পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার|Perfect Competitive Market

পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে?What is Perfect Competitive Market


যে দ্রব্যের বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা একই সমজাতীয় দ্রব্য একটি নির্দিষ্ট দামে দরকষাকষির মাধ্যমে ক্রয় - বিক্রয় করে তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় ফার্মকে দামগ্রহীতা (Price Taker) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জোয়ান রবিনসন (Joan Robinson) এর মতে,
যে বাজারে প্রতিটি উৎপাদনকারী উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা পরিপূর্ণ স্থিতিস্থাপক তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।
পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায়—

১. বহুসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা: পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে বহু সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে। এর ফলে কোনো ক্রেতা দ্রব্যের চাহিদাকে কিংবা কোনো বিক্রেতা দ্রব্যের যোগানকে এককভাবে প্রভাবিত করে দাম বাড়াতে বা কমাতে পারে না। এ বাজারকে দামগ্রহীতার বাজার হিসেবে (Price Taker) গণ্য হয়। 

২. সমজাতীয় দ্রব্য: পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারের একটিগুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো - এখানে একটি সমজাতীয় দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করা হয়। সমজাতীয় দ্রব্য বলতে এমন দ্রব্যকে বোঝানো হয় যার বিভিন্ন একক, গঠন ও গুণগত দিক থেকে একই এবং অভিন্ন এককগুলো পরস্পরের পূর্ণ পরিবর্তক হয়। 

৩. বাজার সম্বন্ধে ক্রেতা বিক্রেতার পূর্ণ জ্ঞান: এ বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই দ্রব্যের গুণাগুণ ও দাম সম্পর্কিত সব তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকে। এজন্য কোনো ক্রেতার পক্ষে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে কম দাম দেয়া কিংবা কোনো বিক্রেতার পক্ষে বেশি দাম চাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বাজারে একই দাম বিরাজ করে বা দাম স্থির থাকে। 

৪. দীর্ঘকালে বাজারে প্রবেশ ও সেখান থেকে প্রস্থানের অবাধ অধিকার: এ বাজারে দীর্ঘকালীন কোনো বিক্রেতা লোকসানের সম্মুখীন হলে সে বাজার ছেড়ে যেতে পারে। আবার বিদ্যমান বিক্রেতারা অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে থাকলে বাইরের কোনো বিক্রেতা সেখানে অবাধে আসতে বা প্রবেশ করতে পারে।

৫. উপকরণগুলোর পূর্ণ গতিশীলতা: এ বাজারে উৎপাদনের উপকরণগুলো বিভিন্ন ব্যবহার ও স্থানের মধ্যে পূর্ণ গতিশীলতা থাকে। ফলে সর্বত্র উপকরণগুলোর একই বা স্থির দাম বিদ্যমান। 

৬. পরিবহন ব্যয় বিবেচনা বহির্ভূত: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যে পণ্য লেনদেন করা হয়, তার জন্য কোনো পরিবহন ব্যয় বিবেচনা করা হয় না। যদি পরিবহন ব্যয় বিবেচনা করা হতো, তবে সমজাতীয় দ্রব্য হলেও স্থানভেদে পণ্যের দাম বিভিন্ন হতে পারত। কাজেই দামের বিভিন্নতার সম্ভাবনা এড়ানোর জন্য পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পরিবহন ব্যয় বিবেচনার বাইরে রাখা হয়। 

৭. বাহ্যিক বিধিনিষেধ অনুপস্থিত: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো বাহ্যিক বিধিনিষেধ যেমন- কর, ভর্তুকি বা রেশনিং ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকবে না।

৮. ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে। বিক্রেতাদের মধ্যে কোনো জোটবদ্ধতা থাকে না। ফার্ম মুনাফা সর্বোচ্চকরণের লক্ষ্যকে সম্মুখে রেখে উৎপাদন ও উপকরণ নিয়োগ সম্পর্কে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ক্রেতা স্বেচ্ছাধীনে ক্রয় পরিচালনা করে, অপর কারো দ্বারা সে প্ররোচিত হয় না। 

৯. উৎপাদন ও বিক্রয়: প্রতিটি ফার্ম দ্রব্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে উৎপাদন ও বিক্রয় করতে পারে।

 ১০. মুনাফা লাভ: মুনাফা লাভের জন্য ফার্ম ব্যয় সর্বনিম্ন করে। 

১১. ভারসাম্যের শর্ত: ফার্মের ক্ষেত্রে, প্রান্তিক আয় (MR) = প্রান্তিক ব্যয় (MC)। কিন্তু শিল্প বা বাজারের ক্ষেত্রে চাহিদা (D) = যোগান (S)।

এসব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাস্তবে বিশুদ্ধ পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার পৃথিবীর কোথাও নেই। তবে গ্রামীণ কৃষিপণ্যের বাজার হলো এ বাজারের উদাহরণ।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 27 October, 2023

    Thanks 👍

Add Comment
comment url