সরকারি ঋণের উৎসসমূহ |Sources of Public Debt
সরকার সাধারণত স্বাভাবিক উৎস হতে প্রাপ্ত আয় দ্বারা ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটানোর জন্য অনেক সময় তার আয় পর্যাপ্ত বিবেচিত হয় না। এ অবস্থায় সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। সরকার বিভিন্ন উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করে। এসব উৎসকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. অভ্যন্তরীণ উৎস ও
খ. বৈদেশিক উৎস।
নিম্নে সরকারি ঋণের এসব উৎসের আলোচনা করা হলো:
ক. অভ্যন্তরীণ উৎস (Internal sources): অভ্যন্তরীণভাবে সরকার কতকগুলো উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করে।
এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ: সরকার ব্যক্তির কাছ থেকে বন্ড বিক্রি করে ব্যক্তির ভোগ হ্রাস অথবা সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারে। ব্যক্তির বন্ড ক্রয়ের ফলে ভোগ বা ব্যবসায়িক বিনিয়োগের উপর খুব বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। সাধারণত জনগণ তাদের অলস তহবিল দ্বারাই এরূপ বন্ড ক্রয় করে। সরকার এভাবে সংগৃহীত অর্থ তার বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করতে পারে।
২. আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ: সরকার বিভিন্ন অআর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে । যেমন Insurance কোম্পানি, বিনিয়োগ ট্রাস্ট, সঞ্চয়ি ব্যাংক ইত্যাদি। সরকার এদের কাছ থেকে বন্ড বিক্রি করে অলস অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী থাকে। কারণ সরকারি বস্তু সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন এবং উচ্চ তারল্যতা বিদ্যমান থাকে।
৩. বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ: বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে অনেক অব্যবহৃত অর্থ থেকে যায়। সরকার এসব ব্যাংকের কাছে বন্ড বিক্রি করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। অনেক সময় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে বন্ড ক্রয় করতে বাধ্য করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক বহুগুণ ঋণ সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় যে অতিরিক্ত ক্যাশ রিজার্ভ সৃষ্টি করে তার মাধ্যমে সরকারি বন্ড ক্রয় করতে পারে।
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক। তাই সরকার কোন সময় ঘাটতির সম্মুখীন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের বন্ড ক্রয় করে সরকারের খাতে অর্থ জমা দেয়। সরকারের চেক বহনকারী যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই অর্থ সংগ্রহের সুযোগ পায়।
খ. বৈদেশিক উৎসসমূহ: সরকার দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বৈদেশিক উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। নিম্নে সরকারি ঋণের বৈদেশিক উৎসসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. বিদেশি ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ: সরকার বিদেশি কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে, বিদেশি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ধরনের বন্ড ক্রয় করে সরকারকে ঋণ দিতে পারে। যদি সরকারি বন্ড ক্রয়ে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে কোন বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে ব্যক্তির কাছ থেকে সহজেই ঋণ গ্রহণ করা যায়।
২. সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ: সরকার বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সেবা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে।
৩. আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান: সরকার আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- সরকার বিশ্ব ব্যাংক (WB), আন্তর্জাতিক অর্থতহবিল (IMF), আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA), এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সরকার দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি সমস্যা দূরীকরণের জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে।
৪. বিদেশি সরকার: সরকার অনেক সময় বাজেটে ঘাটতি পূরণের জন্যও উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহের জন্য বিদেশি সরকারের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। এরূপ ঋণ বিভিন্ন ধরনের শর্তসাপেক্ষ।