এইচ.এস.সি অর্থনীতি ২য় পত্র ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

মুদ্রাস্ফীতি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন


১. মুদ্রাস্ফীতি কী?
উত্তর: মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন এক অবস্থাকে বোঝায়, যখন স্বল্পকাল ব্যবধানে উৎপাদন স্থির থেকে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং এর ফলে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

২. মৃদু মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? 
উত্তর: দামস্তর ধীরে ধীরে এবং ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে তাকে মৃদু মুদ্রাস্ফীতি বলে।

৩. ধাবমান মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর: অধিক মাত্রায় দামস্তরের বৃদ্ধি ঘটলে তাকে ধাবমান মুদ্রাস্ফীতি বলে।

৪. প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর: সামগ্রিক চাহিদা বাড়লে কেবল দামস্তরই বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে না। সামস্তরের এ ধরনের বৃদ্ধিই হলো প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি।

৫. উল্লম্ফন মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর : অত্যন্ত দ্রুতগতিতে দামস্তরের ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধির হারকে উল্লম্ফন মুদ্রাস্ফীতি বলে।

৬. ঋণ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর: ব্যাংক ঋণের অত্যধিক প্রসারের ফলে যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে তাকে ঋণ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

৭. Galloping inflation কী? 
উত্তর: দ্রব্যমূল্য যখন খুব দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে তখন তাকে Galloping inflation বলে।

৮. পয়েন্ট টু পয়েন্ট পদ্ধতি কী? 
উত্তর: অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হিসাব বের করার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর (সাধারণত তিন মাস) হিসাব করার পদ্ধতিকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট পদ্ধতি বলে।

৯. খরচ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি কী?
উত্তর: দ্রব্যের চাহিদা স্থির থেকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপাদন হ্রাস পেলে দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়, এরূপ অবস্থায় দামস্তর বৃদ্ধির প্রবণতাকে ব্যয়বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।

১০. দমিত মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর: ক্রমাগড় দামস্তর বৃদ্ধিকে সরকারি হস্তক্ষেপে দমনের বা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তাকে দমিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।

১১. অবাধ বা মুক্ত মুদ্রাস্ফীতি কী? 
উত্তর: জনগণের বর্ধিত ব্যয় যখন সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, এ অবস্থাকে অবাধ বা মুক্ত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

১২. ব্যাংক হার কী? 
উত্তর: কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রদেয় ঋণের জন্য ন্যূনতম সুদের হারই হলো ব্যাংক হার।

১৩. মুদ্রাস্ফীতির পরিমাপ কাকে বলে? 
উত্তর: পূর্ববর্তী যে কোনো বছরের তুলনায় চলতি বছরে দামস্তর কী হারে বৃদ্ধি পায় তা নির্ধারণ করাকে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাপ বলে।

১৪. CPI- এর পূর্ণরূপ লেখো।
উত্তর: Consumer Price Index (CPI).

১৫. GNP Defiator কী? 
উত্তর: কোনো দেশের আর্থিক GNP ও প্রকৃত GNP- এর অনুপাতকে জাতীয় উৎপাদনের অবমূল্যায়ক বলে।

১৬. ভোক্তার মূল্যসূচক কী?
উত্তর: ভোক্তাদের বায় সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে মূল্যসূচক নির্ণয়ের পদ্ধতিকে ভোল্লার মূল্যসূচক বা CPI বলে।

১৭. মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতির নাম কী? 
উত্তর: মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতির নাম হলো উৎপাদকের মূল্যসূচক।

১৮. রাজস্ব নীতি কী? 
উত্তর: সরকারের আয় ব্যয় ও ঋণ সংক্রান্ত নীতিই হলো রাজস্ব নীতি।

মুদ্রাস্ফীতি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন


১. মুদ্রাস্ফীতি বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: সাধারণত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকেই মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন এক অবস্থাকে বোঝায় যখন স্বল্পকাল ব্যবধানে উৎপাদন স্থির থেকে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং এর ফলে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে দামস্তর বৃদ্ধির এ প্রবণতাকেই মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

২. অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।
উত্তর: অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুল্কীতি সৃষ্টি হয় সাধারণত কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলে দ্রব্যসামন্ত্রী ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে স্লোগ বার, বিনিয়োগ বা ও সরকারি ব্যয় তথা সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এতে দেশে দামস্তর বৃদ্ধি পায় যা চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্ৰীতি হিসেবে বিবেচিত। তাই বলা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়।

