যোগানের ধারণা |Concept of Supply

যোগান কাকে বলে? |What is Supply

সাধারণত কোনো দ্রব্যের বিক্রয়যোগ্য পরিমাণকে যোগান বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে যোগান ধারণাটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত থাকে, তাকে সে দ্রব্যের যোগান বলে।

মূলত দামের ওপর দ্রব্যের যোগান নির্ভর করে। দামের সাথে যোগানের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা সমমুখী। এজন্য দ্রব্যের দাম বাড়লে যোগান বাড়ে এবং দাম কমলেও যোগান কমে। 

অর্থনীতিবিদ রাগান (Ragan) ও থমাস (Thomas) - এর মতে,
একটি ফার্ম একটি নির্দিষ্ট দামে কেনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করে তাকেই যোগান বলে।
অধ্যাপক মেয়ার্স বলেন,
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য দামে কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করা হয় তার তালিকাকে যোগান বলে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে কোনো বিক্রেতা বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান একটি উৎপাদিত দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক থাকে, তাকে ঐ দ্রব্যের যোগান বলে।

যোগানের নির্ধারকসমূহ |Determinants of Supply


কোনো দ্রব্যের যোগান কতকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ বিষয়গুলোই হলো যোগানের নির্ধারক। সুতরাং, যেসব বিষয়ের ওপর কোনো দ্রব্যের যোগান নির্ভরশীল ঐসব বিষয়কে যোগানের নির্ধারক বলে। 

যোগানের নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হলো

১. পণ্যের দাম: পণ্যের নিজস্ব দামের ওপর যোগান অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত কোনো পণ্যের দাম বাড়লে যোগান বাড়ে এবং দাম কমলে যোগান কমে। কারণ দাম বাড়লে মুনাফা বাড়ে, দাম কমলে মুনাফা কমে। কলে যোগান রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয়।

২. অন্যান্য পণ্যের দাম: সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্রব্যের দাম বিবেচ্য দ্রব্যের যোগানকে প্রভাবিত করে। যেমন— চিনির বিকল্প গূড়ের দাম কমলে চিনির যোগান কমবে।

৩. পণ্যের চাহিদা: পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে যোগানও বৃদ্ধি পাবে।

৪. উৎপাদনকারীর ভোগ: উৎপাদনকারী নিজের উৎপাদিত দ্রব্য অধিক পরিমাণে ভোগ করলে বাজারে সেসব দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়। বিপরীতভাবে, উৎপাদনকারী কম ভোগ করলে সেসব দ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি পায়। 

৫. কৌশলের পরিবর্তন: উৎপাদনে নতুন নতুন কৌশল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত হয়। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে এবং একই দামে পূর্বের চেয়ে বেশি যোগান দেওয়া সম্ভব হয়।

৬. সময়: পর্যাপ্ত সময় দেওয়া না হলে অনেক সময় চাহিদানুযায়ী যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না।

৭. আবহাওয়ার প্রভাব: আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন বাড়ে এবং প্রতিকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়। যেমন— ধানের মৌসুমে একেবারেই যদি বৃষ্টি না হয় তবে ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে আবহাওয়া যোগানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

৮. কর ও ভর্তুকির প্রভাব: দ্রব্যের যোগান, কর ও ভর্তুকির দ্বারা প্রভাবিত হয়। কর আরোপ করলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে উক্ত দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়। অন্যদিকে, কোনো দ্রব্যের উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। তাই যোগান বৃদ্ধি পায়।

৯. যুক্ত যোগান: যেসব পণ্য যুক্তভাবে উৎপাদিত হয় তাদের একটির যোগান বাড়লে অপরটির যোগানও বাড়ে। যেমন— তুলার যোগান বাড়লে দামের পরিবর্তন ছাড়াই তুলা বীজের যোগান বাড়ে। 

১০. বাজারের ভিন্নতা: যে বাজারে ক্রয় - বিক্রয়ের পরিমাণ বেশি, সে বাজারে দ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি পায়। যে বাজারে ব্রুয় - বিক্রয়ের পরিমাণ কম, সে বাজারে দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়। 

অতএব বলা যায়, কোনো দ্রব্যের যোগান উপরের নির্ধারকসমূহ বা উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url