হুন্ডির ধারণা | Concept of Hundi

হুন্ডি কাকে বলে? What's Hundi


হুন্ডি যুগল অর্থনীতির অধীনে বিকশিত একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ লেনদেন পত্র। হুন্ডি বলতে বাণিজ্য ও ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আর্থিক দলিলসমূহকে বোঝায়। অর্থ প্রেরণের উপায়, ঋণ প্রদান এবং বাণিজ্যিক লেনদেন হিসেবে হুণ্ডি ব্যবহৃত হতো কৌশলগতভাবে হুন্ডি হলো এমন একটি লিখিত শর্তহীন আদেশ যা এক ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী অন্য এক ব্যক্তি লিপিবদ্ধ করেন এবং নির্দেশনামায় উল্লিখিত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়। হুন্ডি অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অংশ হওয়ার কারণে এর আইনগত অবস্থান নেই এবং সরকারের আওতাধীন আলোচনার কোনো বিধিও নেই। 

সুপ্রাচীন কাল ধরে একস্থান থেকে অন্য স্থানে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা প্রেরণ অসম্ভব ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দূরবর্তীস্থানে বাণিজ্যের জন্য হুন্ডি ছিল খুবই নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পদ্ধতি। যা বর্তমানে মুদ্রা বাজারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হুন্ডির সুবিধাসমূহ |Advantages of hundi


হুন্ডির বিভিন্ন সুবিধার কারণে সুপ্রাচীন কাল থেকে এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়। নিচে সুবিধাগুলো দেওয়া হলো:

i. হুন্ডি সহজ ও সাবলিল ভাষায় লেখা হয় বলে এটি অল্প শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত সকল ব্যবসায়ী বুঝতে পারে।
ii . সহজে বহনযোগ্য এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যয়ের প্রয়োজন পড়ে না। যা এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ।
iii. কোনো আইনগত মূল্য না থাকার কারণে এর আইনগত বাধা-নিষেধ নেই ফলে এটি তৈরিতে জটিলতাও কম।
iv. আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের ফলে দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেন করতে সহজ হয়।
v. হুন্ডির মাধ্যমে যেকোনো লেনদেন দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় যাতে সরাসরি দুটি পক্ষের লোক উপস্থিত থাকে। ফলে এর মাধ্যমে গোপনীয়তা রক্ষা করা সহজ।

হুন্ডির অসুবিধাসমূহ| Disadvantages of hundi


বর্তমান ব্যবসায়-বাণিজ্য জটিলতা আর ভৌগোলিক সীমানার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করা ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় যা নিচে দেওয়া হলো:

i. হুন্ডির আইনগত বৈধতা নেই।
ii. এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ পাচারে হুন্ডির ব্যাপক ব্যবহার হয়।
iii. সকল দেশের ভাষা এক নয় তাই হুন্ডি ব্যবসায়ী ব্যতীত অন্য কেউ বুঝতে পারে না।
iv. আইনগত বৈধতা না থাকায় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল।
v. আইনগত ভিত্তি না থাকায় এর আদান-প্রদান অবৈধ।
vi. হুন্ডির ব্যবহারে দেশীয় মুদ্রা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ে।
vii . হুন্ডির ব্যবহারের ফলে সরকার আয়করসহ বিভিন্ন রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়।

দেশীয় হুণ্ডি কাকে বলে?


প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্থানীয় প্রথা ও ভাষায় লিখিত যে দলিলের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বা তার আদেশানুসারে কোনো ব্যক্তিকে অথবা বাহককে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বা চাহিবামাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদানের শর্তহীন নির্দেশ দেয়া হয় তাকে দেশীয় হুণ্ডি বলে। এই উপমহাদেশে প্রাচীনকাল হতেই বিভিন্ন ধরনের হুণ্ডির প্রচলন লক্ষ করা যায়। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কতকগুলি হুণ্ডি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
হুন্ডির ধারণা
১. দর্শনীয় হুন্ডি: যে হুণ্ডির টাকা দর্শনমাত্র বা চাহিবামাত্র পরিশোধ করতে হয় তাকে দর্শনী হুণ্ডি বলে। অর্থাৎ এই হুণ্ডি উপস্থাপিত হওয়া মাত্রই এর অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এতে চেক বা চাহিবামাত্র দেয় বিনিময় বিলের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

২. মেয়াদি বা মুদ্দতি হুণ্ডি: যে হুণ্ডির টাকা হুণ্ডিতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট তারিখ বা মেয়াদের শেষে পরিশোধ করতে হয় তাকে মেয়াদি বা মুদ্দতি হুণ্ডি বলে। এর বৈশিষ্ট্য অনেকটা অঙ্গীকারপত্র এবং মেয়াদি বিনিময় বিলের মত। 

৩. শাহযোগ হুণ্ডি: সম্ভ্রান্ত ও ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই ধরনের হুণ্ডির প্রচলন দেখা যায়। আদিষ্ট ব্যক্তি এই জাতীয় হুণ্ডির টাকা কেবল কোন নির্দিষ্ট বিখ্যাত ব্যবসায়ীকে পরিশোধ করে থাকে। ফলে এ ধরনের হুণ্ডিকে হস্তান্তরযোগ্য দলিল হিসেবে গণ্য করা যায় না।

৪. নামযোগ হুণ্ডি: যে হুণ্ডিতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখা থাকে তাকে নামযোগ হুণ্ডি বলে। সাধারণত এই ধরনের হুণ্ডির টাকা, হুণ্ডিতে যার নাম থাকে তাকে পরিশোধ করা হয়। অবশ্য অনুমোদন বলে প্রাপকও টাকা পেতে পারে।

৫. ফরমানযোগ হুণ্ডি: যে হুণ্ডির টাকা আদেশানুসারে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করতে হয় তাকে ফরমানযোগ হুণ্ডি বলে।

৬. ঋণযোগ হুণ্ডি: যে হুণ্ডির মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা, ঋণদাতাকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে ঋণযোগ হুণ্ডি বলে। ঋণদাতার নির্দেশানুসারে অন্য কাউকেও এরূপ অর্থ প্রদান করা হতে পারে।

৭. জখমী হুণ্ডি: দূরে অবস্থিত ক্রেতার নিকট পণ্য প্রেরণের ক্ষেত্রে পণ্যের নিরাপত্তাস্বরূপ বিক্রেতা এরূপ হুণ্ডির আশ্রয় নেয়। তাই এর ধরন অনেকটা বীমাপত্রের অনুরূপ। এই হুণ্ডির ধারক আদিষ্টের নিকট হতে পণ্যের মূল্যের সাথে বীমার টাকাও আদায় করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষ এটাও হস্তান্তরযোগ্য হতে পারে।

৮. জাওয়ারি হুণ্ডি: এটি তহবিল পাঠানোর হুণ্ডি বিশেষ। কোনো লোক তহবিল পাঠাতে ইচ্ছা করলে প্রাপকের নামে হুণ্ডি লিখে ব্যাংককে প্রদান করে। ব্যাংক যোগাযোগ অথবা মধ্যস্থতার দ্বারা তা প্রাপকের নিকট পাঠিয়ে দেয়। প্রাপক তা প্রাপ্তির সংবাদ অনুরূপভাবে প্রেরকের নিকট প্রেরণ করে। প্রাপক এরূপ হুন্ডিও আগাম হস্তান্তরের মাধ্যমে ভাঙ্গিয়ে নিতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url