বাংলাদেশের মুদ্রানীতির |Monetary Policy of Bangladesh
বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সমস্যা| Problem of Monetary Policy of Bangladesh
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা নিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সমস্যাবলিসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. মৃদু বর্ধনশীল দামস্তর: দামস্তর বাড়তে থাকলে অনেক অযোগ্য উৎপাদনকারী ব্যবসায় প্রবেশ করে এবং টিকে থাকে। কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ে বলে উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়। এজন্য মুনাফার পরিমাণ হ্রাস পায়। শিল্পোৎসাহ কমে যায়। মৃদু বর্ধনশীল দামস্তর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফটকা কারবারির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায় ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক অবস্থা আনয়ন করে।
২. মৃদু পতনশীল সামন্তর: দামস্তর কমতে থাকলে মুনাফার পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে ব্যবসায় বাণিজ্য, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরিমাণ হ্রাস পায়।
৩. স্থির দামস্তর: স্থিতিশীল দামস্তর অর্থনৈতিক অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক নয়। স্থির দামস্তরে মুনাফা কম হবে। ফলে উদ্যোগণ শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের সম্প্রসারণে উৎসাহী কম হয়।
৪. পূর্ণ কর্মসংস্থান: দেশের আর্থিক নীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত পূর্ণ কর্মসংস্থান। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এটি বড় সমস্যা।
৫. অর্থের নিরপেক্ষতা: অর্থের কার্যকর যোগান স্থির রাখতে হলে অর্থের প্রচলন গড়ি বা উৎপাদন অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে অথবা জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে অর্থের যোগানের পরিবর্তন করতে হবে। এ সকল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রেখে অর্থের কার্যকরী যোগান স্থির রাখা খুবই কঠিন।
৬. অর্থনৈতিক অগ্রগতি: দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় এবং বিভিন্ন সমস্যা থাকায় বাংলাদেশে তথা উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি লক্ষণীয় অতি প্রকট।
বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সমস্যা সমাধানের উপায়|Ways to solve the problem of monetary policy in Bangladesh
বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন। নিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সমস্যাবলি সমাধানের উপায়সমূহ আলোচনা করা হলো:
১. অভ্যন্তরীণ মূল্যের স্থিতিশীলতা: মূল্যের অস্থিতিশীলতা সম্পদ ও উৎপাদিত পণ্যের বণ্টনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আর্থিক কর্তৃপক্ষকে অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে মূল্য স্থিতিশীল হয়।
২. দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন: দেশের সকল অব্যবহৃত সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যায়।
৩. সুলভ মুদ্রানীতি: দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও মূলধনের অভাবে সেটা সদ্ব্যবহার হয় না। এই মূলধনের অভারসাম্য দূর করার উদ্দেশ্যে সুলভ মুদ্রানীতি অনুসরণ করা উচিত।
৪. অর্থের যোগান বৃদ্ধি: নতুন টাকা ছাপিয়ে বা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ প্রভৃতির মাধ্যমে দেশে অর্থের যোগান বৃদ্ধি করে সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।
৫. দামস্তর স্থিতিশীল: দেশের আর্থিক নীতি এমনভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় এবং দামস্তরে মোটামুটি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশের আর্থিক নীতির প্রধান লক্ষ্য হলো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা এবং মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক নীতি এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে দেশের উন্নয়ন বিধান করা সম্ভব হয়। সুতরাং দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন এবং মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই বাংলাদেশের আর্থিক নীতির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।