সম্পদের বৈশিষ্ট্য |Characteristics of wealth
সম্পদের বৈশিষ্ট্য ৫ টি। যথা:
১. উপযোগ (Utility)
২. ক্ষমতাধীন বা আয়ত্তাধীন (Accessibility)
৩. সীমাবদ্ধতা (Limitation)
৪. পরস্পর পরিবর্তনশীলতা (Inter-change ability)
৫. পরিচালনাযোগ্যতা (Managebility)
১. উপযোগ: উপযোগ সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মানুষের কোনো অভাব মোচন করার ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। কোনো দ্রব্য সম্পদ বলে বিবেচিত হতে হলে অবশ্যই তার উপযোগ থাকতে হবে। অর্থাৎ, মানুষের কোনো না কোনো অভাব পূরণের কাজে তাকে লাগাতে হবে। উপযোগহীন দ্রব্য সামগ্রী দাম দ্বারা ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ্য নয় এবং সেজন্য তা সম্পদ হতে পারে না। একটা দ্রব্যের উপযোগিতা সবার কাছে এক রকম হয় না। একজন পিপাসার্ত ব্যক্তির কাছে পানির উপযোগ বেশি। আবার পিপাসা মেটার পর পানির উপযোগ হ্রাস পায়। আবার কোনো দ্রব্যের ব্যবহার ক্ষতিকর, নীতিবিরুদ্ধ হতে পারে কিন্তু তা সত্ত্বেও দ্রব্যটি কোনো লোকের চাহিদা মেটাতে পারলে অর্থনীতিতে এর উপযোগ আছে বলে গণ্য করা হয়। যেমন- সিগারেট, মদ ইত্যাদি।
প্রশ্ন: কয়টি উপায়ে সম্পদের উপযোগ বৃদ্ধি করা যায়?
উত্তর: চারটি উপায়ে সম্পদের উপযোগ বৃদ্ধি করা যায়।
যথা:
ক. আকার পরিবর্তন দ্বারা: কোনো জিনিসের আকারের পরিবর্তন করে তা ব্যবহারের উপযোগী করা যায়। যেমন- একটি কাঠের টুকরার সাধারণত কোনো উপযোগিতা নেই, কিন্তু কাঠ কেটে তার আকার পরিবর্তন করে নানা ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করলে এর ব্যবহারযোগ্যতা বা উপযোগিতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
খ. সময়োপযোগী ব্যবহার দ্বারা: একটি দ্রব্য সংরক্ষণ করে রাখলে তা পরবর্তীকালে বিশেষ করে অভাবের সময় বিক্রয় করা যায়। এভাবে দ্রব্যটির উপযোগিতা বৃদ্ধি করা যায়।
গ. স্থানান্তরকরণ: কোনো জিনিসের উপযোগ তার স্থান পরিবর্তনের দ্বারা বাড়ানো যায়। যেমন- গাছে ফুল ফুটলে তা কাজে লাগে না কিন্তু যখনই তা তুলে ঘরে সাজানো হয় তখনই এর উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
ঘ. চাহিদা মিটানোর দ্বারা: নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কিছুর চাহিদা যত বেশি থাকে অন্য সময় তা থাকে না। চাহিদা অনুযায়ী জিনিস পাওয়া ও এর ব্যবহার করাই হলো চাহিদাগত উপযোগ। যেমন— পিপাসা পেলে এক গ্লাস পানির চাহিদা যত থাকে, পিপাসা মেটার পর তত থাকে না।
২. ক্ষমতাধীন বা আয়ত্তাধীন: সম্পদকে কারো হতে হবে। এটা সম্পদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সম্পদকে আয়ত্তাধীন হতে হবে কারণ প্রয়োজনে এটিকে কাজে লাগাতে হবে। যদি তা করা না যায় তবে সেটি সম্পদ বলে বিবেচিত হবে না। আর তা কখনো স্বাধীনভাবে ব্যবহারও করা যাবে না। যেমন পাশের বাড়ির লোকের সম্পদ ঐ ব্যক্তির নিজস্ব; সেগুলো অন্য কারও নয়। কারো আয়ত্তাধীন বা এছাড়া সময়মতো যদি সম্পদ কাজে না আসে তবে তাকে সম্পদ বলা যায় না। সম্পদকে ক্ষমতাধীন বা আয়ত্তাধীন করা এর গুণাগুণ, পরিমাণ, সীমাবদ্ধতা ও ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে।
৩. সীমাবদ্ধতা: সম্পদ গুণগত বা পরিমাণগত দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ। শক্তি গুণগত আর সময় পরিমাণগত দিক দিয়ে সীমাবদ্ধ। তাই সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সময় ও শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি। পরিমাণগত সীমাবদ্ধতা বেশি স্পষ্ট । উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারের সীমিত আয়। এছাড়া একজন ব্যক্তির জন্য দিন-রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ। আবার একজন গৃহিণী গৃহের কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করতে পারে। সম্পদের গুণগত সীমাবদ্ধতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন— খুব কমসংখ্যক ব্যক্তির নাচ, গান ও ছবি আঁকার প্রতিভা আছে। আবার বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার জন্য একই শ্রেণির সব ছাত্র-ছাত্রী সমান জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।
