এইচ.এস.সি অর্থনীতি ১ম পত্র- ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
বাজার
১. আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: যেসব দ্রব্যের চাহিদা ও ক্রয়-বিক্রয় সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সেগুলোর বাজারকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে। যেমন: সোনা, পাট, তুলা প্রভৃতি। এসব দ্রব্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে লেনদেন হয়। কাজেই এগুলোর বাজার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। এ বাজারে দ্রব্যের চাহিদা সাধারণভাবে বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে বলে তা প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়।
২. স্থানীয় বাজার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যেসব দ্রব্যের ক্রয় - বিক্রয় একটি বিশেষ এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাকে স্থানীয় বাজার বলে। স্থানীয় বাজারে দ্রব্যের চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। এ বাজারে পচনশীল এবং সহজে পরিবহণযোগ্য নয়, বেশি - বিক্রয় করা হয়। এ বাজার নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। স্থানীয় বাজারে মাছ, মাংস, শাকসবজি, দূধ প্রভৃতি ক্রয়-বিক্রয় হয়।
৩. কোন বাজারে দ্রব্যের একক সমজাতীয় এবং কেন?
উত্তর: যেসব দ্রব্যের এককগুলো গঠন ও গুণগত দিক থেকে একই রকম অথচ পৃথকীকরণ করা যায়, তাদেরকে সমজাতীয় দ্রব্য বলে। আর সমজাতীয় দ্রব্য পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পাওয়া যায়। কেননা, পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পণ্যগুলোর একক এমন হয় যা পরিমাণগত ও গুণগত দিক থেকে একই গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে অথচ এদের পৃথক করা যায়।
৪. পূর্ণ প্রতিযোগিতায় একটি ফার্মকে দামগ্রহীতা বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যে বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি সমজাতীয় পণ্য (Homogeneous goods) একটি নির্দিষ্ট দামে অবাধে ক্রয় - বিক্রয় করতে পারে তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। এই দামকে মেনে নিয়ে একটি ফার্ম বাজারের মোট যোগানের সামান্য অংশ উৎপাদন ও সরবরাহ করে । বাজারের প্রচলিত দামের উপর এককভাবে কোনো ফার্ম প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাই পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ফার্মকে দাম গ্রহীতা (Price Taker) বলা হয়।
৫. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে AR রেখা ও MR রেখা সমান হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর?
উত্তর: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অসংখ্য ক্রেতা - বিক্রেতা একটি সমজাতীয় পণ্য একটি নির্দিষ্ট দামে ক্রয় - বিক্রয় করে। এ বাজারে বাজার চাহিদা ও বাজার যোগানের সমতা দ্বারা পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। কোনো একজন ক্রেতার পক্ষে বাজার চাহিদা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আবার একজন বিক্রেতা পণ্যের মোট যোগানের একটি নগণ্য অংশ উৎপাদন করে। ফলে তার পক্ষেও পণ্যের বাজার যোগানকে প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। তাই এ বাজারে বিক্রেতা দ্রব্যের প্রতিটি একক থেকে একই গড় আয় (AR) বা প্রান্তিক আয় (MR) বা দাম (P) পায়। এ কারণেই পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে AR = MR = P হয়।
৬. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কেন একটি দাম বিরাজ করে?
উত্তর: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি সমজাতীয় দ্রব্যের ব্রয় হয়। বাজার সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলে পূণভাবে জ্ঞাত থাকে। ফলে এখানে ক্রেতা বা বিক্রেতাদের মধ্যে কেউ এককভাবে নির্ধারিত দাম প্রভাবিত করতে পারে না। তাই পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি দামই বিরাজ করে। যেমন- সোনার বাজার পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় সেখানে একটি দামই বলবৎ থাকে।
৭. সব বাজারে কি AR > MR হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: না, সব বাজারে প্রান্তিক আয় (MR) অপেক্ষা গড় আয় (AR) বেশি হয় না। অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে AR > MR হলেও পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে AR = MR হয়। কারণ পূর্ণ প্রতিযোগিতায় সব ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট দাম মেনে নিয়ে দ্রব্য বা সেবা ক্রয় বিক্রয় করে। অন্যদিকে, অপূর্ণ প্রতিযোগিতায় বিক্রেতা দ্রব্যের দামের ওপর কম - বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এজন্য এ ধরনের বাজারে AR > MR হয়। তাই বলা যায়, সব বাজারে AR > MR হয় না।
৮. একচেটিয়া বাজারে বিক্রেতাকে দাম সৃষ্টকারী বলা হয় কেন?
