চামড়া শিল্পের সমস্যা

১. ঋণের স্বল্পতা: চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পায় না। কোরবানির সময় ব্যবসায়ীদের অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, কিন্তু প্রায়ই সরকার প্রয়োজনের তুলনায় এ ক্ষেত্রে কম ঋণ বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

২. প্রক্রিয়াজাতকরণের অসুবিধা: চামড়া সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যানারি শিল্প সারা দেশে সমভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রায়ই চামড়া তার গুণগত মান হারায়।

৩. বিদ্যুৎ ঘাটতি: প্রয়োজনীয় বা চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এ শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়। সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে ১৫৪ টি কারখানার মধ্যে ১২৪ টিতে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে।

৪. রাসায়নিক শিল্পের স্বল্পতা: চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এসব রাসায়নিক দ্রব্যের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয়।

৫. শ্রমিকদের অদক্ষতা: প্রায়ই চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। ফলে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়।

৬. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা: সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা উদ্যোক্তাদেরকে চামড়া শিল্পে আকৃষ্ট করতে পারেনি।

৭. সংরক্ষণের অভাব: চামড়া সংরক্ষণের জন্য চামড়ার আড়ৎ থাকা দরকার, যা আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

৮. চামড়া নীতি: চামড়া শিল্পের বিকাশের জন্য যে রকম আকর্ষণীয় নীতি উদ্যোক্তারা আশা করে সে রকম নীতি সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।

৯. চামড়া পাচার: প্রতি বছর এ দেশ থেকে চামড়া পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে যায়। ফলে এদেশের শিল্প কারখানায় চামড়ার অভাব দেখা যায়।

১০. পরিবেশ দূষণ: পরিবেশ দূষণ বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা কোনো শিল্প নগরী নেই। ফলে এদেশের শহরে, নগরে ও শহরতলীতে এ শিল্প স্থাপন করার ফলে ট্যানারি থেকে নির্গত বজা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।

১১. চামড়ার দাম হ্রাস: রপ্তানি ভাটার প্রভাব পড়ে কাঁচা চামড়ার দামেও। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরু। চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৫ ও ৯০ টাকা। ২০১৯ সালে ধার হয়েছিল ৪৫ ও ৫০ টাকা করে।

চামড়া শিল্পের সমস্যা সমাধানের উপায়


বাংলাদেশের চামড়া শিল্প বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

১. ঋণের পর্যাপ্ত যোগান: চামড়া শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে এবং সেই ঋণ সহজ হলে এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

২. বিদ্যুতের সংযোগ: চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করলে এ শিল্পের সমস্যার সমাধান হবে।

৩. রাসায়নিক দ্রব্যের পর্যাপ্ততা: প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে এ শিল্প আলোর মুখ দেখতে পারবে।

৪. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্টের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অধিক প্রয়োজন।

৫. পাচার রোধ: দেশের বাইরে যেন চামড়া পাচার না হতে পারে সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।

৬. বিদেশে বাজার সৃষ্টি: বিদেশে বাজার সৃষ্টি করার জন্য দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

৭. ট্যানারি শিল্প স্থাপন: দেশে আরও বেশি ট্যানারি শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।

৮. চামড়া নীতি: চামড়া শিল্পের বিকাশের জন্য সঠিক চামড়া নীতি প্রণয়ন করতে হবে। চামড়া নীতিতে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে।

৯. পৃথক ট্যানারি বা শিল্প নগরী স্থাপন: বাংলাদেশে ট্যানারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য সুপরিসর স্থানে একটি পৃথক শিল্পনগরী স্থাপন করতে হবে।

উপরের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প রপ্তানি আয়ে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url