ই-রিটেইলিং এর ধারণা|Concept of E-Retailing

রিটেইলিং শব্দের অর্থ হলো খুচরা পণ্য বিক্রি। ই-রিটেইলিং হলো ইলেকট্রনিক উপায়ে খুচরা পণ্য বিক্রি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতার কাছে খুচরা পণ্য বা সেবা অনলাইনে সরাসরি বিক্রি করার প্রক্রিয়াকে ই-রিটেইলিং (Electronic retailing) বলে।

ই-রিটেইলিং পদ্ধতির ধারণা ১৯৯৭ সালে ডেল কম্পিউটার ই-রিটেইলিং ধারণা নিয়ে ব্যবসায় জগতে আলোড়ন তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন পদ্ধতিতে মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার অর্ডার নেয় আমাজন ডটকম (amazon.com) এর মাধ্যমে।
ই-রিটেইলিং এর ধারণা
এ পদ্ধতিতে বিশ্বব্যাপী বই, থিসিস, অনলাইন কনটেন্ট বিক্রি করে। খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য ও সেবাসামগ্রী বিক্রি করে থাকে। 

আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনতে কাছের মুদির দোকান অথবা মনিহারির দোকানকেই ভালো মনে করি। কিন্তু কাজের চাপ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের ঘরে বসেই খুচরা দ্রব্য কিনতে উৎসাহিত করছে। এ পদ্ধতিটি ই-রিটেইলিং নামে পরিচিত। ক্রেতা-ভোক্তা বিবেচনায় B2C পদ্ধতি হলো ই- রিটেইলিং।

এটিকে ই-টেইলিং (e-tailing), ই-শপিং (e-shopping), ই-স্টোর (e-store), ইন্টারনেট শপ (Internet shop), ওয়েব শপ (Web shop), ওয়েব স্টোর (Web store), অনলাইন স্টোর (Online store), ভার্চুয়াল স্টোর (Virtual store), ই টার্লিং (e-terling ) প্রভৃতি নামেও অভিহিত করা হয়।
ই-রিটেইলিং পদ্ধতিতে একজন ক্রেতা বা ভোক্তা তার কাঙ্ক্ষিত পণ্য ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন ই-রিটেইলিং অথবা সরাসরি পরিচিত ওয়েবসাইটে গিয়ে খোঁজ করতে পারেন।

পণ্য বা সেবা বাছাই করে ক্রেতা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার অর্ডার দেন। এরপর ক্রেতাকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হয়। অর্ডার করে ক্রেতার কাছে খুচরা পাওয়ার পর বিক্রেতা বা সরবরাহকারী অর্ডার দাতার ঠিকানায় পণ্য পৌঁছে দেন। পণ্যমূল্য পণ্য সরাসরি বিকি আদায়ের জন্য কার্ড সরবরাহকারী র‍্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। বিক্রেতা বা ক্রেতার অভিযোগ না থাকলে এখানেই ই-রিটেইলিং পদ্ধতির সমাপ্তি হয়।

ই-রিটেইলিং পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবা হলো— হোটেল বুকিং, কম্পিউটার সামগ্রী, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, অফিস সামগ্রী, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা সামগ্রী, বই, ম্যাগাজিন, সংগীত সামগ্রী, খেলনা, স্বাস্থ্য সামগ্রী, জাঁকজমক বা সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, পোশাক, জুয়েলারি সামগ্রী, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সেবা (ই-ব্যাংকিং ও অন্যান্য) প্রভৃতি।

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ই-রিটেইলিং সাইটগুলো হলো— amazon.com, alibaba.com, junglee.com, myntra.com প্রভৃতি।

searchio.techtanget.com অনুযায়ী,
E-retailing is the selling of retail goods on internet. অর্থাৎ, ইন্টারনেটে খুচরা পণ্য বিক্রি করাকে ই - রিটেইলিং বলে।
অতএব, মধ্যস্থব্যবসায়ীর সাহায্য ছাড়াই ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার অথবা ফোন কলের মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতার কাছে খুচরা পণ্য বা সেবা বিক্রি করাকে ই-রিটেইলিং বলে।

ই-রিটেইলিং এর সুবিধা |Advantages of E-Retailing


ই-রিটেইলিং পদ্ধতি ব্যবসায়ী এবং তোস্তা উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক। এর ফলে ব্যবসায়ের সার্বিক পদ্ধতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ই-রিটেইলিং এর সুবিধাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. সুবিধাজনক পদ্ধতি (Convenient system): ই-রিটেইলিং এর মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই অনেক সহজ ও সুবিধাজনক। এর মাধ্যমে উভয়ই একে অপরের সাথে পরিপূর্ণ তথ্য বিনিময় করতে পারে। এজন্য কোনো মধ্যস্বকারীর প্রয়োজন হয় না।

