উন্নত দেশের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য

উন্নত দেশ কাকে বলে?


উন্নত দেশ বলতে সে সব দেশকে বোঝায় যে সব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। এসব দেশে আধুনিক জ্ঞান - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং উৎপাদন ক্ষেত্রের প্রতিনিয়ত উন্নতি হয়। 

তাছাড়া এসব দেশ আর্থ - সামাজিক ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগামী। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি খাতগুলো খুবই উন্নত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সমাজের সম্পদের পরিমাণের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং বেকারত্বের হার খুবই কম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অব্যাহত উদ্বৃত্ত, মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ হারও এসব দেশের বেশি। 

অর্থাৎ যে সমস্ত দেশ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের যাবতীয় প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে উন্নয়নের সকল সূচকের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে সে দেশগুলোকে উন্নত দেশ বলে। যেমন- আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, জার্মানী ইত্যাদি দেশগুলো।

উন্নতদেশের বৈশিষ্ট্য


নিচে উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হল:

১. উচ্চ জাতীয় ও মাথাপিছু আয়: উন্নত দেশগুলোর জাতীয় ও মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ খুব বেশি। সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইংল্যান্ড প্রভৃতি উন্নত দেশের মাথাপিছু আয় গড়ে প্রায় ৩০,০০০ ডলারের বেশি।

২. উচ্চ জীবনযাত্রার মান: মাথাপিছু আয় বেশি বলে উন্নত দেশের জনগনের জীবনযাত্রার মানও খুবই উন্নত। ফলে এ সমস্ত দেশের জনসাধারণ জীবনধারণের আধুনিক সকল সুযোগ - সুবিধা ভোগ করতে পারে।

৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার: উন্নত দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে।

৪. মূলধনের প্রাচ্যু: উন্নত দেশে জনসাধারণের মাথাপিছু আয়বেশি। ফলে এ সমস্ত দেশে সঞ্চয়, মূলধন ও বিনিয়োগের পরিমানও অধিক।

৫. প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বাত্মক ব্যবহার: উন্নত দেশসমূহ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এ সব দেশে অধিক মূলধন ও দক্ষ জনশক্তি থাকায় প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদের সুষ্ঠুভাবে পূর্ণ ব্যবহার হয়ে থাকে।

৬. উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। উন্নত দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত।

৭. লেনদেনের ভারসাম্য: বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উন্নত দেশের বাণিজ্যিক ও লেনদেনের ভারসাম্য সর্বদা অনুকূলে থাকে। এ সব দেশে বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় দ্রব্য দেশের ভিতরেই উৎপাদন করা হয় এবং অধিকাংশ দ্রব্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত হয়। সে জন্য উন্নত দেশগুলো খুব কম দ্রব্য আমাদানি করে কিন্তু অধিক পরিমাণ দ্রব্য রপ্তানি করে থাকে।

৮. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম: উন্নত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সাধারনত ০% থেকে ১% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। জনসংখ্যা এ সব দেশে কোনরূপ সমস্যা নয় বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।

৯. শিক্ষার ব্যাপক প্রসার: উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে উন্নত দেশের সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূরীভূত হয়েছে।

১০. সামাজিক নিরাপত্তা: উন্নত দেশগুলোর জাতীয় আয়ের পরিমাণ বেশি বলে তাদের পক্ষে শ্রমিক শ্রেণিকে রোগ, দূর্ঘটনা, বেকারত্ব প্রভৃতি সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।

১১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে উন্নত দেশের প্রতিটি নাগরিক সমাজ সচেতন। ফলে এ সমস্ত দেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ সব দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উচ্চাসনে প্রতিষ্টিত।

১২. নারী স্বাধীনতা: নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে উন্নত দেশের নারীসমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সমান সুযোগ - সুবিধা ভোগ ও সমান দায়িত্ব বহন করে। 

১৩. উন্নত মুদ্রা বাজার: উন্নত দেশের মুদ্রা ও মূলধনবাজার খুবই উন্নত এবং বিস্তৃত। ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। ফলে মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সমাজে দ্রুত ও সহজে মূলধন গঠিত হচ্ছে। এ সকল বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিচার করলে দেখা যায় পৃথিবীতে উন্নত দেশ খুব কম।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url