দ্রব্য বিনিময় প্রথা কী?

দ্রব্য বিনিময় প্রথা কী| What's Barter System


প্রাচীনকালে মানুষের অভাব কম ছিল। কিন্তু কালক্রমে মানুষের অভাব বেড়ে যাবার ফলে ব্যক্তি বা পরিবারের একার পক্ষে সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে না। উদ্ভব হয় পন্য বিনিময়।

কারণ কোন দ্রব্যের প্রয়োজন হলে সে নিজের উৎপাদিত দ্রব্যের বিনিময়ে অন্যের নিকট থেকে তা পেত। অর্থাৎ যখন একটি দ্রব্যের পরিবর্তে অন্য একটি দ্রব্য সরাসরি বিনিময় করা হয় তখন তাকে দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলে।

উদাহরণ: একজন মুচি তার জুতার বিনিময়ে কৃষকের নিকট হতে চাল সংগ্রহ করত। ফল বিক্রেতা ফলের বিনিময়ে জেলের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করত।

দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধা|Demerits of Barter System


১. দ্রব্যের অবিভাজ্যতা: দ্রব্য বিনিময় প্রথার একটি প্রধান অসুবিধা হল দ্রবের অবিভাজ্যতা। এমন অনেক দ্রব্য আছে যেগুলোকে ভাগ করে বিক্রি করা যায় না। যেমন: একজন লোকের একটি মহিষ আছে, তার ২ কেজি আটার প্রয়োজন। আবার আটা বিক্রেতার ও ৫ কেজি মহিষের মাংসের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মহিষকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে আটার সাথে এর অংশবিশেষ বিনিময় করা সম্ভব নয়। এরূপ ক্ষেত্রে দ্রব্যের পরিমাণের অসামঞ্জস্যতার জন্য প্রত্যক্ষ বিনিময় ব্যবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি হয়।
দ্রব্য বিনিময় প্রথা কী
২. অভাবের অসামঞ্জস্যতা: দ্রব্য বিনিময় প্রথার একটি বড় অসুবিধা হল অভাবের অসামঞ্জস্যতা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার আটার বিনিময়ে মাংস পেতে চাইলেও মাংস বিক্রেতার যদি আটার প্রয়োজন না থাকে, তাহলে আটা ও মাংসের বিনিময় সম্ভব হবে না। দ্রব্য বিনিময় প্রথা কার্যকর হতে হলে ক্রেতা ও বিক্রেতার অভাবগুলো পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়জন। বাস্তব ক্ষেত্রে এরূপ মিল হয় না।

৩. নির্দিষ্ট মূল্যমানের অভাব: দ্রব্য বিনিময় প্রথায় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নির্ধারণের কোন নির্দিষ্ট পরিমাপক নেই। এরূপ ক্ষেত্রে বাজারে অসংখ্য বিনিময় হার বিদ্যমান থাকে যার কোনটিকেই স্থিতিশীল বলে মনে করা হয় না। তাই এক্ষেত্রে দ্রব্য সঠিক ভাবে বিনিময় করা যায় না।

৪. সঞ্চয়ের অসুবিধা: দ্রব্য বিনিময় প্রথায় দ্রব্যের মূল্য সঞ্চয়ের কোন উপায় নেই। অনেক দ্রব্যই সঞ্চয়যোগ্য নয় আবার অনেক দ্রব্য আছে যেগুলো সহজেই পচনশীল এবং দীর্ঘকালে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দ্রব্য বিনিময় প্রথায় সঞ্চয় হয় না। ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৫. মূল্য স্থানান্তরের সমস্যা: মূল্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও বিনিময় প্রথায় অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন - বাড়িঘর, জমিজমা, দোকানপাট এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় না। এ অবস্থায় মূল্য স্থানান্তরের অভাব অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করে।

অর্থাৎ আমরা বলতে পারি দ্রব্য বিনিময় ব্যবস্থার নানা সমস্যার জন্য কালক্রমে দ্রব্য বিনিময় ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অর্থের প্রচলন বিনিময় প্রথাকে সমস্যা থেকে মুক্ত করেছে এবং লেনদেনকে করেছে সহজতর।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url