মানুষের কাছে ই-মেইল বা স্প্যাম মেসেজ (অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা) পৌছানো। কিন্তু বাস্তবে এটি হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ক্রেতাদেরকে কোনো পণ্য বা সেবা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। গ্রাহকদের চাহিদা শনাক্তকরণ, তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, বিপণন প্রসার কৌশল নির্ধারণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ই মার্কেটিং কাজ করে। এজন্য প্রয়োজন হয় ওয়েব, ই-মেইল, ডেটাবেজ, ডিজিটাল টেলিফোন, সোস্যাল মিডিয়া প্রভৃতি।
ই-মার্কেটিং ইন্টারনেট ব্যবহার করে মূলত নিচের কাজগুলো করে:
১. নতুন বাজার ও পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি
২. ক্রেতা বা ভোক্তাকে আকৃষ্টকরণ ও বাজার সৃষ্টি
৩. ক্রেতা বা ভোক্তার মনোভাব বোঝা
৪. পুরাতন ক্রেতা বা ভোক্তাদের ধরে রাখা
৫. উন্নত পণ্য বা সেবা তৈরির কৌশল উন্নয়ন প্রভৃতি।
অতএব, ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য বা সেবার নতুন বাজার সৃষ্টি এবং লাভজনক ব্র্যান্ড ও ক্রেতা ভ্যালু তৈরির কাজকে ই-মার্কেটিং বলে।
ই-মার্কেটিং এর গুরুত্ব | Importance of E-Marketing
প্রথাগত মার্কেটিং এর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠে ব্যবসায় জগতে আলো ছড়াচ্ছে ই-মার্কেটিং। বিভিন্ন দিক থেকে ই মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিচে তুলে ধরা হলো:
১. বিশ্বব্যাপী প্রবেশ (Global reach): বিশ্বের যেকোনো স্থানের যেকোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে তিনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা বা ভোক্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এর মাধ্যমে সামান্য খরচে বিশ্বব্যাপী নতুন বাজার সৃষ্টি ও প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
২. নতুন পণ্য উন্নয়ন (New product development): প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মানুষের সহনশীলতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ই-মার্কেটিং বাজার ও ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণ করে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে । এসব সুযোগ কাজে লাগালে নতুন পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়া গতিশীল হয়।
৩. ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জন (Consumer satisfaction): ই-মার্কেটিং নিচ (Niche) মার্কেটিং কৌশলকে বেশি উপযোগী করেছে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রত্যেক ভোক্তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী সেবা দেওয়া যায়। ফলে ভোক্তা সন্তুষ্টি নিশ্চিত হয় এবং ব্যবসায়ে সফলতা আসে।
৪. ক্রেতার সমাহার (Gathering customers): ই-মার্কেটিং বেশি ক্রেতার সমাহার নিশ্চিত করে। টেলিভিশনে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অনেকে তা না ও দেখতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেটে বিশ্বব্যাপী ক্রেতার কাছে পণ্যের সমাহার নিয়ে হাজির হওয়া যায়। এতে সর্বাধিক সংখ্যক ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হয়।
৫. স্বল্পমূল্যে পণ্য বা সেবা সরবরাহ (Supply of products or services at lower price): ই-মার্কেটিং পদ্ধতিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্যয় এবং অর্ডার প্রসেসিং ব্যয় কমানো যায়। ফলে স্বল্প মূল্যে পণ্য বা সেবা সরবরাহ নিশ্চিত হয়। এতে ক্রেতারা যেমন কম মূল্যে পণ্য পায়, তেমনি বিক্রেতারাও বেশি পরিমাণে বিক্রি করে লাভবান হয়।
৬. সার্বক্ষণিক সেবা (All time service): প্রথাগত মার্কেটিং ব্যবস্থায় ক্রেতা বা ডোস্তাকে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সেবা দেওয়া যায় না। কিন্তু ই-মার্কেটিং পদ্ধতিতে ক্রেতা বা তোস্তাকে সব সময় পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে প্য কিনতে আগ্রহী করা যায়। এভাবে কার্যকর বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
৭. ব্যয় হ্রাস (Minimizing the cost): ই-মার্কেটিং এ পণ্য ও সেবার বিপণন খরচ অপেক্ষাকৃত কম হয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন ছাপানো ও তা প্রচারের মতো ব্যয়বহুল পদক্ষেপের প্রয়োজন হয় না।
তাই বলা যায়, বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল মার্কেটিং ব্যবস্থায় ই-মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ই-মার্কেটিং এর মধ্যে কোনটি বেশি সুবিধাজনক।