পেটেন্ট এর সুবিধা | Advantages of Patent
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যুগে নতুন আবিষ্কার ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে পেটেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাগত সুবিধার পাশাপাশি আইনগত ও বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে পারে। নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পেটেন্ট - এর সুবিধা তুলে ধরা হলো:
১. আবিষ্কারকের উৎসাহ বৃদ্ধি (Encouragement of inventor): পেটেন্ট - এর মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রযুক্তি ও শিল্পের উন্নয়নে আবিষ্কারককে উৎসাহ দেওয়া। এর ফলে আবিষ্কারক তার আবিষ্কারের সুফল পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পান। এটি দেখে অন্য গবেষকগণও নতুন নতুন আবিষ্কারে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত হন।
২. উদ্ভাবকের স্বার্থ সংরক্ষণ (Save the rights of innovator): পেটেন্ট - এর সুবাদে একজন উদ্ভাবক তাঁর সৃষ্ট কর্মের আইনগত স্বীকৃতি বা স্বত্বাধিকার পান। একইসাথে কোনো প্রকার বাধা - বিপত্তি ছাড়াই তিনি মুক্তভাবে ও নিরাপদে সেটি ব্যবহার ও বিক্রি করতে পারেন। এভাবে পেটেন্ট - এর সাহায্যে মূল উদ্ভাবকের স্বার্থ সুরক্ষা বা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
৩. প্রচারণত সুবিধা (Promotional benefit): কোনো উদ্ভাবক পেটেন্ট নিবন্ধন পাওয়ার পর পেটেন্ট অফিস নিজ দায়িত্বেই তা জনগণের উদ্দেশ্যে প্রচার করে থাকে। এতে আবিষ্কারটি উদ্ভাবকের পক্ষে বিক্রি ও রপ্তানিতে বড় ধরনের সহায়তা হয়ে থাকে।
৪. আমদানির ক্ষেত্রে সুবিধা (Advantages in import): পেটেন্টকৃত নতুন প্রযুক্তি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারক বেশ উৎসাহবোধ করে থাকেন। এর মাধ্যমে আমদানিকারক উদ্ভাবকের সাথে চুক্তি করে উক্ত প্রযুক্তি নিরাপদে ব্যবহার বা বিক্রি করতে পারেন। পেটেন্টকৃত প্রযুক্তি আমদানি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে আইনগত তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
৫. জাতীয় উন্নয়ন (National development): দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিল্প ও কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন অপরিহার্য। আর এজন্য প্রয়োজন নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। পেটেন্ট এরূপ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও আমদানির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৬. বিনিয়োগ বৃদ্ধি (Increasing investment): পেটেন্ট - এর সুবাদে গবেষক ও বিনিয়োগকারীগণ তাদের পরিশ্রম ও মূলধনের ওপর যথেষ্ট পরিমাণে মুনাফা পেয়ে থাকেন। এতে তারা উত্তরোত্তর বেশি শ্রম ও মূলধন বিনিয়োগে উৎসাহী হন। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ে, যা শিল্প - বাণিজ্যের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৭. প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা (Assistance to transfer technology): পেটেন্ট - এর কারণে এক দেশ থেকে প্রযুক্তি লাইসেন্স - এর মাধ্যমে অন্য দেশে ব্যবহার করা যায়। এতে আইনগত সমর্থন থাকে। ফলে অনেক ঝামেলা থেকেও মুক্ত থাকা যায়। এভাবে পেটেন্ট - এর মাধ্যমে প্রযুক্তি স্থানান্তর করা সহজ হয়।
৮. বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি (Increasing foreign investment): পেটেন্টধারী উদ্যোক্তাগণ তাদের প্রযুক্তি অন্যান্য দেশেও কাজে লাগাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির অনেকটাই বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র অধিকার লাভ করে। তাই বেশি মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে তারা উক্ত প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের শিল্পে ব্যবহার করে। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ে ও বিশ্বায়নের সুযোগ তৈরি হয়।
সুতরাং বলা যায়, পেটেন্ট হলো এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। এটি সব আবিষ্কৃত, শিল্পে ব্যবহার উপযোগী, বৈধ বিষয়ের ওপর দেওয়া হয়। পেটেন্ট অর্জনের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোরাগণ উপরিউক্ত সুবিধাসমূহ পেয়ে থাকেন।