পরোক্ষ করের সংজ্ঞা, সুবিধা ও অসুবিধা

পরোক্ষ করের সংজ্ঞা


যে করের করযাত ও করপাত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির উপর পড়ে তাকে পরোক্ষ কর বলে। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির উপর কর ধার্য করা হলে, ব্যক্তি করের ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়। যেমন- বিক্রয় কর, আবগারি শুল্ক, প্রমোদ কর ইত্যাদি। এরূপ করের করদাতা করের প্রকত বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়। যেমন-  বিক্রয় কর বিক্রেতার উপর আরোপ করা হলেও বিক্রেতা পণ্যের দাম বদ্ধির মাধ্যমে তা ক্রেতার উপর তার উপর ফেলে। তাই বলা যায়, যে করে করযাত করদাতা নিজে বহন করে এবং করের প্রকত ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে পারে তাই পরোক্ষ কর।

পরোক্ষ করের সুবিধা


১. পরোক্ষ কর জনপ্রিয়: পরোক্ষ কর করদাতাকে সরাসরি জমা দিতে হয় না। কারণ এক্ষেত্রে তার উপর প্রত্যক্ষ কোন চাপ থাকে না। তাই এ কর জনপ্রিয়।

২. সবিধাজনক: পরোক্ষ কর করদাতা এবং সরকার উভয়ের জন্য সবিধাজনক। এক্ষেত্রে করের পরিমাণ দ্রব্যের দামের মধ্যেই থাকে। তাই এই কর প্রদান করা সবিধাজনক। যেমন-একজন সিগারেট কিনলে প্রত্যেক সিগারেটের দামের মধ্যেই পরোক্ষ কর (Vat) থাকে।
পরোক্ষ করের সংজ্ঞা, সুবিধা ও অসুবিধা
৩. কর ফাকি অসম্ভব: পরোক্ষ কর দ্রব্যের দামের মধ্যে নিহিত থাকে বলে একজন ক্রেতা ঐ দ্রব্য কিনলেই কর দিতে হয়। কাজেই দ্রব্য ক্রয় করলে কর বাধ্যতামলক হয়ে দাড়ায়।

৪. গরীব লোকদের অবদানের সযোগ: গরীবদের উপর সরকার প্রত্যক্ষ কর আরোপ করে না। কিন্তু যদি কোন দ্রব্য যে ক্রয় করে তবে সে দ্রব্যের দামের ভিতরে অন্তর্ভক্ত করের টাকা ঠিকই প্রদান করে। কাজেই দেশের উন্নয়নে গরীব লোকদের অংশ গ্রহণের সযোগ একমাত্র পরোক্ষ করের মাধ্যমেই রয়েছে। প্রত্যক্ষ করে নাই।

৫. বিস্তত কর কাঠামো: পরোক্ষ কর দেশের সকল নাগরিকের কাছ থেকে নেয়া হয়। ধনী গরীব নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিক দ্রব্য ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারকে কর প্রদান করে। একমাত্র পরোক্ষ করের মাধ্যমেই নাগরিকদের কর প্রদানে বাধ্য করা সম্ভব হয়। তাই পরোক্ষ কর কাঠামো বিস্তত হয়।

৬. স্থিতিস্থাপক: পরোক্ষ কর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উপর আরোপ করা হয় যেগুলোর চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। তাই সরকারের প্রয়োজনে এ করের হার ইচ্ছামত পরিবর্তন করে সরকার অর্থ সংগ্রহ বদ্ধি করতে পারে। তাই পরোক্ষ কর স্থিতিস্থাপক।

৭. সহজে আদায়যোগ্য: পরোক্ষ কর সহজেই আদায় করা হয়ে থাকে। এই কর আদায়ে সরকারের খরচ কম হয়।

৮. কর হারের সমতা: পরোক্ষ কর সকলের সমান ভাবে দিতে হয়। যেমন- একটি দ্রব্য একজন ধনী বা গরীব উভয়েই ক্রয় করতে পারে। এতে করের পরিমান একই থাকে। তাই পরোক্ষ কর সমতার প্রতীক।

৯. সামাজিক কল্যাণ: পরোক্ষ কর সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে। ক্ষতির দ্রব্য যেমন-মদ, সিগারেট ইত্যাদির উপর বেশী হারে পরোক্ষ কর আরোপ করলে এগুলোর দাম বাজারে বেড়ে যাবে। ফলে বেশী দামে অনেকেই কিনতে পারবে না। এতে সামাজিক কল্যাণ বাড়বে। 

পরোক্ষ করের অসুবিধা


১. অসমতা: পরোক্ষ কর যেহেত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর উপরই বেশী আরোপ হয়। তাই গরীব লোকদের উপরই এই করের চাপ বেশী পড়ে। কারণ এক্ষেত্রে করের ভিত্তির উপর নির্ভর করে কর নির্ধারিত হয় না।

২. অনিশ্চিত: সরকার পরোক্ষ করের সমদয় অর্থ পাবে কিনা এ ব্যাপারে অনিশ্চিত থাকে। কারণ করা আরোপিত পণ্যগুলো সব বিক্রি নাও হতে পারে। তাই এই খাত হতে রাজস্বের পরিমাণ কত হবে তা পর্বে জানা যায় না।

৩. পণ্যের মল্য বদ্ধি করে: পরোক্ষ কর আরোপের ফলে পণ্যের মল্য অযাচিতভাবে বেড়ে যায়। দামের মধ্যে নিহিত থাকে বলে পরোক্ষ কর আরোপ অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক হয় না। এর কোন মাপকাঠি নাই। পণ্যের দাম বদ্ধি পেলে অর্থাৎ দেশে মদ্রাস্ফীতি ঘটলে দেশের ব্যবসা-বানিজ্য এবং লেনদেনে সমস্যার সষ্টি হয়।

৪. নাগরিক চেতনা হ্রাস করে: পরোক্ষ কর প্রদান করলে করদাতা কোন রকম প্রত্যক্ষ চাপের সম্মখীন হয় না। অনেকে বোঝেই না যে সে কর প্রদান করছে। আর করের টাকা সরকার কোন খাতে ব্যয় করে থাকে তাও করদাতা জানেনা। তাই এ কর নাগরিক চেতনা বদ্ধি না করে বরং হ্রাস করে।

৫. শিল্পায়নের জন্য ক্ষতিকর: যদি শিল্পের কাচামালের উপর পরোক্ষ কর বসানো হয় তবে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্থ হয়। কারণ কাচামালের উপর কর আরোপ করলে দাম বেড়ে যাবে। ফলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url