মূলধনের বৈশিষ্ট্য

মূলধন হলো মানুষ কর্তৃক উৎপাদিত একমাত্র উৎপাদনের উপকরণ। এই উৎপাদিত উপকরণ মানুষ ভোগ না করে নতুন দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহার করে। মূলধনের কতগুলো লক্ষণীয় দিক বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মূলধনের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ: 
১. উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান: উৎপাদনে জমি ও শ্রমিক মৌলিক উপাদান হিসেবে গণ্য হয়। মূলধন উৎপাদনের নিরেট মৌলিক উপাদান নয়। তবে মূলধন উৎপাদনক্ষেত্র থেকেই সৃষ্টি হয়। উৎপাদিত দ্রব্য পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহার হলে তা মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কাজেই প্রকৃতির প্রাথমিক দান হিসেবে মূলধন গণ্য হয় না।
২. সঞ্চয়ের ফল: মানুষ আয়ের একটি অংশ ভোগের জন্য ব্যয় করে এবং অবশিষ্ট অংশ সঞ্চয় করে। এই সঞ্চিত অর্থ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হলে তা মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। সুতরাং মূলধন সৃষ্টি হতে হলে মানুষকে তার আয়ের একটি অংশকে বর্তমান ভোগের জন্য ব্যয় না করে সঞ্চয় করতে হয়। সুতরাং সঞ্চয় দ্বারা মূলধন সৃষ্টি হয়।
৩. অস্থায়ী উপাদান: মূলধন ব্যবহারের মাধ্যমে নিঃশেষ হয় । উৎপাদন কাজে বারবার ব্যবহারের ফলে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল , বাড়িঘর সবই ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সুতরাং, মূলধনকে অস্থায়ী উপাদান বলা যায়।
মূলধনের বৈশিষ্ট্য
৪. উৎপাদন ব্যয়: অনেক সময় ভূমির যোগান দাম ধরা হয় না। তাই ভূমির কোনো উৎপাদন ব্যয় নেই মনে করা হয়। কিন্তু মূলধন মানুষের দ্বারা উৎপাদিত এবং পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই মূলধনের উৎপাদন খরচ অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। মূলধন প্রকৃতির দান নয়। মূলধন পাওয়ার জন্য কিছু না কিছু ব্যয় করতে হয়।
৫. গতিশীল: উৎপাদনের অন্যান্য উপাদান অপেক্ষা মূলধন তুলনামূলকভাবে গতিশীল। কারণ মূলধন বিভিন্ন খাতে ব্যবহারযোগ্য এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থানান্তরযোগ্য।
৬. বিভিন্ন বস্তুর জটিল সমষ্টি: মূলধনকে সমজাতীয় দ্রব্য হিসাবে গণ্য করা যায় না। বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়া থেকে মূলধন সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উৎপাদিত বস্তু একত্র করে যন্ত্রপাতি তৈরি হয়। কাজেই বিভিন্ন বস্তুর জটিল সমষ্টিকরণের মাধ্যমে মূলধন পাওয়া যায়।
৭. ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস: মূলধন ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। মূলধন ব্যবহারের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে তা ভবিষ্যতে অধিক আয়ের পথ সৃষ্টি করে।
৮. নিষ্ক্রিয় উপাদান: মূলধন নিজে কোনো কিছু উৎপাদন করতে পারে না। যেমন— যন্ত্রপাতি, কল - কারখানা কিছু উৎপাদন করে না, যদি এর সাথে শ্রমিক যুক্ত হয় তখনই উৎপাদন সম্ভব হয়। তাই মূলধন হলো নিষ্ক্রিয় উপাদান।
৯. অতীত শ্রমের ফল: মূলধন হলো অতীত শ্রমের ফল। এটি প্রকৃতি প্রদত্ত ভূমির মতো কোনো উপকরণ নয়। কলকারখানা যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল প্রভৃতি যা মূলধন হিসেবে বিবেচিত তা অতীত শ্রম দ্বারা সৃষ্ট।
১০. সমজাতীয় নয়: মূলধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, সকল মূলধন সমজাতীয় নয়। বাস্তবে মূলধন হলো স্বতন্ত্র ক্রিয়াসম্পন্ন বিবিধ বস্তুর একটি জটিল সমষ্টি। তাই বিভিন্ন মূলধনের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে এবং তাদের উৎপাদনশীলতাও এক রকম নয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url