কর কি এবং কর দেওয়ার নিয়ম

অর্থনীতির জনক এডাম স্মীথ সর্বপ্রথম তার বিখ্যাত গ্রন্থ “The wealth of Nations”-এ করের কাননের কথা উল্লেখ করেন। একটি উত্তম কর ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট কি হওয়া উচিত তার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি করের কাননের কথা বলেছেন। তিনি করের চারটি নিয়মের কথা বলেছিলেন।

১. সমতার কানন/নিয়ম 
২. নিশ্চয়তার কানন/নিয়ম
৩. সবিধার কানন/নিয়ম
৪. মিতব্যয়ীতার কানন/নিয়ম

কর ধার্য বা আদায় করার জন্য সরকার কতগুলো নিয়ম কানন মেনে চলে। এই নিয়মগুলোই করের কানন। উপরের চারটি ব্যতীত আধনিক অর্থনীতিবিদগণ আরও কয়েকটি কাননের উল্লেখ করেছেন-

৫. উৎপাদন শীলতার কানন
৬. স্থিতিস্থাপকতার কানন
৭. সরলতার কানন
৮. বিভিন্নতার কানন

কর দেওয়ার নিয়ম


নিচে করের কাননসমহের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো- 

১. সমতার কানন: সমতা বলতে এখানে সকল নাগরিকের সমান কর প্রদান বঝায় না, নাগরিকগণ তাদের সামর্থ্য অনযায়ী বেশী কর প্রদান করবে আর গরীবরা কম প্রদান করবে। এটি সামাজিক সাম্যতা আনার একটি মৌলিক বিষয়।

২. নিশ্চয়তার কানন: নিশ্চয়তার কানন বলতে বঝায় যে, একজন করদাতা তার কর প্রদান সম্পর্কে অর্থাৎ করের পরিমান, প্রদানের সময় ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত থাকে। যদি নিশ্চয়তার কানন না থাকে তবে কর আইন প্রণয়ন করা কঠিন হবে এবং কর ফাসি প্রবণতা বদ্ধি পাবে।

৩. সুবিধার কানন: সুবিধার কানন হলো করদাতা সহজেই তার কর প্রদান করতে পারে। কর প্রদানে কোন অফিসিয়াল জটিলতা থাকে না। কর দাতা তার সুবিধা অনযায়ী করের টাকা প্রদান করে। যেমন-চাষীর নিকট থেকে ফসল উঠার পর এবং ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বছর শেষে কর আদায় করার উচিত।

৪. মিতব্যয়ীতার কানন: কর সংগ্রহ করার খরচ কম হওয়া উচিত। এটিই মিতব্যয়ীতার কানন। করের টাকা দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য খরচ করা হয়। যদি এই অর্থ আদায়ের খরচ বেশী হয় তবে প্রত্যাশিত রাজস্ব কম হবে এবং অর্থনৈতিক কল্যাণ প্রত্যাশিত হবে না।

৫. স্থিতিস্থাপকতার কানন: করের ভিত্তির উপর নির্ভর করে কর হার বাড়ানো বা কমানো হলো স্থিতিস্থাপতার কানন। অর্থাৎ দেশের রাজস্ব চাহিদা অনযায়ী করের হার হ্রাস-বদ্ধি করে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। যেমন-আয় কর একটি প্রত্যক্ষ কর। এটি স্থিতিস্থাপকতার কানন মেনে চলে।

৬. সরলতার কানন: কর ব্যবস্থা যতটা সম্ভব সহজ হওয়া উচিত। করের টাকার পরিমান, প্রদানের সময়, প্রদানের পদ্ধতি সবকিছ করদাতার কাছে সহজ ও সরল হওয়া উচিত। কোন প্রকার জটিলতা থাকা উচিত নয়। যদি কর প্রদান ব্যবস্থা সহজ হয় তবে কর আদায়ে দর্নীতি এবং কর ফাকি হ্রাস পাবে।

৭. বিভিন্নতার কানন: কর আদায় করার ক্ষেত্রে কোন একক উৎস থাকা উচিত নয়। বিভিন্ন উৎস থেকে কর আদায় করা উচিত। অন্যথায় অর্থনীতি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবদ্ধিও কম হবে। বিভিন্নতার কানন অনযায়ী সরকার বিভিন্ন উৎস হতে বিভিন্ন কর হারের মাধ্যমে রাজস্ব বদ্ধি করতে পারে।

সুতরাং একটি দেশের কর ব্যবস্থায় করের সকল কানন অবলম্বন করে কর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হলে  ঐ দেশের অর্থনীতি কাংখিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url