উত্তর: একচেটিয়া বাজারে বিক্রেতাকে দাম সৃষ্টিকারী বলা হয় কারণ বিক্রেতা তার ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্যের দাম অথবা যোগান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বাজারে একটি মাত্র ফার্ম থাকলে, উৎপাদিত পণ্যের নিকট বিকল্প দ্রব্য না থাকলে এবং সর্বোপরি প্রতিযোগী ফার্মের প্রবেশাধিকার না থাকলে পণ্যের যোগানের ওপর ঐ ফার্মের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। এক্ষেত্রে একটি ফার্ম পণ্যের দামের ওপর একক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। অর্থাৎ, ফার্ম প্রয়োজনে দাম বাড়াতে পারে কিংবা কমাতে পারে। এ বাজারে দাম নির্ধারণে ক্রেতার কোনো ভূমিকা নেই। বিক্রেতা নিজেই তার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। এজন্য একচেটিয়া বাজারে বিক্রেতাকে দাম নির্ধারণ কারী বলা হয়।
৯. একচেটিয়া বাজার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: অপূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে একচেটিয়া বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার ধারণা। কোনো দ্রব্যের বাজারে উৎপাদনকারী বা বিক্রেতার সংখ্যা মাত্র একজন হলে এবং দ্রব্যটির কোনো ঘনিষ্ঠ বিকল্প দ্রব্য না থাকলে তাই একচেটিয়া বাজার। এ বাজারে উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা একজন থাকায় সেই দ্রব্যের যোগান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দ্রব্যটির কোন ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক না থাকায় তাকে কোন প্রতিযোগীর সম্মুখীন হতে হয় না।
১০. অলিগোপলি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: গ্রিক শব্দ 'Oligos' এবং ল্যাটিন শব্দ 'polis' থেকে 'Oligopoly' শব্দটি পাওয়া যায়, যার অর্থ কতিপয় বা মুষ্টিমেয় বিক্রেতা। বিশেষ অর্থে অলিগোপলিকে কতিপয় বিক্রেতার বাজার বলা হয়। অধ্যাপক ৰোমল (Boumol) এর মতে, এ বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা ১০ থেকে ১২ জন পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ এ বাজারের বিক্রেতার সংখ্যা দুয়ের অধিক তবে সীমিত সংখ্যক বলেছেন।
১১. ডুয়োপসনি বাজার বলতে কী বোঝ?
উত্তর: ডুয়োপসনি (Duopsony) বাজার বলতে দুজন ক্রেতার বাজারকে বোঝায়। যে বাজারে দুজন ক্রেতা কিন্তু অসংখ্য বিক্রেতা থাকে, তাকে ভুয়োপসনি বাজার বলে। যেমন: আখ চাষের অনালে চিনির কল দুটি থাকলেও, আখচাষির সংখ্যা থাকে অসংখ্য। আখ চাষিরা আখ চাষ করে ঐ দুটি কলে আখ বিক্রি করে। এক্ষেত্রে ক্রেতার সংখ্যা অর্থাৎ চিনিকলের সংখ্যা দুটি এবং বিক্রেতার সংখ্যা অর্থাৎ আখ চাষির সংখ্যা অসংখ্য হওয়ায় এটি ডুয়োপসনি বাজার।
১২. একচেটিয়া বাজারে ফার্ম ও শিল্প ভিন্ন নয় কেন?– ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অর্থনীতিতে সমজাতীয় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনকারী কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে ফার্ম বলা হয়। আবার কোনো সমজাতীয় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের নিয়োজিত সকল উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের সমষ্টিকে শিল্প বলে। আমরা জানি, একচেটিয়া বাজারে একটি মাত্র ফার্ম বা উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান পণ্যের সমস্ত যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া, এ বাজারে উৎপাদিত পণ্যের কোনো নিকটতম বিকল্প পণ্য থাকে না। তাই বলা যায়, একটি মাত্র ফার্ম উৎপাদিত পণ্যের সমস্ত যোগান নিয়ন্ত্রণ করে বলে এ বাজারে ফার্ম ও শিল্প অভিন্ন হয়।