৩. মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণদাতা কীভাবে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুদ্রাস্ফীতির ফলে অর্থের প্রকৃত ঘৃণা কমে যাওয়ার কারণে বাগদাতারা হয়। বাদাতারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রদানকৃত কণের সুদাসসহ যে অর্থ পাল্লা তার ক্রয়ক্ষমতা পূর্বের চেয়ে কম হয়। কারণ ঋণদাতা যখন ঋণ নেয় তখন দ্রব্যসামগ্রীর যে দাম থাকে মুদ্রাস্ফীতির সময় তার চেয়ে দাম বেশি থাকে মুদ্রাম্প্রীতির সময় ঋণদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪. মুদ্রাস্ফীতির মৌলিক দুটি কারণ লেখো।
উত্তর: মুদ্রাস্ফীতির মৌলিক দুটি কারণ হলো— চাহিদা বৃদ্ধি এবং ব্যয় বৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ নিয়োগের প্রেক্ষিতে বা বিদ্যমান সম্পদ, প্রযুক্তি ও দক্ষতার প্রেক্ষিতে সামগ্রিক যোগান স্থির থেকে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। তখন শ্রমের দক্ষতা, যোগান, উৎপাদন কৌশল, উৎপাদন ব্যয় প্রভৃতি স্থির অবস্থায় দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দামস্তরও বৃদ্ধি পায়, ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। অন্যদিকে, দ্রব্যের চাহিদা স্থির থেকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উৎপাদন হ্রাস পেলে দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়, এরূপ অবস্থায় দামস্তর বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

৫. পরোক্ষ কর মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সরকার ব্যাপকহারে দ্রব্যসামগ্রীর ওপর পরোক্ষ কর আরোপ করলে মূল্যস্তর বেড়ে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে পরোক্ষ করের হার ও আওতা ক্রমশ বাড়ছে। দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধিকে পরোক্ষ কর নানাভাবে প্রভাবিত করে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার তার বর্ধিত ব্যয়ভার মেটানোর জন্য পরোক্ষ করের হার ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েছে। এ বর্ধিত পরোক্ষ কর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্রবাদির দাম বাড়ায়। কাজেই সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির এ প্রয়াসে জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বেড়েছে। সুতরাং বলা যায়, পরোক্ষ কর মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে।

৬. ব্যয় বৃদ্ধিজনিত ও চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য কী? 
উত্তর: ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বাহ্যিক উপাদান দ্বারা যতটা প্রভাবিত হয় চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ততটা হয় না। ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি মজুরি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্যক্ষ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। পক্ষান্তরে, চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর মুদ্রানীতি এবং আর্থিক নীতি অনুসরণ করার প্রয়োজন হয়।

৭. অর্থের যোগান বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে কি? 
উত্তর: হ্যাঁ, মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হলো অর্থের যোগান বৃদ্ধি। বাংলাদেশেও মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ অর্থের যোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি। অর্থের যোগান বিপুল পরিমাণে বাড়লে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার পরিমাণ তার তুলনায় না বাড়লে দামস্তর বেড়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি করে। আর অর্থের যোগান বাড়লে মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় এভাবেই মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলে।

৮. ভিত্তি বছর নির্বাচন কীভাবে নির্বাচন করা হয়? 
উত্তর: পূর্ববর্তী যে বছরের তুলনায় চলতি বছরের দামস্তর তুলনা করা হয় তাকে ভিত্তি বছর এবং পরবর্তী বছরকে হিসাবি বছর বলা হয়। যে বছরে দামস্তর বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সে বছরকে ভিত্তি বছর হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এ ভিত্তি বছরের দামস্তরের সাথে পরবর্তী বছরের দামস্তর তুলনা করা হয়।

৯. ‘সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অতিরিক্ত সরকারি ব্যয় মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে। দেশে বিভিন্ন অনুন্নয়ন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকার প্রায়ই তার আয়ের তুলনায় অনেক বেশি বায় করে ফেলে। এমন ক্ষেত্রে অধিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে বল সময়েই সরকারকে অতিরিক্ত নোট ছাপাতে হয় কিংবা বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু স্বল্পকালে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় না বলে দামস্তর বাড়ে ও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

১০. মুদ্রাস্ফীতি কষ্টকর, কিন্তু মুদ্রাসংকোচন অযৌক্তিক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুদ্রাস্ফীতি এমন এক অবস্থায় প্রকাশ করে যখন সাধারণ সামন্তর ক্রমাগতভাবে বাড়ে। অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচন হলো এমন এক অবস্থা। সেখানে দামস্তর ক্রমাগতভাবে কমে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারলে সমাজের আয়, নিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এজন্য অনেকেই মৃদু বর্ধনশীল মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক বলে মনে করেন। পক্ষান্তরে দুদ্রাসংকোচনের সময় দেশে আয়, উৎপাদন ও নিয়োগ হ্রাস পেতে থাকে। অবস্থায় চক্রাকারে আবর্তি হয়ে অর্থনীতিতে মন্দার সৃষ্টি হয়। তাই বলা হয়, মুদ্রাস্ফীতি কষ্টকর হলেও মুদ্রাসংকোচন অযৌক্তিক।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url