উৎপাদন অপেক্ষকের সংজ্ঞা প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

উৎপাদন অপেক্ষক কাকে বলে? What is Production Function


Function শব্দটির অর্থ কাজ। তবে গণিতশাস্ত্রে এর অর্থ অপেক্ষক। দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক দেখানোর কৌশলকে ফাংশন বা অপেক্ষক বলে। যেমন, Y চলক X চলকের ওপর নির্ভরশীল হলে, Y = f (X)। আবার X ও Y চলকদ্বয়ের ওপর যদি Z = f (X, Y)।

অর্থাৎ চলকের ব্যবহার অনুযায়ী অপেক্ষকের পরিধিও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন যদি L, K, P, R, S, T চলকগুলোর ওপর Q চলক নির্ভরশীল হয় তবে Q = f (L, K , P, R, S, T) হবে। উৎপাদনের উপাদানগুলোর পরিমাণের ওপর উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ নির্ভর করে। 
উৎপাদন অপেক্ষক
উপাদানগুলোর পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিলে, কারিগরি কৌশল অনুযায়ী উৎপন্ন দ্রব্যের সর্বাধিক পরিমাণ কত হবে তা নির্দিষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদনের উপকরণ হলো ভূমি, শ্রম, মূলধন, সংগঠন। সাধারণভাবে উৎপাদনের উপাদানের সাথে উৎপাদনের সম্পর্ককে উৎপাদন অপেক্ষক বলে। 

অধ্যাপক পল. এ. স্যামুয়েলসন বলেন,
উৎপাদন অপেক্ষক হলো এমন একটি কৌশলগত সম্পর্ক যা উৎপাদনের প্রত্যেক উপকরণ এবং একগুচ্ছ নির্দিষ্ট উপকরণসমূহ কী পরিমাণ উৎপাদন করতে সক্ষম তা প্রকাশ করে। বিশেষভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনের উপাদানের সাথে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট কারিগরি বা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ভিত্তিতে উৎপন্ন দ্রব্যের সম্পর্ককে উৎপাদন অপেক্ষক (Production Function) বলে।
উৎপাদন অপেক্ষক হলো Q = f (Land, Labour, Capital, Organization) 

সরল বিশ্লেষণের জন্য দুটি উপাদান L (শ্রম) ও K (মূলধন) বিবেচনা করা হয়। ধরি, দুটি উপাদান শ্রম (L), মূলধন (K) এবং উৎপন্ন দ্রব্য (Q) তাহলে, উৎপাদন অপেক্ষক Q = f (L, K) 

উৎপাদন অপেক্ষকের প্রকারভেদ | Types of Production Function


ক.  সময়ভিত্তিক: সময়ের ভিত্তিতে উৎপাদন অপেক্ষক দুই প্রকার। যথা-

১. স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক এবং
২. দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক। 

১. স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক: স্বল্পকালে উৎপাদনের উপকরণের সাথে উৎপাদনের পরিমাণের যে প্রযুক্তিগত সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে তাকে স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক বলে । স্বল্পকালে উৎপাদনক্ষেত্রে স্থির ও পরিবর্তনীয় উভয় উপকরণ বিদ্যমান থাকে । যেমন- Q = f (L, K) = 4L + 3 একটি স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক । এখানে L = শ্রম, K = মূলধন, K = 3 এবং L কে পরিবর্তনশীল ধরা হয়েছে। উৎপাদন Q এর মান শ্রম L এর মানের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তন ঘটে। 

২. দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক: দীর্ঘকালে উৎপাদনের উপকরণের সাথে উৎপাদনের পরিমাণের যে প্রযুক্তিগত সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে, তাকে দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক বলে। দীর্ঘকালে উৎপাদনের কোনো উপকরণই স্থির নয়, সব উপকরণই পরিবর্তনীয় । যেমন Q = f (L , K); এখানে L = শ্রম, K = মূলধন উভয় উপকরণই পরিবর্তনশীল। ফলে, অপেক্ষকটি একটি দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক।

খ. সমভিত্তিক: সমজাতীয়তার ভিত্তিতে উৎপাদন অপেক্ষক দুই প্রকার। যথা—
১. সমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক এবং
২. অসমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক। 

১. সমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক: যে উৎপাদন অপেক্ষক স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বিধি মেনে চলে অর্থাৎ উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনও যদি সেই নির্দিষ্ট অনুপাতে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে সমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক বলে।

২. অসমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক: যে উৎপাদন অপেক্ষক স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বিধি মেনে চলে না অর্থাৎ উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বৃদ্ধি করলে উৎপাদন সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায় না তাকে অসমজাতীয় উৎপাদন অপেক্ষক বলে।

গ. খাতভিত্তিক: খাতভিত্তিক উৎপাদন অপেক্ষক দুই প্রকার। যেমন— 

১. কৃষিখাতে উৎপাদন অপেক্ষক,
২. শিল্পখাতে উৎপাদন অপেক্ষক।

উৎপাদন অপেক্ষকের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Production Function


উৎপাদন অপেক্ষক শুধুমাত্র শ্রম ও মূলধন উপকরণের ওপরই নির্ভর করে না; বরং মাত্রাগত উৎপাদন, উপকরণসমূহের দক্ষতা, কৃতকৌশলের পরিবর্তন, সময়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি দ্বারাও প্রভাবিত হয়। সবদিক বিবেচনা করে উৎপাদন অপেক্ষকের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ করা যায়: 

ক. উৎপাদন অপেক্ষক একটি বস্তুগত ধারণা এবং কারিগরি ধারণার সাথে সংশ্লিষ্ট 

খ. উৎপাদন অপেক্ষক বস্তুগত দ্রব্যের পরিবর্তনের প্রবাহ ধারণা। উৎপাদন ধারায় এক বস্তু অপর বস্তুতে পরিবর্তন হয় এবং এ ধারা অব্যাহত থাকে। 

গ. উৎপাদন সুবিধার জন্য অনেক সময় উৎপাদন অপেক্ষকে ব্যবহৃত উপকরণ স্থির ও পরিবর্তনশীল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

ঘ. উৎপাদনের পরিবর্তনের ধারায় কম - বেশি প্রকৌশলগত আচরণ অব্যাহত থাকে।

ঙ. উৎপাদনের উপকরণ প্রকৃতি প্রদত্ত ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট হতে পারে। উপকরণ আবার মাধ্যমিক পণ্য বা উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। 

চ. উৎপাদনক্ষেত্রে অপেক্ষক বলতে উপকরণের পরিমাণগত রূপান্তর বোঝায়। যেমন— লোহা পরিবর্তিত হয়ে লৌহজাত দ্রব্য সৃষ্টি হয়। আবার সেবা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— রাস্তা, ব্রিজ, ট্রেন, ইত্যাদি।

ছ. উৎপাদন অপেক্ষক দ্বারা উৎপাদন কৌশলটি শ্রমনিবিড় না মূলধননিবিড় তা বোঝা যায়। 

জ. এটি উপাদানের পরিবর্তনের ফলে মাত্রাগত উৎপাদন বিধি নির্দেশ করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url