নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Controlling

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। উক্ত পরিকল্পনার আলোকে সব কাজ সম্পাদন হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো নিয়ন্ত্রণ। আদর্শ নিয়ন্ত্রণের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে আালোচনা করা হলো-

১. লক্ষ্যকেন্দ্রিক (Goal oriented): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হয়। নিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য হলো পরিকল্পনামাফিক সবকিছুই চলছে কিনা তা দেখা। পাশাপাশি পরিকল্পিত কাজগুলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে হচ্ছে কি না, তাও পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে সংশোধন করা। যেমন: পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন। এ ধরনের লক্ষ্য থাকলে প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

২. পশ্চাৎমুখী (Backwards): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হয়। এই কাজটি আগের বা অতীতের নির্ধারিত মানের আলোকে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আগের নির্ধারিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হয়। এজন্য বলা হয় নিয়ন্ত্রণ পশ্চাৎমুখী।

৩. আদর্শমান নির্ভরতা (Dependent on standard): নিয়ন্ত্রণকাজ একটি আদর্শমান নির্ভর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ সম্পাদনে দক্ষতা, সময় ও ব্যয়ের আদর্শমান নির্ধারণ করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই আদর্শমানের অনুপস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা যায় না।

৪. কালান্তিক কাজ (Periodical work): নির্দিষ্ট সময় পর পর যে কাজ প্রতিনিয়ত করা হয়, তাকে কালান্তিক কাজ বলে। নিয়ন্ত্রণ দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক বা বার্ষিক হতে পারে। এটি প্রতিষ্ঠানের আকার, আয়তন, পণ্য বা সেবা প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে। এজন্য নিয়ন্ত্রণকে কালান্তিক কাজও বলা হয়।

৫. অবিরাম প্রক্রিয়া (Continuous process): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ হলেও এটি একটি অবিরাম বা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের বিলোপসাধন না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের কাজ চলতে থাকে। একবার কোনো কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হলে তার সাথে মিল রেখে নির্দিষ্ট সময় শেষে নিয়ন্ত্রণের কাজও করতে হয়। তাই এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

৬. ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ (Last step of management process): প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের আলোকে সর্বপ্রথম পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ সম্পাদিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নিয়ন্ত্রণের মাধমে। এজন্য বলা হয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ ধাপ।

৭. আওতা (Scope): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের সব স্তরে পরিব্যাপ্ত। ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ ও উপবিভাগে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর থাকে। এছাড়া প্রতিটি পরিকল্পনার বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত।

৮. ঊর্ধ্বতন সম্পাদিত কাজ (Upper executive work): ঊর্ধ্বর্তন বলতে যার অধীনে কোনো কাজ সম্পাদিত হয় কিংবা যার অধীনে অধস্তনরা কাজ করে তাকে বোঝায়। কোনো বিষয়ে কর্তৃত্ব যার হাতে রয়েছে সেই বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এজন্য বলা হয়, নিয়ন্ত্রণ সব সময় ঊর্ধ্বতনের কাজ।

৯. প্রতিরোধক (Preventive): একই ধরনের ভুল বারবার যেন না হয় সে বিষয়টি আদর্শ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা এমনভাবে নেওয়া হয়, যা সম্ভাব্য ত্রুটির বিপক্ষে প্রতিরোধক হিসেবে। কাজ করে। ফলে এটি ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সমস্যাও দূর করে থাকে।

১০. ভুল-ত্রুটি নির্দেশক (Deviation indicator): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিকল্পনার আলোকে সব কাজ সম্পাদন হচ্ছে কি না তা দেখা হয়। অতঃপর কাজ সম্পাদনে কোনো ভুল-ত্রুটি হচ্ছে কি না, তাও নির্ধারণ করা হয়। এজন্য নিয়ন্ত্রণকে ভুল-ত্রুটি নির্দেশক বলা যায়।

১১. সংশোধন ব্যবস্থার নির্দেশক (Indicator of corrective action): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা বা প্রকৃত কার্যফলের ত্রুটি নির্ণয় করে থাকে। অন্যদিকে কীভাবে ত্রুটি সংশোধন করতে হবে, তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়ে থাকে। তাই নিয়ন্ত্রণ হলো সংশোধন ব্যবস্থার নির্দেশক।

১২. পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি (Basis of next plan): নিয়ন্ত্রণ পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যবস্থা পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নতুনভাবে কাজে লাগানো যায়। এতে নিয়ন্ত্রণই প্রথনিদেশনা দিয়ে দেয়, পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত।

তাই বলা যায়, ব্যবস্থাপনা কার্যাবলির সর্বশেষ ধাপ হিসেবে নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। এজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকা আবশ্যক।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url