এইচ.এস.সি অর্থনীতি ১ম পত্র- ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
ভোক্তা ও উৎপাদকের আচরণ
১. প্রান্তিক উপযোগ রেখা নিম্নগামী হয় কেন?
উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত এক একক ভোগের ফলে মোট উপযোগ যে পরিমাণে বৃদ্ধি পায় তাই হলো প্রান্তিক উপযোগ। ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পায়। যেমন: একজন ভোক্তা ২ একক পেয়ারা ভোগ করে ১২ টাকার সমান মোট উপযোগ এবং প্রান্তিক উপযোগ পায়। এখন ভোক্তা যদি অতিরিক্ত আরও এক একক পেয়ারা ভোগ করে তাহলে তার মোট উপযোগ বৃদ্ধি পায় ১৬ টাকার সমান। এ ক্ষেত্রে ভোক্তার প্রান্তিক উপযোগ হবে (১৬-১২) = ৪ টাকার সমান। সুতরাং দেখা যায়, প্রান্তিক উপযোগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। আর এ কারণেই প্রান্তিক উপযোগ রেখাটি বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়।
২. সর্বোচ্চ মোট উপযোগ স্তরে প্রান্তিক উপযোগ শূন্য হয় কেন?
উত্তর: মোট উপযোগ যখন সর্বোচ্চ হয় প্রান্তিক উপযোগ তখন শূন্য হয়। ভোক্তা কোনো একটি বিশেষ দ্রব্য অধিক পরিমাণে ভোগ করতে থাকলে তার নিকট উক্ত দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এক পর্যায়ে সে আর ঐ দ্রব্যটি ভোগ করতে চায় না। এমতাবস্থায় ভোক্তার নিকট ঐ দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ শূন্য হয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ভোক্তার লিচু খাওয়ার ইচ্ছা হলো। প্রথম লিচুর তুলনায় দ্বিতীয় লিচু থেকে সে কম উপযোগ পায়। তৃতীয় লিচুর ক্ষেত্রে উপযোগ আরও হ্রাস পায়। এভাবে এক পর্যায়ে তার লিচু খাওয়ার আর কোনো আগ্রহ থাকবে না। ফলে সে আর লিচু গ্রহণ করবে না। এ অবস্থায় ভোক্তার নিকট লিচুর মোট উপযোগ সর্বোচ্চ হলেও প্রান্তিক উপযোগ হয় শূন্য।
৩. চাহিদা রেখা কথন ঊর্ধ্বগামী হয়?
উত্তর: চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম ক্ষেত্রগুলোতে চাহিদা রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয়। সাধারণত চাহিদা রেখা ৰামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়; কারণ দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক বিপরীতমুখী। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। যেমন- ভোক্তার আয়ের পরিবর্তন, গিফেন দ্রব্য, বিলাসজাত দ্রব্য, বিকল্প দ্রব্যের দাম পরিবর্তন প্রভৃতি। এক্ষেত্রে দাম ও চাহিদ৷ পরিমাণের মধ্যে সমমূখী সম্পর্ক রয়েছে। এ সকল ক্ষেত্রে চাহিদা রেখা ডানদিকে ঊর্ধ্বগামী হয়।
৪. কাগজ ও কলম- দুটি দ্রব্যের সম্পর্ক কেমন?
উত্তর: কাগজ ও কলম দুটি দ্রব্যের সম্পর্ক পরিপূরক। দুটি দ্রব্যের মধ্যে একটি ভোগ বৃদ্ধির জন্য যদি অন্যটির ভোেগ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় তবে দুটিকে একে অন্যের পরিপূরক বলে। পরিপূরক দ্রব্যের সাধারণত যুগ্মভাবে ব্যবহার হয় অর্থাৎ একটির প্রয়োজন হলে অন্যটির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কাগজ ও কলম দুটি দ্রব্যের সম্পর্ক পরিপূরক।
৫. দাম অপরিবর্তিত অবস্থায় ভোক্তার আয় বাড়লে চাহিদা বিধির ওপর কোন ধরনের প্রভাব পড়বে?
