মূলধনের কার্যাবলি |Functions of Capital

আধুনিক যুগে উৎপাদনক্ষেত্রে মূলধন এমন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে যার ফলে উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। একসময় মূলধনকে ‘প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি’ বলা হতো। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের পার্থক্যের মূলে রয়েছে মূলধনের প্রাপ্যতার পার্থক্য। যে দেশ মূলধনে যত বেশি উন্নত সে দেশ উৎপাদনে তত বেশি উন্নত। উৎপাদন পদ্ধতি জটিল এবং বৃহদায়তন হওয়ায় মূলধনের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান উৎপাদন পদ্ধতিতে মূলধন নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে: 

১. প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার: অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশের সকল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খনিজ, বনজ, জলজ সম্পদসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার একমাত্র মূলধনের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমেই সম্ভব। এ সকল সম্পদ আহরণ, উত্তোলন ও ব্যবহার করতে মূলধন একান্ত প্রয়োজন।

২. অর্থনৈতিক ও সামাজিক বুনিয়াদ গঠন: অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বুনিয়াদ গঠন করা প্রয়োজন। উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ শক্তি, সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক প্রভৃতি মৌলিক শিল্প কারখানা গঠন করতে মূলধনের একান্ত প্রয়োজন।

৩. শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি: উৎপাদনক্ষেত্রে উন্নতমানের মূলধন ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে। বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠা ও শ্রমবিভাগ তনের ফলে আমেরিকা, জাপান, জার্মানি প্রভৃতি দেশের শ্রমিকেরা দক্ষতা অর্জন করেছে।

৪. বেকার সমস্যা দূরীকরণ: অধিক হারে মূলধন গঠিত হলে দেশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, রাস্তাঘাট, ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ও বেকারত্ব হ্রাস পায়।

৫. কৃষি ও শিল্পের আধুনিকীকরণ: কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে উন্নত যন্ত্রপাতি ও মূলধনী দ্রব্য ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদন কৌশল আধুনিক হয়।

৬. উৎপাদন বৃদ্ধি: উৎপাদনক্ষেত্রে উন্নত ও অধিক পরিমাণ মূলধন ব্যবহৃত হলে শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনও বাড়ে।

৭. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস: উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে উৎপাদনক্ষেত্রে অধিক মূলধন ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এজন্য উৎপাদনের গড় ব্যয় কমে যায়। জনসাধারণ কম দামে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং মোট সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায়।

৮. শ্রমবিভাগ প্রবর্তন: অধিক পরিমাণ মূলধন ব্যবহৃত হলে উৎপাদন পদ্ধতিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায়। ফলে বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব বিভিন্ন শ্রমিক শ্রেণির ওপর ন্যস্ত করা যায়।

৯. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: অধিক মূলধন ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে মজুরি বাড়ে এবং শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

১০. আবিষ্কারের সূচনা করে: শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে শ্রমিকদের অনুসন্ধিৎসা সৃষ্টি হয়। একই যন্ত্র নিয়ে বার বার কাজ করার ফলে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও কৌশল আবিষ্কার করতে পারে।

১১. শিল্পোন্নয়ন: শিল্পোন্নয়ন মূলত মূলধনের ওপর নির্ভরশীল। কেননা মূলধনের যোগান বাড়লে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।

১২. উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা: উৎপাদনক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধন ব্যবহৃত হলে উৎপাদন অবিরাম গতিতে চলতে থাকে ফলে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

সুতরাং, অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আধুনিক ও উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা প্রসারের জন্য মূলধন ব্যবহার অপরিহার্য। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূলধনের স্বল্পতার জন্যই উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙে উন্নয়ন ঘটাতে মূলধনই একমাত্র হাতিয়ার।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url