৪. পরস্পর পরিবর্তনশীলতা: সম্পদ পরস্পর পরিবর্তনশীল হতে হবে। সম্পদ পরিবর্তনের মাধ্যমে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো যায়। সম্পদের পরিবর্তনশীলতা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথা:
ক. বিকল্প সম্পদ ব্যবহার: যখন কোনো একটি সম্পদের অভাব হয় তখন আমরা সে অভাব অন্য প্রকার একটি সম্পদ দ্বারা পূরণ করতে চেষ্টা করি। উদাহরণস্বরূপ, কোনো গৃহিণীর অর্থের অভাব থাকতে পারে। কিন্তু তার অবসর সময় এবং কিছু কিছু কাজে দক্ষতা ও পারদর্শিতা আছে। সুতরাং, সে তার এ সম্পদগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। যেমন – পোশাক তৈরি; টিউশনি করা ইত্যাদি।
খ. সম্পদের বিকল্প ব্যবহার: সম্পদের বিকল্প ব্যবহার করা যায়। যেমন- কেউ ২০,০০০ টাকা ব্যয় করে বেড়াতে যেতে পারে, অথবা সে ঐ টাকা দিয়ে ঘর সাজানোর জন্য কোনো উপকরণও কিনতে পারে। কোনো গৃহিণী তার জ্ঞান, দক্ষতা দ্বারা গৃহসজ্জার সামগ্রী বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারে, আবার নিজের ঘরও সাজাতে পারে।
গ. সম্পদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল: সম্পদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো পরস্পর নির্ভরশীলতা। কোনো কিছু তখনই সম্পদে পরিণত হয় যখন তার সাথে সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সংযোগ ঘটে। যেমন— বাড়িতে ফল ও শাক - সবজির বাগান করলে অর্থ বাঁচানো যায়। কিন্তু এটা করতে সময়, শক্তি ও জ্ঞানের প্রয়োজন হয়।
ঘ. রূপান্তর বা সৃষ্টি: খুব কম সম্পদই এদের নিজস্ব আকারে ব্যবহৃত হয়। রূপান্তর দ্বারা সম্পদের ব্যবহার ও প্রাপ্তি বাড়ানো যায়। এর ফলে মোট সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পারিবারিক লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। যেমন— ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিস দিয়ে শো-পিস তৈরি। আবার মানবীয় সম্পদ যেমন— জ্ঞান, দক্ষতা ইত্যাদিকে রূপান্তরিত করে অর্থ উপার্জন করা হয়। আবার এ অর্থকে রূপান্তরিত করা হয় দ্রব্য ও সেবাকর্মে।
ঙ. বহুবিধ ব্যবহার (Multiple Effect): একই সম্পদের বহুবিধ ব্যবহার থাকতে পারে। যেমন— টেলিভিশন। এটা মানুষের চিত্ত বিনোদন ও জ্ঞান লাভে সাহায্য করে; আবার সামাজিক মর্যাদার প্রতীকরূপেও কাজ করে। এছাড়া খাওয়ার টেবিলকে ব্যবহার করা যায় পড়াশোনা, ইস্ত্রি ও আলোচনা করার কাজে।
ঙ. বহুবিধ ব্যবহার (Multiple Effect): একই সম্পদের বহুবিধ ব্যবহার থাকতে পারে। যেমন— টেলিভিশন। এটা মানুষের চিত্ত বিনোদন ও জ্ঞান লাভে সাহায্য করে; আবার সামাজিক মর্যাদার প্রতীকরূপেও কাজ করে। এছাড়া খাওয়ার টেবিলকে ব্যবহার করা যায় পড়াশোনা, ইস্ত্রি ও আলোচনা করার কাজে।
চ. বিনিময়: বিনিময় অর্থ একটি সম্পদের বিনিময়ে অন্য একটির ব্যবহার। তবে সকল সম্পদের বিনিময় হয় না, যেমন— ভালোবাসা, স্নেহ ইত্যাদি। তবে অর্থনৈতিক সম্পদের বিনিময় হয়। এর জন্য মূল্য যাচাই ও পরিতৃপ্তির পরিমাণ বিবেচনা করতে হয়। যে সম্পদ দিয়ে অন্য সম্পদ লাভ করা হলো তা অধিক তৃপ্তিদায়ক হওয়া প্রয়োজন। যেমন— কেউ অর্থ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বা পোশাক কিনতে পারে। খাদ্যদ্রব্য বা পোশাকটি তার জন্য অর্থের চেয়ে তৃপ্তিদায়ক কি না সেটিই বিবেচনা করতে হবে।
৫. পরিচালনাযোগ্যতা: সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার বা পরিচালনা দ্বারা লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারই হলো পরিচালনা। মানুষ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সচেতন বা অবচেতনভাবে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে। গৃহ তৈরি থেকে শুরু করে আসবাব নির্বাচন সব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। সম্পদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে অভাব মোকাবিলা ও লক্ষ্য অর্জন করা যায়। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় এবং সম্পদের স্থায়িত্ব বাড়ে।