উন্নয়নশীল দেশের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে?
উন্নয়নশীল দেশের ধারণা উন্নয়নশীল দেশ বলতে সে সব দেশকে বোঝায় যে সব দেশে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং ক্রমশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। যে সব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি রচিত হয়েছে এবং যে দেশগুলো অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠে ক্রমশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে সে সব দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলে।
অনুন্নত দেশের অর্থনীতি স্থবির হলেও উন্নয়নশীল দেশ বলতে একটি গতিশীল অর্থনীতি বোঝায়। উন্নয়নশীল দেশের জনগনের মাথাপিছু আয়ও জীবন যাত্রার মান উন্নত দেশের তুলনায় কম। তবে এসব দেশ সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকে। ফলে এসব দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বিকশিত হতে থাকে। যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ইত্যাদি।
উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য
উন্নয়নশীল দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হল:
১. পরিকল্পিত উন্নয়নের সূচনা: এ সমস্ত দেশ পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কেটে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খানিকটা অগ্রসর হয়।
২. কৃষি উন্নয়ন: উন্নয়নশীল দেশের কৃষি ব্যবস্থায় পুরাতন মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক উন্নত পদ্ধতির যাত্রা শুরু হয়। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে এবং উন্নত ধরণের বীজ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার শুরু হয়।
৩. শিল্প উন্নয়ন: এ সমস্ত দেশে শিল্পোন্নয়নের যাত্রা শুরু হয় এবং ক্রমাগত নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্টান স্থাপিত হয়। ফলে জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তবে কৃষিই এ সমস্ত দেশের জনগনের প্রধান উপজীবিকা।
৪. জাতীয় ও মাথাপিছু আয়ের ক্রমোন্নতি: কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে খানিকটা অগ্রসর হওয়ার কারণে দেশের জাতীয় আয় ও জনগনের মাথাপিছু আয় ধীরে হলেও ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
৫. মূলধন গঠন: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূলধন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জনগনের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে সঞ্চয়ের ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
৬. জীবনযাত্রার মান: এ সমস্ত দেশে জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে দেশের জনগনের জীবনযাত্রার মানের ক্রমোন্নতি ঘটে।
৭. জনসংখ্যার চাপ: চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এ সমস্ত দেশে মৃত্যুহার কমে। কিন্তু জন্মহার সে অনুপাতে কমে না। ফলে এ সমস্ত দেশে জনসংখ্যার চাপ অব্যাহত থাকে। তবে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবার গঠনের প্রতি মানুষের আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
৮. বেকার সমস্যা: শিল্পের ব্যাপক প্রসার না হওয়ার কারণে এ সমস্ত দেশে বেকার সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয় না।
৯. প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার: মূলধন, দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে এ সমস্ত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় না।
১০. প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য: উন্নয়নশীল দেশগুলো কৃষি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে এবং শিল্পজাত পণ্য আমদানি করে। তবে আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম বলে বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রায় সব সময়ই এ সমস্ত দেশের প্রতিকূলে থাকে।
১১. সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ: উন্নয়নশীল দেশের সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে উন্নয়নের অনুকূল থাকে না। যৌথ পরিবার প্রথা, পর্দা প্রথা, রক্ষণশীল মনোভাব, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোবৃত্তি ও নেতিবাচক জীবনবোধ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। তবে শিক্ষার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্ত বাঁধাগুলো ক্রমশ অপসারিত হয়।
১২. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দূর্বলতা: এ সমস্ত দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এ সমস্ত দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত করে। তবে শিক্ষার প্রসারের ফলে এ সমস্যা ক্রমশ হ্রাস পায়।