বীমা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
Q.1: বীমা কী এবং কেন প্রয়োজন?
উত্তর: বীমা হলো একটি চুক্তি। ইহা দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইন সম্মত চুক্তি। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অন্যপক্ষ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। প্রথম পক্ষ বীমাকারী এবং দ্বিতীয় পক্ষ বীমাগ্রহীতার মধ্যে যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে ক্ষতি পূরণ হয় না, মানুষের জীবনের কোন মূল্য পরিমাণ করা যায় না। তাই জীবন বীমার ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
যেকোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বীমা শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীমা জনসাধারণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় (প্রিমিয়াম) সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে সাহায্যে করে। মানুষের জীবন, ঋণ ও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এরূপ নিশ্চয়তা পাওয়ার ফলে লোকজন তাদের কার্যক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনুভব করে এবং কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে। ফলশ্রুতিতে, ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এভাবে ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয় এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। উদাহরণঃ জীবন বীমা চুক্তি,অগ্নি বীমা চুক্তি।
Q.2: বীমা করলে কী কী সুবিধা?
উত্তর: বীমা করার সুবিধাবলী:
(১) ইহা জীবনের ও সম্পদের নিরাপত্তা দেয়।
(২) ইহা মূলধন সৃষ্টি করে।
(৩) ইহা বৃদ্ধ বয়সের এবং আপদকালীন সম্বল।
(৪) ইহা মানসিক প্রশান্তি দেয়।
(৫) ইহা ব্যবসায়ে অর্থ যোগান দেয়।
(৬) ইহা মুদ্রা স্ফীতি হ্রাস করে।
(৭) ইহা সামাজিক সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করে।
Q.3: বীমা করার ধাপ সমূহ কী কী?
উত্তর: বীমা করার ধাপ সমূহ হলো:
১. বীমা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি অথবা ওয়েব সাইট হতে গ্রাহকের বিভিন্ন পরিকল্প সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং বিভিন্ন পরিকল্প পর্যালোচনা করতঃ পছন্দ মত পরিকল্প নিবার্চন করা।
২. বীমা গ্রাহকের পছন্দমত পরিকল্প গ্রহণের নিমিত্ত বীমা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করা। বীমাগ্রাহকের আবেদন ও দাখিলকৃত আনুসাংগিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করতঃ বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের অবলিখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বীমা প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির পর বীমা গ্রাহক কর্তৃক প্রিমিয়াম পরিশোধ করা।
৩. বীমা গ্রাহক কর্তৃক প্রিমিয়াম পরিশোধের পর বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এফ.পি.আর এর মাধ্যমে বীমা চুক্তি চূড়ান্তভাবে সম্পাদন করা। বীমা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এফ.পি.আর সম্পাদনের পর গ্রাহক কর্তৃক বীমা দলিল সংগ্রহ করা।
Q.4: প্রিমিয়াম কী?
উত্তর: বীমা চুক্তিতে বীমাকারী বীমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ বা দাবী পরিশোধের প্রতিশ্রুতির প্রতিদানই হচ্ছে বীমা প্রিমিয়াম। জীবন বীমার ক্ষেত্রে বীমাগ্রহীতা বীমাকারী/বীমা কোম্পানীকে প্রিমিয়াম প্রদানের ফলেই বীমাসংস্থা নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তিতে বা মেয়াদ পূর্তির আগেই বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হলে বীমা দাবী পরিশোধ করে থাকে। বিশেষজ্ঞগণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণে প্রিমিয়ামের সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
“বীমাচুক্তি বলে বীমাকারী বীমা গ্রহীতার নিজের বা অন্যের জীবন অথবা সম্পত্তির উপরে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোন অনিশ্চয়তা বা বিপদজনিত আর্থিক ক্ষতি লাঘব বা পূরণ করে দেয়া অথবা যথারীতি বীমা দাবি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের বিনিময়ে বীমা গ্রহীতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে বা নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অথবা এককালীন অর্থ গ্রহণ করে, তাকেই বীমার কিস্তি বা প্রিমিয়াম বলা হয় ।”
জীবন বীমার ক্ষেত্রে সাধারণতঃ বার্ষিক কিস্তিতে প্রিমিয়াম সংগৃহীত হয়ে থাকে। তবে বীমা গ্রহীতার সুবিধার্থে ষান্মাসিক, ত্রৈমাসিক এমন কি মাসিক প্রিমিয়াম প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে।
Q. 5: মোট বীমা অংক কী?
উত্তর: জীবন বীমার বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষের জীবন। জীবনের কোন মূল্য নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই জীবন বীমার ক্ষেত্রে বীমা গ্রাহক নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়ামের বিনিময়ে কোন বীমাকারী প্রতিষ্ঠান যে আর্থিক সুবিধা প্রদান করে, উক্ত আর্থিক সুবিধার পরিমাণকে মোট বীমা অংক বা Sum Assured বলে।
Q.6: প্রিমিয়ামের হার কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
উত্তর: বীমা আইন, ২০১০ অনুসারে বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করবেন অ্যাকচ্যুয়ারি। যে সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় তা হলো: বীমা অংক, বীমার মেয়াদ, বীমা গ্রাহকের বয়স, অফিস খরচ, Mortality Table, কমিশন খরচ ইত্যাদি।
Q.7: বীমা পরিকল্প কী?
উত্তর: বীমা ও বীমা গ্রাহকের মধ্যে বীমা কোম্পানী নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে কি কি ঝুঁকি গ্রহণ করবে অর্থ্যাৎ বীমা গ্রাহককে কি কি সুবিধা প্রদান করবে, কি কি সুবিধা প্রদান করবে না, কি কি বিষয়গুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকবে না, বিভিন্ন শর্তাবলি ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক অ্যাকচ্যুয়ারি কর্তৃক যে স্কীম তৈরি করা হয়, উক্ত স্কীমকে বীমা পরিকল্প বলে। উদাহরণ: মেয়াদী পরিকল্প, সাময়িক পরিকল্প।
তথ্যবহুল সুন্দর সাইট!