মান কি এর ধারণা ও বৈশিষ্ট্য

বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায়িক জগতে মানসম্মত পণ্য বা সেবা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায় টিকে রাখা সম্ভব নয়। পণ্য বা সেবার মান যদি ক্রেতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয়, তাহলে সুনামের সাথে ব্যবসায় পরিচালনা করা অসম্ভব।

তাই বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য বা সেবার মান ধরে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য হয়। এখন দেখা যাক মান কি? সাধারণভাবে মান সম্পর্কে বলা যায়, ক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরণে পণ্যের সক্ষমতাই হলো মান। 

অন্যভাবে বলা যায়, মান বলতে পণ্যের নির্দিষ্ট গুণগত বৈশিষ্ট্যসমূহকে বুঝায় যা ভোক্তা বা ক্রেতাদের চাহিদা মেটায়, সন্তুষ্টি, বিধান করে এবং যার উপযোগিতা বা কার্যকারিতা ভোগকারী বা ক্রেতাদের কাছে প্রত্যাশার সমান বা তার চেয়েও বেশি। পণ্যের এসকল গুণগত বৈশিষ্ট্য হলো- পণ্যের সাইজ, পণ্যের ডিজাইন, ফিনিশিং, কালার, উপাদান, টেকসই ক্ষমতা ইত্যাদি। মান সম্পর্কে American society for quality control এ অভিমত হলো,
একটি পণ্য বা সেবার মান বলতে সেই প্রকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যসমূহকে বুঝায় যা এর সন্তুষ্টি অথবা প্রয়োজনীয়তা পূরণের সক্ষমতাকে প্রকাশ করে।
এ সম্পর্কে আবার ড. ডব্লিউ. আর. স্প্রিজেল বলেছেন,
পণ্যের প্রকৃতি, আকার, উপাদান, কর্মক্ষমতা, কার্যকারিতা, সঠিকতা, সম্পূর্ণতা এবং রং ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের সমষ্টিকে পণ্যের মান বলা হয়।
উপরোক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞা হতে মান সম্পর্কে নিম্নোক্ত ধারণাগুলো পাওয়া যায়:
  • মান হলো পণ্য বা সেবার অন্তর্নিহিত গুণ;
  • এ গুণের সাহায্যে ক্রেতার প্রত্যাশা পূরণ করা হয়
  • মান হলো ক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরণে পণ্যের সক্ষমতা
  • পণ্যের সাইজ, ডিজাইন, ফিনিশিং, কালার, টেকসই ক্ষমতা ইত্যাদি মানের উপাদান।
পরিশেষে বলা হয়, পণ্যের যে সকল গুণ বা বৈশিষ্ট্য ক্রেতাদের চাহিদা মেটায়, সন্তুষ্টি বিধান করে এবং যার উপযোগিতা বা কার্যকারিতা ভোগকারী বা ক্রেতাদের কাছে প্রত্যাশার সমান বা তার চেয়েও বেশি তাকে মান বলে।

মানের বৈশিষ্ট্য |Features of Quality


পণ্য বা সেবার মান বা গুণাগুণ এ বিষয়টি আপেক্ষিক। কারণ কোনো পণ্য একজন ক্রেতার নিকট মানসম্মত মনে হলেও অন্য ক্রেতার নিকট তা নাও হতে পারে। অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে পণ্যের মান বা গুণাগুণ সমরূপ হয় না। তবে মানের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা সকলেই প্রত্যাশা করে। মানের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. কার্যসম্পাদন (Perfomance): কোনো পণ্য বা সেবার দ্বারা ক্রেতা বা ভোক্তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে ক্রেতারা উক্ত পণ্যটি ক্রয়ে আগ্রহী হয়। পণ্যের মধ্যে এরূপ কার্যসম্পাদনের গুণ বা বৈশিষ্ট্যই হলো পণ্যের মান। তাই বলা যায়, পণ্যের কার্যসম্পাদনের ক্ষমতা মান বলে বিবেচিত হয়। যে পণ্য বা সেবা কার্যসম্পাদনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না সেই পণ্য বা সেবা কেউ ক্রয় বা সংগ্রহ করে না।

২. বিশিষ্টতা (Speciality): বিশিষ্টতা বলতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। যে কোনো পণ্যের একটি মৌলিক গুণ থাকে। এ গুণটির পাশাপাশি আরো কিছু বৈশিষ্ট্য পণ্যের মধ্যে থাকে যা উক্ত পণ্যের বিশিষ্ট গুণ হিসেবে গণ্য হয়। যেমন- মোবাইল সেটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- টেলিফোন কথোপকথন, কিন্তু এর পাশাপাশি বিশিষ্টতা হলো গান শোনা, ছবি তোলা, বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলা, ইন্টানেট ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদি। এরূপ গুণ পণ্যের মান হিসেবে গণ্য হয়।

৩. নির্ভরযোগ্যতা (Dependability): পণ্য বা সেবার উপর ক্রেতা বা ভোক্তার নির্ভরযোগ্যতা পণ্য বা সেবার অন্যতম মান হিসেবে গণ্য হয়। যে পণ্য বা সেবার উপর ক্রেতা বা ভোক্তা যত বেশি নির্ভর করতে পারে সে পণ্য বা সেবা তত বেশি মানসম্মত তা নিশ্চিত্তে বলা যায়। যেমন- কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের উপর আমরা নির্ভর করতে পারি, অথবা কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপর নির্ভর করতে পারি। এরূপ নির্ভরযোগ্যতাই হলো মান।

৪. স্থায়িত্ব (Stability): পণ্যের স্থায়িত্ব পণ্য মানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। যে পণ্য যত বেশি স্থায়িত্ব হয়, সে পণ্য তত বেশি মানসম্মত বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ এরূপ পণ্য থেকে ভোক্তা অনেক দিন পর্যন্ত উপযোগিতা লাভ করতে পারে। স্থায়িত্বের কারণে জাপানী গাড়ি, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি মানসম্মত বলে ধরা হয়। তাছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে ক্রেতারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

৫. মেরামতের সুযোগ (Repairing opportunities): পণ্য ক্রয়ের পর কখনও যদি তা বিকল হয়ে যায়, তখন তা মেরামত করা যাবে কিনা পণ্য ক্রয়ের সময় ক্রেতারা তা বিবেচনা করে । যদি কোনো পণ্য ওয়ান টাইম ব্যবহারযোগ্য হয় অর্থাৎ বিকল হলে মৈরামতের সুযোগ না থাকে তবে ঐ পণ্য ক্রয়ে ক্রেতা আগ্রহ দেখায় না। তাই যে পণ্যের ক্ষেত্রে মেরামতের সুযোগ থাকে, সেই পণ্য মানসম্মত বলে গণ্য হয়।

৬. ডিজাইন (Design): পণ্যের ডিজাইন পণ্য মানের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। পণ্যের অন্তর্নিহিত গুণ যাই থাকুক না কেন তার ডিজাইন যদি ক্রেতা বা ভোক্তার নিকট পছন্দ না হয় তাহলে ক্রেতা তা ক্রয় করতে আগ্রহী হয় না। যেমন- গাড়ি, পোশাক, মোবাইল সেট প্রভৃতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা ডিজাইনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়। তাই ডিজাইন পণ্য মানকে নির্দেশ করে।

পরিশেষে বলা যায়, পণ্য বা সেবা মানের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত লক্ষ্য করা যায়। তবে আলোচিত এসকল বৈশিষ্ট্য ছাড়াও মানের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যেগুলোর কারণে পণ্য বা সেবাটি ক্রেতা বা ভোক্তাদের নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url