মান নিয়ন্ত্রণের কার্যাবলি| Functions of Quality Control
মান নিয়ন্ত্রণ করা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে মান নিয়ন্ত্রণ কোনো একক কাজ নয়। এটি কতকগুলো কাজের সমষ্টি। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপক যে সকল কাজ সম্পন করেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা (Establishment of standard): মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার সর্বপ্রথম কাজ হলো উৎপাদিতব্য পণ্য বা সেবার মান ঠিক করা। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত এ মান বজায় রেখেই পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হয়। মান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন উৎপাদিতব্য পণ্যের মান নির্ধারণ কর হয়, অন্যদিকে তেমনি নির্ধারিত মানের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, উৎপাদন পদ্ধতি, প্রযুক্তি ইত্যাদির মানও নির্ধারণ করা হয়।
২. গুণগত মানের উপকরণ সংগ্রহ (Collection of quality elements): উৎপাদিতব্য পণ্যের আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা করার পর উক্ত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা মান নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ কাজের অংশ হিসেবে মান নিয়ন্ত্রককে প্রয়োজনীয় উপকরণের মান নির্ধারণ, উৎস নির্ধারণ, ফরমায়েশের পরিমাণ, উপকরণ- মওজুদকরণ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে সম্পাদন করতে হয়।
৩. উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন (Inspection of production process): মান নিয়ন্ত্রণের আরেকটি অন্যতম কাজ হলো সার্বক্ষণিকভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করা। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য মান নিয়ন্ত্রক য বেশি উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করবে, মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তত বেশি ফলপ্রদ হবে এ কথা নিঃসন্দেহে ভাবা যায়। এ কাজের জন্য মান নিয়ন্ত্রকের স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৪. মান মূল্যায়ন (Evaluation of quality): পণ্য উৎপাদন কালে যে পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে তার মান মূল্যায়ন করা মান নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রক পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি, গাণিতিক পদ্ধতি, কম্পিউটার পদ্ধতি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনে ল্যাবরেটরির সাহায্যেও মান মূল্যায়ন করা যায়।
৫. মানের সাথে তুলনাকরণ (Comparison with standard): মান মূল্যায়নের পর মান নিয়ন্ত্রকের কাজ। হলো উৎপাদিত পণ্যের মানের সাথে পূর্ব নির্ধারিত আদর্শ মানের তুলনা করা। এরূপ তুলনার ক্ষেত্রে বাস্তবে উৎপাদিত পণ্যের সাথে মান পণ্যের বিভিন্ন দিক যেমন- মান, রং, আকার, ওজন, উপাদান ইত্যাদিকে বিবেচনা করা হয়। মান তুলনাকরণের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি টেস্টও করা হতে পারে।
৬. বিচ্যুতি শনাক্তকরণ (Identifying deviations): মান তুলনাকরণের পর বিচ্যুতি শনাক্ত করা মান নিয়ন্ত্রণের আরেকটি অন্যতম কাজ হিসেবে গণ্য হয়। আদর্শ মানের সাথে বাস্তব উৎপাদিত পণ্যের বিচ্যুতি অনেক সময় সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। তাই বিচ্যুতি শনাক্তকরণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও হতে পারে। বিশেষ করে কেমিক্যাল ও বিপদজনক পণ্যের বিচ্যুতি নির্ধারণে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
৭. ভুল-ত্রুটি সংশোধন (Correction of error): বিচ্যুতি শনাক্তকরণ কাজের মাধ্যমে যদি কোনো বিচ্যুতি ধরা পড়ে তাহলে তা সংশোধনের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ভুল - ত্রুটি সংশোধনের জন্য ত্রুটিযুক্ত উৎপাদিত পণ্যকে পুনরায় উৎপাদনের প্রাথমিক স্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া কেন এরূপ ত্রুটিযুক্ত পণ্য উৎপাদিত হয়েছে বা এর জন্য কে বা কারা দায়ী তাও এখানে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়।
৮. উপযুক্ত মান নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রয়োগ (Application of proper quality control techniques): মান নিয়ন্ত্রণের আরেকটি অন্যতম কাজ হলো উপযুক্ত মান নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রয়োগ করা। এ কাজের অংশ হিসেবে মান নিয়ন্ত্রক বর্তমানে প্রয়োগকৃত নিয়ন্ত্রণ কৌশল হতে আরো উন্নতমানের নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রয়োগের চিন্তা - ভাবনা করেন। এ কারণে বর্তমানে উৎপাদন ক্ষেত্রে সি. সি. ক্যামেরা লাগানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
৯. উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন (Development of production process): উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করা যে কোনো মান নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমান উৎপাদন প্রক্রিয়া যদি পুরাতন ও গতানুগতিক হয়ে যায়, তাহলে তা অবশ্যই আধুনিক ও মানসম্মত করা উচিত। এ বিষয়টি বিবেচনা করে মান নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করা মান নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কাজ হিসেবে গণ্য হয়।
১০. মান গবেষণা ও উন্নয়ন (Research & development of quality): মান গবেষণা ও উন্নয়ন করা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অন্যতম বিষয়। কারণ প্রতিযোগিতার এ যুগে বর্তমান মানকে নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বর্তমানে যে মানের পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হচ্ছে, কিভাবে তার মান আরো উন্নত করা যায়, এ বিষয়ে চিন্তা - ভাবনা ও গবেষণা করা প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজটি মান নিয়ন্ত্রণের একটি স্বতন্ত্র কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, মান নিয়ন্ত্রণে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তার সফলতার উপর মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি নির্ভর করে। এ কারণে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে মান নিয়ন্ত্রণে উপরে আলোচিত কাজগুলো অবশ্যই সম্পাদন করা উচিত।