১৩. ক্রেতা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু বিক্রেতা করতে পারে না।- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মনোপসনি বাজারে বিক্রেতা নয় ক্রেতা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো দ্রব্যের বাজার মনোপসনি (Monopsony) বাজারে পরিণত হলে সেখানে বিক্রেতা অনেক থাকলেও ক্রেতা থাকে মাত্র একজন। তাই এ বাজারে ক্রেতাই দ্রব্যের দাম নির্ধারণ বা চাহিদা কম - বেশি করে যোগান প্রভাবিত করার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সে কম দাম দিলে বাজারে অন্য কোনো ক্রেতার অনুপস্থিতিতে বিক্রেতাদেরকে কম দামেই বিক্রি করতে হয়।
১৪. শিল্পের ভারসাম্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর: কোন শিল্পের পক্ষে যখন তার মোট উৎপাদনের পরিমাণের আর কোনোরূপ হ্রাস - বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে না তখন ঐ অবস্থায় শিল্পের ভারসাম্য অর্জিত হয় একই দ্রব্য উৎপাদনকারী সকল ফার্মকে নিয়ে গঠিত হয় শিল্প। এ অবস্থা তখনই অর্জিত হয় যখন শিল্পোৎপাদিত দ্রব্যের মোট চাহিদা ও যোগান পরস্পর সমান হয়।
১৫. ক্ষতি অবস্থায় একটি ফার্ম স্বল্পকালে কখন উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যায়?
উত্তর: গড় পরিবর্তনীয় ব্যয় অপেক্ষা দাম বেশি হলে ক্ষতি অবস্থায় একটি ফার্ম স্বল্পকালে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যায়। স্বল্পকালে ক্ষতি স্বীকার তথা গড় ব্যয়ের চেয়ে দাম কম হলে একটি ফার্ম ততক্ষণ উৎপাদন চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ গড় পরিবর্তনীয় ব্যয় (AVC) অপেক্ষা দাম (P) বেশি হবে। তবে, P = AVC হলে ফার্ম উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিবে। এজন্য এই বিন্দু ( P = AVC ) কে ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্ট বলা হয়। কাজেই বলা হয়, P = AVC হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তথ্য AC < P < AVC অবস্থায় একটি ফার্ম ক্ষতি স্বীকার করেও উৎপাদন কার্য চালিয়ে যায়।
১৬. দীর্ঘকালে কেন ‘স্বাভাবিক মুনাফা' ধারণার সৃষ্টি হয়?
উত্তর: দীর্ঘকালে ফার্ম বাজারে টিকে থাকার জন্য স্বাভাবিক মুনাফা গ্রহণ করে। স্বল্পকালে পূর্ণ প্রতিযোগিতায় কোনো ফার্ম স্বাভাবিক মুনাফা, অস্বাভাবিক মুনাফা বা ক্ষতি স্বীকার করে উৎপাদন কাজ অব্যাহত রাখলেও দীর্ঘমেয়াদি ফার্মসমূহ কেবল স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে ভারসাম্যে পৌঁছে। দীর্ঘকাল বলতে এমন একটি সময় বা মেয়াদকে বোঝায় যে অবস্থায় কোনো ফার্মের সকল ব্যয়ই হয় পরিবর্তনীয় এবং নতুন নতুন ফার্ম শিল্পে প্রবেশ করতে পারে বা পুরাতন ফার্ম ইচ্ছা করলে শিল্প থেকে বের হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, ফার্মের আয়তন ও সংখ্যা পরিবর্তন করা যায়। তাই এ সময়ে ফার্ম বাজারে টিকে থাকতে কেবল স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে।
really very helpful😊