২. বিশ্বব্যাপী সরবরাহ (World wide supply): প্রচলিত ধারার খুচরা দোকান শুধু আশপাশের ক্রেতাদের কাছেই পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু ই-রিটেইলিং পদ্ধতিতে বিশ্বব্যাপী পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা যায়। এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে পণ্য বা সেবার অর্ডার দিতে পারে।

৩. স্বল্প বিনিয়োগ (Minimum Investment): সৃজনশীল উদ্যোক্তারা ন্যূনতম বিনিয়োগ করেই ই-রিটেইলিং এর মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। একটি ওয়েবসাইট এবং ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো উৎপাদক তার পণ্যের অর্ডার নিতে পারেন। জাঁকজমকপূর্ণ শপিংমলে দোকান স্থাপনের মতো বাড়তি বিনিয়োগ এখানে প্রয়োজন নেই। তাই এ পদ্ধতিতে অল্প পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেই সাফল্য লাভের চেষ্টা করা যায়।

৪. ভিন্ন ভিন্ন পণ্য মূল্য নির্ধারণ (Differently price determination): এ পদ্ধতিতে বিক্রেতা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। ডিসকাউন্ট দেওয়া, প্রমোশন প্রভৃতি কাজ এ পদ্ধতিতে সহজেই করা যায়।

৫. উন্মুক্ত বাজার (Open market): ই-রিটেইলিং ক্রেতাদের জন্য বৈশ্বিক বাজার উন্মুক্ত করেছে। ফলে ক্রেতারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো স্থান থেকে কাঙ্ক্ষিত পণ্য বা সেবা খুঁজে অর্ডার দিতে পারে। দুর্লভ পণ্যের (সফটওয়্যার, বিদেশি ম্যাগাজিন) ক্ষেত্রে ই-রিটেইলিং বেশি কার্যকর ব্যবস্থা বলে ধারণা করা হয়।

৬. ঘরে বসে পণ্য বা সেবা কেনা (Buying product or service at house): ই-রিটেইলিং পদ্ধতিতে ক্রেতাকে ভিড় ঠেলে দোকানে গিয়ে পণ্য কিনতে হয় না। এতে বিক্রেতাকেও বেশি ক্রেতার চাপ সহ্য করতে হয় না। অনলাইন পদ্ধতিতে ক্রেতা ঘরে বসেই ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কিনতে পারেন।

৭. সরাসরি যোগাযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ (Direct communication and control): এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী পণ্যমূল্য, পণ্যসংক্রান্ত তথ্যাবলি, বিক্রির সময় ও শর্ত প্রভৃতি বিষয়ে ক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এতে ব্যবসায়ীর ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

৮. ব্যবসায়ের প্রচারগত প্লাটফর্ম (Promotional platform of business): প্রচলিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পণ্যদ্রব্যগুলো সাধারণত দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়। এতে সব পণ্য ক্রেতাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু ই-রেটেইলিং এর ক্ষেত্রে বিশ্বের যেকোনো স্থানের মানুষ যেকোনো সময় ইন্টারনেটের সাহায্যে পণ্যদ্রব্যগুলো দেখতে পারেন। তাই এটি ব্যবসায়ের প্রচারগত প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

৯. নতুন ও স্বতন্ত্র পণ্য প্রাপ্তি (Getting new and unique products): নতুন ও স্বতন্ত্র পণ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত সরবরাহ পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ই-রিটেইলিং এর সাহায্যে একজন ক্রেতা নতুন ও স্বতন্ত্র পণ্য বাজারে আসার সাথে সাথেই জানতে পারেন। এতে সুবিধাজনক সময়ের জন্য সংগ্রহ করা যায়।

১০. উত্তম বিক্রয়িকতা (Better salesmanship): প্রচলিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একজন বিক্রয়কর্মী ক্রেতার সাথে সব সময় সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেন না। ফলে অনেক তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। ই-রিটেইলিং এর মাধ্যমে বিক্রয়কর্মী পণ্য সম্পর্কিত তথ্যভাণ্ডার থেকে ক্রেতাদের পণ্য সম্পর্কে সহজেই জানাতে পারেন।

উপসংহারে বলা যায়, ই - রিটেইলি একটি অত্যাধুনিক ও সহজ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই বেশ উপকৃত হচ্ছে। ব্যবসায় ব্যবস্থাও অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই এই পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন ও ব্যবহার হওয়া উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url