উত্তর: দাম অপরিবর্তিত অবস্থায় ভোক্তার আয় বাড়লে চাহিদা বিধি কার্যকর হবে না। চাহিদা বিধি অনুসারে অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত (ভোক্টার আয় ভোক্তার রুচি, সম্পর্কিত দ্রব্যের দাম, বাজারে ক্রেতার সংখ্যা) থাকা অবস্থায় দ্রব্যের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে এবং দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। তাই দাম স্থির থা অবস্থায় চাহিদাও অপরিবর্তিত থাকার কথা। কিন্তু দাম স্থির থাকা অবস্থায় ভোক্তার আয় বাড়লে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার দরুন সে বেশি ক্রয় করবে। সেক্ষেত্রে দাম স্পির থাকা সত্ত্বেও ভোক্কার কাছে দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে।
৬. চাহিদার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী দুটি উপাদানের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: কোনো দ্রব্যের চাহিদার উপর প্রভাব বিস্তারকারী দুটি উপাদান হলো:
১. দ্রব্যের নিজস্ব দাম
২. ক্রেতার আয়
দ্রব্যের নিজস্ব দামের উপর চাহিদা বহুলাংশে নির্ভরশীল। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে দ্রব্যের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে, আবার দাম কমলে তার চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ কোনো দ্রব্যের দামের সাথে দ্রব্যের চাহিদার সম্পর্ক ঋণাত্মক। আবার, আয়ের সাথে চাহিদার পরিমাণের ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। ভোক্তার আয় বৃদ্ধি পেলে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর ভোক্তার আয় হ্রাস পেলে দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়।
৭. বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না কেন?
উত্তর: বিলাসজাত দ্রব্য আভিজাত্যের কারণ বলে বিবেচিত হয়, সে কারণে এতে চাহিদা বিধি কার্যকর হয় না। বেশি দামে দ্রব্য ক্রয়ের মাধ্যমে সমাজে বিত্তশালী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদর্শন প্রভাব লক্ষ করা যায়। উচ্চ আয়স্তরের ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় যে সকল দ্রবের দাম বেশি সেগুলো বেশি ক্রয় করে এবং দাম কম হলে কম ব্রুয় করে। এক্ষেত্রে চাহিদা রেখা ঊর্ধ্বগামী হয়। এভাবে বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি অর্থাৎ দাম কমলে চাহিদা বাড়ে এবং দাম বাড়লে চাহিদা কমে কার্যকর হয় না।
৮. অপেক্ষক বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এক বা একাধিক স্বাধীন চলকের সাথে সম্পর্কিত অধীন চলকের মধ্যে পরস্পর বিশেষ সম্পর্কের গাণিতিক প্রকাশকে অপেক্ষক বলে। অর্থনীতিবিদ ডমিনিক স্যালভেটর (Dominick Salvatore) এর মতে, অপেক্ষক দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়। উদাহরণ— মনে করি, দুটি চলক D ও P এরূপভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, P এর বিভিন্ন মানে D এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিভিন্ন মান পাওয়া যায়, তবে D কে P এর অপেক্ষক (Function) বলা হয়। যেমন – D = f (P) = 25 –5P একটি চাহিদা অপেক্ষক।
৯. মূল্যবান দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয় কেন?
উত্তর: দ্রব্যের দামের শতাংশিক পরিবর্তনের (Percentage change) চেয়ে যদি চাহিদার পরিমাণের শতাংশিক পরিবর্তন বেশি হয় তবে তাকে স্থিতিস্থাপক চাহিদা (Elasticity of Demand) বলে। সাধারণত মূল্যবান ও বিলাসজাতীয় দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন— রেডিও, টেলিভিশন, দামি আসবাবপত্র, মোটরগাড়ি ইত্যাদি। এসব দ্রব্যের দামের ক্ষুদ্র পরিবর্তনেও চাহিদার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ এসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা অধিক হ্রাস পায় এবং দাম হ্রাস পেলে চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
১০. 'যোগান ও মজুদ এক নয়’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাধারণভাবে মজুদ ও যোগান কথা দুটি সমার্থক মনে হলেও অর্থনীতিতে এ ধারণা দুটির ভিন্ন অর্থ রয়েছে। বিক্রয়যোগ্য একটি দ্রব্যের মোট পরিমাণ হলো মজুদ। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করতে ইচ্ছুক তাকে ঐ দ্রব্যের যোগান বলে। যোগান হলো মজুদের একটি অংশ।
মনে করি, একজন বিক্রেতার বিক্রয়যোগ্য মোট ৫০০ কেজি চাল আছে এবং বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ২৫ টাকা। যদি এ দামে বিক্রেতা ২০০ কেজি চাল বিক্রয় করতে ইচ্ছুক থাকে সে ক্ষেত্রে ৫০০ কেজি চালকে মজুদ এবং ২০০ কেজি চালকে যোগান বলা যাবে। তাই বলা যায়, অর্থনীতিতে যোগান ও মজুদ এক নয়।