বাজার অর্থনীতির সুবিধা ও অসুবিধা
বাজার অর্থনীতির সুবিধা|Merits of Market Economy
বাজার অর্থনীতির সুবিধাসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. স্বয়ংক্রিয় বণ্টন ব্যবস্থা: রাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ স্বয়ংক্রিয়া উপায়ে ব্যবহৃত ও বন্টিত হয়। এখানে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে না। অর্থনৈতিক কল্যাণের দিক থেকে সমাজে বাজার অর্থনীতি কাম্য বলে বিবেচিত হয়।
২. দক্ষতার নিশ্চয়তা বিধান: বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদক এবং ভোক্তারা নিজ নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে বিভিন্ন কাজকর্মে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। এর ফলে উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দক্ষতা অতি সহজেই অর্জন করা যায়।
৩. নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন: বাজার অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং বাজার সম্প্রসারিত হয়।
৪. ভোক্তার স্বাধীনতা: বাজার অর্থনীতি দ্রব্য ও সেবা ভোগের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে । কেননা বাজার থেকে পছন্দসই দ্রব্য ও সেবা ইচ্ছামতো ক্রয় এবং ভোগ করা যায়।
৫. সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ: ভোক্তারা যে হারে পণ্যের প্রান্তিক বিকল্পন করে, উৎপাদকগণ যদি একই হারে পণ্যের প্রান্তিক রূপান্তর করে তাহলে সামাজিক কল্যাণ সর্বাধিক হয়। বাজার অর্থনীতি এই শর্ত অর্জনে সহায়তা করে।
৬. বিশ্ব বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা: বাজার অর্থনীতি বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা করে। এতে বিভিন্ন দেশে উৎপাদন ও নিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
৭. দ্রব্য ও সেবার মান বৃদ্ধি: বাজার অর্থনীতিতে দ্রব্য ও সেবার চাহিদার উপর মূল্য নির্ভর করে। চাহিদা আবার দ্রব্য ও সেবার মান বেশি তার চাহিদা বেশি থাকে। ফলে উৎপাদকগণ নিজেদের স্বার্থেই নিজ নিজ দ্রব্য ও সেবার মান বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে বাধ্য হয়।
৮. অর্থনৈতিক প্ররোচনা: বাজার অর্থনীতি কর্মোদ্যোগ, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, মুনাফা অর্জন, উপযোগ সর্বোচ্চকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে প্ররোচনা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে বাজার অর্থনীতিতে কর্মোদ্যম, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হতে পারে যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
৯. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক: বাজার অর্থনীতি বিভিন্ন উপায়ে কোন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক করতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, বাজার অর্থনীতির উপরিউক্ত সুবিধাগুলো রয়েছে। বাজার অর্থনীতির সুবাদে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ বিকাশ সাধিত হয়েছে। ফলে সভ্যতা আজ নতুন স্তরে উন্নীত হয়েছে।
বাজার অর্থনীতির অসুবিধা|demerits of market Economy
বাজার অর্থনীতিতে যেমন সুবিধা এসেছে তেমনি সুবিধার বিপরীতে কিছু অসুবিধা সেগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. আয় বৈষম্য: বাজার অর্থনীতিতে উদ্যোক্তরা সামাজিক প্রয়োজনে নয় বরং ব্যক্তিগত লাভ - লোকসান সামনে রেখে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও বণ্টন করে থাকে। এক্ষেত্রে ধনীরা আরো ধনী এবং গরিবরা আরো গরীব হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
২. সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি: অবাধ বাজার উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাহ্যিক প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে পরিবেশের দূষণের সৃষ্টি হয় এজন্য সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৩. দেশীয় শিল্প ধ্বংস: বাজার অর্থনীতিতে মুক্ত বাণিজ্য চালু থাকায় বিদেশীদের শিল্প প্রতিযোগিতা দেশীয় নতুন নতুন শিল্প ধ্বংস হয়। অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশের শিশু শিল্প ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
৪. ভোগ উদ্বৃত্ত হ্রাস: বাজার অর্থনীতিতে একচেটিয়া কারবার বা অলিগোপলী ফার্মের উৎপত্তি হওয়ায় উৎপাদন কম হয় কিন্তু দ্রব্য মূল্য বেশি হয়। এজন্য ভোক্তা শ্রেণীর উদ্বৃত্ত হ্রাস পায়।
৫. অপ্রয়োজনীয়ও বিলাসজাত দ্রব্যের উৎপাদন: অবাধ বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদকরা অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত দ্রব্যে উৎপাদন বেশি করে। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৬. একচেটিয়া কারবারীর উদ্ভব: বাজার অর্থনীতিতে বিদ্যমান থাকায় সমাজে একচেটিয়া কারবারী সৃষ্টি হয়, এজন্য উৎপাদন কম হয় দাম বেশি হয়। ফলে ভোক্তারা শোষিত হয় এবং ভোক্তাদের কল্যাণ হ্রাস পায়।
৭. সম্পদের অপচয়: বাজার অর্থনীতিতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা অনেক সময় তা সম্পদের অপচয় করে থাকে। উৎপাদকরা নিজেদের মুনাফা সর্বোচ্চকরণের জন্য পরস্পর অসম প্রতিযোগিতা করে থাকে ফলে সম্পদের অপচয় সহ অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
৮. সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি: বাজার অর্থনীতিতে অসংখ্য উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী স্বাধীনভাবে কাজ কর্মে লিপ্ত থাকে। ভোক্তারা উৎপাদক দ্বারা শোষিত হয় ফলে সমাজ শ্রেণী বিভক্ত হয়। এজন্য ভোক্তা ও উৎপাদকের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
৯. সম্পদের অসম বণ্টন: বাজার অর্থনীতিতে ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বীকৃতি থাকায় যে সম্পদ অর্জিত হয় তার বণ্টন ব্যবস্থা হয়ে থাকে অসম প্রকৃতি। তাই এরূপ অর্থনীতিতে সামাজিক ভাবে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের মধ্যে অসম বণ্টন হয়ে থাকে।