একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার|Monopolistic Competition Market
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে? What is Monopolistic Competition?
আমেরিকান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এডওয়ার্ড হেস্টিংস চেম্বারলিন (Prof. E. H. Chamberlin) একচেটিয়া প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত ধারণা প্রদান করেন। পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবার - এ দুটি বিশ্লেষণ বাজার কাঠামোর দুটি মেরুতে অবস্থিত। এদের মাঝামাঝি বিশ্লেষণ হলো একচেটিয়া প্রতিযোগিতা। অধ্যাপক চেম্বারলিন পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রয়াস পান। একচেটিয়া প্রতিযোগিতা ধারণার মধ্যে সেই সমন্বয় প্রয়াস নিহিত। একচেটিয়া প্রতিযোগিতা এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবারের সংমিশ্রণ ঘটে।
সুতরাং একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতা বলতে এমন একটি বাজার কাঠামো বোঝায়, যার বৈশিষ্ট্য হিসেবে থাকে – যথেষ্ট ছোট ছোট ফার্মের সংখ্যা, তারা সদৃশ্য কিন্তু সামান্য বিভেদীকৃত দ্রব্য উৎপাদন করে, তাদের বাজারে প্রবেশ ও প্রস্থানের। স্বাধীনতা থাকে এবং বাজার সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার জ্ঞান থাকে অপূর্ণাঙ্গ।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতার প্রবক্তা আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ই. এইচ. চেম্বারলিন। পরবর্তীতে তার সাথে যুক্ত হন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জোয়ান রবিনসন। চেম্বারলিন দ্রব্য পৃথকীকরণ ও বিজ্ঞাপনের ওপর এবং রবিনসন দাম বৈষম্যকরণ ও শোষণ এর ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলতে এমন বাজার কাঠামোকে বোঝায়, যেখানে বহুসংখ্যক বিক্রেতা বাজারে অবাধে প্রবেশ ও প্রস্থানের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত থাকে এবং প্রত্যেক বিক্রেতা দ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে (রঙ, গদ্য, ট্রেডমার্ক, ব্রান্ড ও লেবেল, মোড়ক, পরিবেশনার উপায়) কিছুসংখ্যক ক্রেতার ওপর কিছুটা একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে। চেম্বারলিন পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন।
সুতরাং, যে বাজারে একচেটিয়া বাজারের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং বহুলাংশে পূর্ণ প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে, সে বাজারকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।
ই. এইচ. চেম্বারলিন এর মতে,
যে বাজারে, বহুসংখ্যক বিক্রেতা একই জাতীয় কিন্তু পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রি করে তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।
এ বাজারে ফার্মের সংখ্যা দশ - এর চেয়ে অধিক হয়। এরূপ বাজারে বিক্রেতা বিভিন্ন ট্রেডমার্ক এবং ব্রাভের মাধ্যমে দ্রব্য পৃথকীকরণের চেষ্টা করে। যেমন বিভিন্ন রকম পেস্ট, সাবান, বিভিন্ন কোম্পানির শাড়ি - কাপড়, ব্রেড ইত্যাদি।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্য|Characteristics of Monopolistic Competition Market
১. বহুসংখ্যক ছোট ফার্ম মোট উৎপাদনের সামান্য পরিমাণ বাজারে পণ্যসেবার যোগান দেয়।
২. প্রত্যেক বিক্রেতা নানাভাবে যেমন— ট্রেডমার্ক, ব্রান্ড, লেবেল, মোড়ক, বিজ্ঞাপন, আকৃতি, রঙ ইত্যাদির মাধ্যমে দ্রব্য পৃথকীকরণ করে থাকে।
৩. নতুন ফার্মের বাজারে প্রবেশের কোনো বাধা নেই আবার পুরাতন ফার্মের প্রস্থানেও কোনো বাধা নেই।
৪. উৎপাদিত পণ্যগুলো প্রয়োজন ও ব্যবহারের দিক থেকে একই ধরনের হলেও একটি পণ্য অন্যটির নিকট বিকল্প প্রকৃতির হয়।
৫. বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দাম হ্রাস করতে হয়। ফলে গড় আয় বা চাহিদা রেখা বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়। এ বাজারে চাহিদা রেখার ঢাল; একচেটিয়া বাজারের চাহিদা রেখার ঢাল অপেক্ষা কম হয়।
৬. বিক্রেতা পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রি করে এবং সে কম - বেশি স্বাধীন দাম নীতি অনুসরণ করতে পারে।
৭. ক্রেতারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্রব্যের প্রকৃতি, গুণাগুণ ও দাম সম্পর্কে আগাম ধারণা পেয়ে থাকে।
৮. পণ্যভেদ থাকায় বিক্রয় খরচ অপরিহার্য। প্রত্যেক বিক্রেতা বাজার দখল ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিজ্ঞাপনের ব্যয় ও বিক্রয় খরচ বহন করে।
৯. বাজারে দলীয় বা গ্রুপ ভারসাম্য কার্যকর হয়।
১০. আদর্শ উৎপাদন (Ideal Output) সংক্রান্ত ধারণা এবং তার সাথে জড়িত অতিরিক্ত সামর্থ্যের (the excess capacity) ধারণা উভয়ই দীর্ঘকালের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি ফার্মের আদর্শ উৎপাদন বলতে সেই অবস্থাকে নির্দেশ করা হয় যে উৎপাদনক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন গড় ব্যয় ন্যূনতম।
১১. একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় সদৃশ্য অথচ পৃথকীকৃত দ্রব্যের অন্তর্নিহিত বিষয় সম্পর্কে ক্রেতা সম্পূর্ণ অবহিত নয়। আবার বিক্রেতা বা ফার্ম অপরাপর ফার্মের আচরণ বা গতিবিধি সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত নয়।
১২. স্বল্পকালে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জিত হলেও দীর্ঘকালে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে।