সেবার বৈশিষ্ট্য| Features of Services

সে সকল বিষয়ের অভাব মোচনের ক্ষমতা আছে তাই হলো পণ্য বা সেবা। এ দৃষ্টিকোণ হতে পণ্য এবং সেবা একই জিনিস। তবে বাস্তবপক্ষে, পণ্য ও সেবার বৈশিষ্ট্য এক নয়। পণ্য হতে সেবার এমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যার সাহায্যে সেবাকে পণ্য হতে সহজেই আলাদা করা যায়। সেবার বৈশিষ্ট্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. অস্পর্শনীয় (Intangibility): বস্তুত সেবা হচ্ছে অস্পর্শনীয় ও অদৃশ্যমান। এ কারণে সেবার কোনো সুনির্দিষ্ট আকার নেই। সেবার এ বৈশিষ্ট্যের কারণে ক্রয়ের পূর্বে তা চোখে দেখা যায় না, অনুভব করা যায় না, স্বাদ কিংবা গন্ধ কিছুই নেয়া যায় না। সেবার অস্পর্শনীয়তা সম্পর্কে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেছেন,
সেবার অস্পর্শনীয়তা বলতে বুঝায় ক্রয়ের পূর্বে সেবা দেখা, স্বাদ নেওয়া, অনুভব করা, স্বাদ বা গন্ধ নেওয়া যায় না।
২. মালিকানা পরিবর্তিত হয় না (Not to be change of ownership): পণ্য ক্রয় - বিক্রয়ের ফলে বিক্রেতার নিকট হতে এর মালিকানা ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়, কিন্তু সেবা গ্রহণ বা সেবা প্রদানের ফলে সেবাদাতার নিকট হতে এর মালিকানা সেবাগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরিত হয় না। অর্থাৎ সেবা প্রদান বা গ্রহণের ক্ষেত্রে এর মালিকানায় কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না।

৩. সংরক্ষণ করা যায় না (Not to be preserved): ভবিষ্যতের জন্য সেবা কোনো অবস্থাতেই সংরক্ষণ করা যায় না। যেমন: চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও তা সংরক্ষণ করে ঘাটতি সময়ে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। আবার এক সময়ে প্রদত্ত ডাক্তারের সেবা অন্য সময়ে ব্যবহার করা যায় না।

8. অবিচ্ছিন্নতা (Inseparability): সেবার ক্ষেত্রে সেবাদাতা ও সেবা এক ও অভিন্ন সত্তা হিসেবে গণ্য হয়। এ কারণে যেখানেই সেবার প্রয়োজন সেখানেই সেবাদাতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কায়িক পণ্য প্রথমে উৎপাদিত হয়ে তা মওজুদে রূপান্তরিত হয়, মওজুদকৃত পণ্য পরবর্তীতে বিক্রয় এবং তারও পরে ভোগ করা হয়। কিন্তু সেবার ক্ষেত্রে প্রথমত বিক্রয় অতঃপর একই সাথে উৎপাদন ও ভোগ সংগঠিত হয়। সেবার অবিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেছেন,
সেবার অবিচ্ছিন্নতা বলতে বুঝায় সেবা প্রদানকারী মানুষ বা যন্ত্রপাতি থেকে সেবাকে পৃথক করা যায় না।
৫. সেবা গ্রহীতা ও সেবা দাতার উপস্থিতি (Presence of service provider and receiver): সেবার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- সেবা গ্রহণ বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার উপস্থিতি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে যে কোনো একটি পক্ষের অনুপস্থিতিতে সেবার আদান - প্রদান সম্ভব নয়।

৬. সেবার নির্দিষ্ট কোনো মান নেই (No specific standard of service): সেবার মানে পার্থক্য ব্যাপক হওয়ায় প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে পারে না। ফলে নির্ধারিত মানের কীভাবে সেবাদান করছে তার উপর সেবার মান নির্ভর সেবাদান করা সম্ভব হয় না। কে, কখন, কোথায় করে। তাই বলা যায়, সৈবার নির্দিষ্ট কোনো মান নেই। এ সম্পর্কে Philip Kotler & Gary Armstrong ( ফিলিপ কটলার এবং গ্যারি আর্মস্ট্রং ) বলেছেন,
সেবার বৈসাদৃশ্যতা বলতে বুঝায় সেবার মান নির্ভর করে কে, কখন, কোথায় এবং কিভাবে সেবা প্রদান করে তার উপর।
৭. বিনাশশীলতা (Perishability): সেবার অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর বিনাশশীলতা। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে সেবাদাতার অনুপস্থিতিতে বা মৃত্যুতে তার নিকট হতে আর সেই সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। আবার কোনো সেবা এক সময় পাওয়া না গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। যেমন: - বাস বা স্টেডিয়াম বা উড়োজাহাজের খালি আসন একবার হারানোর পর চিরতরে তা বিলীন হয়ে যায়।

পরিশেষে বলা যায়, মানুষের অভাব পূরণের জন্য পণ্য বা সেবার প্রয়োজন হলেও সেবার মধ্যে উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকে। যার ফলে সেবাকে পণ্য হতে সহজেই আলাদা করা যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url