বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি এনজিও প্রতিষ্ঠান

ব্র্যাক: ব্র্যাক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা। সংস্থাটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ঋণদান কর্মসূচি ছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে সামাজিকভাবে বঞ্চিত ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ যেমন- অতি দরিদ্র চরবাসী, দুঃস্থ নারী, অবসরপ্রাপ্ত ও ছাঁটাইকৃত সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্রঋণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সংস্থাটির মোট বিতরণকৃত ও আদায়কৃত ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ২০৫২৮১.৯৪ কোটি ও ১৮,৪৪৮৪.১৬ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ঋণের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭১১৪৭২৬ জন এবং এর মধ্যে মহিলা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬১৬৫১১৯ জন, যা মোট উপকারভোগীর ৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি এনজিও প্রতিষ্ঠান

ব্র্যাকের কার্যক্রম|BRAC activities


বাংলাদেশে মূলত স্যার ফজলে হাসান আবেদ এর নির্দেশনা ও পরিচালনায় ব্র্যাকের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছে । আর যেসব দেশ বা উৎস থেকে ব্র্যাক তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ পেয়ে থাকে সেই সব দেশ বা উৎস হচ্ছে- ইউনিসেফ, সিডা (কানাডিয়ান ইন্টা. ডেভলপমেন্ট এজেন্সি), নোডিক, ফাও, হু, অক্সফাম, ইইউ ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই ব্র্যাকের কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে। ব্র্যাকের কার্যক্রম গুলোকে চারভাগে ভাগ করা যায়। যা নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি: গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচিতে কিছু সংখ্যক কেন্দ্রের সুগঠিত দলের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা দল উভয়ই রয়েছে। গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া অন্যান্য সংস্থাগুলোর মতোই হয়ে থাকে। আর এই গ্রুপের মাধ্যমেই তাদের ঋণ দেওয়া হয়। গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক প্রকল্প হচ্ছে আড়ং। গ্রামীণ মহিলাদের তৈরি কাপড় কিনে আড়ং - এর মাধ্যমে শহরে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২. শিক্ষা কর্মসূচি: ব্র্যাকের শিক্ষা পদ্ধতি উদ্ভাবনীমূলক ও কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। এ কার্যক্রম দেশব্যাপী অল্প সময়ে শিক্ষা বিস্তার লাভে সাহায্য করেছে। শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ব্র্যাক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেসব বিদ্যালয়ে কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে থাকে। সম্প্রতি ঢাকায় ব্র্যাকের পরিচালনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৩. স্বাস্থ্য কর্মসূচি: ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির অধীনে খাবার স্যালাইন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

৪. সহায়ক সেবা কার্যক্রম: ব্র্যাকের সহায়ক সেবা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরি, কম্পিউটার সেন্টার, ব্র্যাক প্রকাশনী, হিমাগার ও বরফকল স্থাপন। এছাড়াও গ্রামের প্রান্তিক চাষিদের সহায়তাদানের জন্য একটি পাস্তুরিত দুধের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

আশা


আর্থ - সামাজিক উন্নয়নে ১৯৭৮ সালে আশা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ১৯৯২ সালে স্পেশালাইজড ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে এ NGO কার্যক্রম শুরু করে। এটি বর্তমানে সর্ববৃহৎ আত্মনির্ভর দ্রুত বিকাশমান ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা হিসাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর ইনোভেটিভ স্বল্প ব্যয় ও টেকসই ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১৭ সালে ৭৮,৩৯,১১৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে প্রায় ২৯.৮৩১.৪২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের শুরু থেকে অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভত ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৮০৭.৭৫ কোটি টাকা এবং আদায় ১,৭০,১৬৬.৩১ কোটি টাকা।

প্রশিকা


১৯৭৫ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে প্রশিকার কার্যক্রম সূচিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ সালে। সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ শুরু করে। বর্তমানে প্রশিকা দেশের ৫৯ টি জেলার ২৪,২১৩ টি গ্রাম ও ২,১১০ টি বস্তিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন খাতে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ৬,১৯০.৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং একই সময় ঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন ২৭,৭৬,৩৪৪ জন দরিদ্র মানুষ।

শক্তি ফাউন্ডেশন


১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত শক্তি ফাউন্ডেশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, স্বগুড়া, রাজশাহীসহ অন্যান্য বড় বড় শহরের বস্তির দুস্থ মহিলাদের ঋণ প্রদান করে। এছাড়া এসব মহিলাদের স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও সামাজিক উন্নয়নেও সংস্থাটি কাজ করে থাকে। বর্তমানে সংস্থাটি ৫৩ জেলায় ৪৫,১৮৪৮ জন সদস্যের মধ্যে সেবা প্রদান করছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সংস্থার বিতরণকৃত মোট ক্ষুদ্রঋণের পরিমাণ ৮,২৫০.৮৪ কোটি টাকা ও আদায়ের পরিমাণ ৭৫১১.৪০ কোটি টাকা।

ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)


টিএমএসএস জাতীয় পর্যায়ের সমাজ সেবামূলক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা দারিদ্র্য দূরীকরণ, আর্থ - সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ৫৭ টি জেলার ৩৪৬ টি উপজেলায় এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি লাভ করেছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ৬৩,৭৮,১৫০ জন উপকারভোগীর মাঝে টিএমএসএস মোট ২৪,৯৪৪.৩৪ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে। উপকারভোগীর প্রায় ৯৬ শতাংশই মহিলা।

সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিস (এসএসএস)


সমাজের দরিদ্র, অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত নারী - পুরুষ ও শিশুদের দারিদ্র্য বিমোচন, অধিকার আদায় ও তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ সমন্বিত সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিস (এসএসএস) আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে দেশের ৩১ টি জেলায় এবং ১৮৬ টি উপজেলা এসএসএস - এর কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের অধীনে ১৩ টি জোন, ৫৯ টি এরিয়া, ৩৫৩ টি শাখা ও ৭ টি প্রকল্প অফিসের মাধ্যমে ৬,০০,৯০৬ জন সদস্যকে প্রত্যক্ষভাবে সেবা প্রদান করছে। উপকারভোগী ৯৮ শতাংশই মহিলা। অবশিষ্ট ২ শতাংশ পুরুষ ও শিশু। ডিসেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৫৯৩৮.৬৭ কোটি টাকা।

Q. SSS NGO কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে SSS প্রতিষ্ঠিত হয়।

Q. SSS NGO full form কি?
উত্তর: সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিস সংক্ষেপে (এসএসএস) 

কারিতাস


দেশের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের উন্নয়ন শিক্ষার পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে কারিতাস নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে দেশের ২৬টি জেলার ৬২টি উপজেলায় কারিতাসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ২,৫৪,৮৬৭ জন উপকারভোগীর মাঝে কারিতাস মোট ৩,৯৮৪.০৭ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url