মান নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বা কৌশলসমূহ
পূর্ব নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা এবং মান এর সাথে বর্তমান কাজের কোনো অমিল লক্ষ্য করা গেলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণের সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় হলো মান নিয়ন্ত্রণ। মান নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশল বিদ্যমান। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো:
১. সংখ্যাত্মক উপাত্ত বিশ্লেষণ (Quantitative data analysis): যে পদ্ধতি অনুযায়ী কার্য ফলাফলের সংখ্যাত্মক উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিচ্যুতি নির্ধারণ ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে সংখ্যাত্মক উপাত্ত বিশ্লেষণ বলে। সাপ্তাহিক উৎপাদনের পরিমাণ বিশ্লেষণ এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতাধীন। ধরা যাক, একটা উৎপাদন ইউনিটে সপ্তাহে ১০০ একক পণ্য উৎপাদিত হয়। নির্দিষ্ট সপ্তাহ শেষে একজন তত্ত্বাবধায়ক বা ঊর্ধ্বতন দেখলেন উৎপাদন ইউনিটে ৮০ একক পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। কম হওয়ার কারণ বের করে পরবর্তী সপ্তাহে সেই কারণ দূর করার ব্যবস্থা নেয়া হয়।
২. বিশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ (Special report analysis): ভিতরের বা বাইরের কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কোনো বিষয়ে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনের আলোকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হলে তাকে বিশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ বলে। নিয়মিত তথ্য - উপাত্ত সকল ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়াও বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপের জন্য অনেক সময় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে বিশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- কর্মীদের কর্মস্থল পরিত্যাগের হার ও এর কারণ নির্ধারণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এরূপ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
৩. ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ (Personal observation): নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃক অধস্তনদের কাজ, কাজের প্রতিবেদন বা হিসাবপত্রাদি দেখাকে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলে। প্রতিষ্ঠানের এম.ডি কারখানা পরিদর্শনে গেলেন। উৎপাদন কার্য ঘুরে দেখলেন। কারখানার কর্মপরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা নিলেন। কিছু রেজিস্টার খুলে দেখলেন। দু - চারজন কর্মরত শ্রমিক ও সুপারভাইজারদের সাথেও কথা বললেন। এরপর কারখানার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করে কাজের খোঁজ - খবর নিলেন। এক্ষেত্রে এম. ডি সাহেবের কাজ ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বা পরিদর্শন হিসেবে গণ্য।
৪. অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা (Internal audit): প্রতিষ্ঠানের হিসাব - পত্রাদি নিরীক্ষা, ত্রুটি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপের জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হলে তাকে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বলে। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়ম দূরীকরণে এরূপ নিয়ন্ত্রণ কৌশল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন বিভাগের কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কি না বা উৎপাদিত পণ্যের মান ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিরীক্ষা কমিটি গঠন করে মান নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৫. গ্যান্ট চার্ট (Gantt chart): এফ.ডব্লিউ. টেইলর - এর সহকর্মী ও অনুসারী এইচ.এল.গ্যান্ট এরূপ চার্ট বা নকশার উদ্ভাবক। তিনি সময় নিরীক্ষার আওতায় প্রতিটা কাজের জন্য কতটা সময়ের প্রয়োজন এবং তা কখন শুরু হয়ে কখন শেষ হবে তা রেখাচিত্রে উপস্থাপন করেন। এতে কোন কাজগুলো চলছে কোন কোন কাজ কখন শুরু হয়েছে ও কখন কোন কাজ শেষ হবে তা বোঝা যায়। এখন বাস্তবায়ন কার্যের শুরু ও শেষ সময় রেখাচিত্রে ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের কালিতে উপস্থাপন করলে সহজেই ঊর্ধ্বতন প্রতিটা কাজ বাস্তবায়নের অবস্থা বুঝতে পারেন। এতে কোন কাজ ঠিক সময়ে হয়নি তাও সহজে বোঝা যায় এবং সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা সম্ভব হয়।
৬. সংকটময় পথ পদ্ধতি (Critical Path Method / CPM): কোনো কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোটাকালিতে একটা কাজ আরেকটার সাথে সংযোগ স্থাপন করলে যে পথের সৃষ্টি হয় তাকে সংকটময় পথ বলে। এ পদ্ধতিতে কাজগুলোকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে কাজটি শুরু ও শেষ সব মিলিয়ে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়। এভাবে সাজানোর পর যে সকল কাজে অধিক সময় ব্যয় হবে বা অধিক সময় ধরে কাজটি সম্পাদিত হবে। সেগুলোকে মোটা কালিতে দাগিয়ে তা চিত্রে উপস্থাপন করা হয়।
৭. পার্ট (Program Evaluation & Review Technique / PERT): যে পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে তা নির্দিষ্টপূর্বক গুরুত্বপূর্ণ যে কাজগুলো বিরামহীনভাবে সম্পাদিত হবে তা মোটা রেখার দ্বারা সংযুক্ত করে ‘সংকটময় পথ’ নির্দেশপূর্বক ঐ কার্য সম্পাদনে অধিক সতর্কতা অবলম্বন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হয় তাকে পার্ট বলে।
সংকট পথ হলো মোটা দাগের আওতায় বিচ্যুতি ঘটলে সামগ্রিক কাজের ওপর তার অধিক নেতিবাচক প্রভাব প্রদর্শিত কার্যসমূহ যেখানে ভুল হলে পড়ে। যে কারণে ঊর্ধ্বতন কার্য চলাকালে এ বিষয়গুলোতে অধিক দৃষ্টি নিবন্ধ রাখেন এবং বিচ্যুতি ঘটলে তা দ্রুত দূরীকরণে সচেষ্ট হন।