বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারণা
দুই বা ততোধিক স্বাধীন - সার্বভৌম দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য সংগঠিত হয় তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ যদি কোন দেশ তার ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে অবস্থিত এক বা একাধিক দেশের সাথে দ্রব্য সামগ্রী ও সেবাকার্যের আদান - প্রদান করে তবে তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে।
যে দেশ যে দ্রব্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা পাবে সে দেশ সে সব দ্রব্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করবে। বিনিময়ে যে সব দ্রব্য উৎপাদনের আপেক্ষিক সুবিধা কম সে সব দ্রব্য আমদানি করবে। এ ভাবেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য
১। মুষ্টিমেয় দ্রব্য রপ্তানি এবং অধিক সংখ্যক দ্রব্য আমদানি: বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাত্র কয়েকটি দ্রব্য রপ্তানি করে। বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে কাঁচাপাট, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, মাছ প্রধান। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানিকৃত দ্রব্যের সংখ্যা অগণিত অতিক্ষুদ্র একটি পিন থেকে আরম্ভ করে খাদ্যশস্য পর্যন্ত বহু সংখ্যক দ্রব্য বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়।
২। মুষ্টিমেয় দেশের সাথে বেশির ভাগ বাণিজ্য: বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাণিজ্য মাত্র কয়েকটি দেশের সাথে সংঘটিত হয়ে থাকে। এ সব দেশ হল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, ভারত, জাপান ও চীন। ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশী পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যা দেশের মোট রপ্তানির ২০.০৬ শতাংশ।
৩। বিলাস দ্রব্যের আমদানি: স্বাধীনতার পর বিলাস দ্রব্যের আমদানির উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে বিলাস দ্রব্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪। জলপথে অধিক বাণিজ্য: বিদেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সমুদ্র পথে সংঘঠিত হয়ে থাকে। এ সব বাণিজ্য চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। কেবল ভারত, বার্মা, নেপাল ও ভূটানের সাথে স্থলপথে বাণিজ্য সংঘটিত হয়ে থাকে।
৫। বৈদেশিক প্রাধান্য: বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের চাবিকাটি আজও বিদেশীদের হাতে। বিদেশী ব্যাংক, বীমা ও জাহাজ ছাড়া এ দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হয়।
৬। জনশক্তি রপ্তানি: বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের এক বৃহৎ অংশ অর্জিত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি করে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ জনসমষ্টি কর্মরত, এ সকল জনসমষ্টি দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে। যার কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭। ওয়েজ আর্নারস স্কীম: বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকেরা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সাহায্যে তাদের বাংলাদেশী প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের আমদানি নীতিতে উল্লেখিত কতিপয় পণ্য আমদানি করতে পারে। এই স্কীমকে ওয়েজ আর্নারস স্কীম বলে, এই স্কীম ১৯৭৪ সন থেকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে এবং এর আওতায় আমদানির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।
৮। সার্কভুক্ত দেশের সাথে বাণিজ্য: প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বয়ে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাথে পরষ্পর আস্থাহীনতার কারণে খুবই ধীর গতিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৯। বেসরকারি খাত: স্বাধীনতার পর পরই দেশে সরকারি খাতে আমদানি - রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হতো। বর্তমানে বাংলাদেশে বাজার অর্থনীতি চালু হয়েছে। ফলে বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে বেসরকারি খাতের প্রাধান্য লক্ষ্যণীয়। সংক্ষেপে এগুলোই বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য।